11278

04/20/2024 সিদ্দিকবাজার বা তুরস্ক কী শিক্ষা দেয়

সিদ্দিকবাজার বা তুরস্ক কী শিক্ষা দেয়

সম্পাদকীয়

১৪ মার্চ ২০২৩ ১৯:৫০

গত অর্ধশতক ধরিয়া ক্রমান্বয়ে উন্নয়নের ফলে কেবল রাজধানী ঢাকা নহে, সমগ্র দেশেই গড়িয়া উঠিয়াছে লক্ষ লক্ষ ভবন। এমনকি উপজেলা পর্যায়েও ভবন নির্মাণের হার দ্রুত বাড়িতেছে। বিশেষজ্ঞরা বলিয়াছেন, অপরিকল্পিতভাবে ঢাকা শহর গড়িয়া তোলা হইয়াছে বিধায় একেক এলাকার ঝুঁকি একেক রকমের। যেমন পুরান ঢাকার আবাসিক এলাকার মধ্যে রাসায়নিক গুদাম গড়িয়া উঠিবার পাশাপাশি পয়োবর্জ্য লাইন, বিদ্যুতের লাইন, গ্যাসের লাইন প্রভৃতি স্থাপনে বিশৃঙ্খলা রহিয়াছে।

ফায়ার সার্ভিসের তথ্য বলিতেছে, বর্তমানে অগ্নিনিরাপত্তায় অতিঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা ঢাকার চাইতে চট্টগ্রামে অধিক। তাহাদের মতে, ২০১৬ সাল হইতে প্রতি বৎসরই নিয়ম করিয়া ঢাকার বহুতল ভবনসমূহ পরিদর্শন করিয়া আসিতেছে ফায়ার সার্ভিস। যেই সকল বহুতল ভবনে নিরাপত্তা ত্রুটি ছিল, সেইগুলি শনাক্ত করিয়া দ্রুত ব্যবস্থা লইতে বলা হইয়াছিল।

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনসমূহ ছয় মাস অন্তর পরিদর্শন করা হইয়াছে; কিন্তু গত বৎসরই প্রথম বারের মতো সমগ্র দেশের বহুতল ভবন পরিদর্শনের উদ্যোগ লওয়া হয়। বিশেষজ্ঞরা দাবি করিয়াছেন, বাণিজ্য নগরীতে হাজারো ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রহিয়াছে। এমনকি সেইখানে ১৫০ বৎসরের পুরাতন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনও রহিয়াছে, যেইখানে এখনো মানুষ বসবাস করিতেছে।

অন্যদিকে ঢাকায় রাজউকের আওতাভুক্ত এলাকায় বর্তমানে ভবনের সংখ্যা ১০ লক্ষের অধিক। ইতিপূর্বে অপর জরিপে ঢাকায় ৭২ হাজার ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ বলিয়া চিহ্নিত করা হইয়াছিল। বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজধানীতে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা আরো অধিক। কারণ, বেশ কয়েকটি নিরাপত্তা নির্দেশিকার ভিত্তিতে বহুতল ভবনসমূহকে ঝুঁকিপূর্ণ ও অতিঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে শনাক্ত করা হয়।

ইহার মধ্যে জরুরি নির্গমন সিঁড়ি, ফায়ার লিফট, আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়াটার রিজার্ভ ব্যবস্থা, রাইজার ও হাইড্র্যান্টের মতো জরুরি সরঞ্জামাদির ব্যবস্থা বিবেচনায় লওয়া হয়। পাশাপাশি বহুতল ভবনের সুরক্ষাব্যবস্থা হিসাবে প্রত্যেক ফ্লোরে সেফটি লবি থাকিবার কথা রহিয়াছে।

এমনকি ছাদে বজ্রনিরোধক ব্যবস্থা না থাকিলেও সেই বহুতল ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ বলিয়া গণ্য করা হয়। ইতিপূর্বে ফায়ার সার্ভিসের করা জরিপের একটি তথ্য বলিতেছে, রাজশাহীর ১ হাজার ২৫৩টি বহুতল ভবন পরিদর্শন করিয়া সাতটি ভবনকে অতিঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে শনাক্ত করা হইয়াছে। ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে শনাক্ত করা হইয়াছে ৭৯টি ভবন।

বহুতল ভবন পরিদর্শন করিয়া বরিশালের ৪৩টির মধ্যে একটি অতিঝুঁকিপূর্ণ এবং ২৩টি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ, সিলেটে ২১৪টির মধ্যে ১৫টি ঝুঁকিপূর্ণ, ময়মনসিংহে ১৬৮টির মধ্যে ১৬টি ঝুঁকিপূর্ণ এবং রংপুরের ৬৬৩টির মধ্যে ১৯টি অতিঝুঁকিপূর্ণ ও ১৬৬টি ঝুঁকিপূর্ণ বহুতল ভবন হিসাবে চিহ্নিত করা হইয়াছে। তবে লক্ষ লক্ষ ভবনের মধ্যে অল্প কিছু ভবন পরিদর্শন করিয়া ঝুঁকিপূর্ণ ও অতিঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে যেই পরিমাণ ভবনকে শনাক্ত করা হইয়াছে উহা আসলে হিমশৈলের চূড়া মাত্র।

রাজধানী ঢাকার সিদ্দিকবাজারে গত ৭ মার্চ একটি ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনার পর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ কিছুটা নড়িয়াচড়িয়া বসিয়াছে। ইহাই সাধারণত হয়। দুর্ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল বিভাগের টনক নড়ে। ইহা লইয়া বিভিন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। অবশ্য তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনেক সময় ঠিকমতো আলোর মুখ দেখে না, কিংবা দেখিলেও সেই অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের নজির খুব অধিক থাকে না।

মাত্রই কিছুদিন পূর্বে তুরস্ক ও সিরিয়ার ভূমিকম্প আমাদের দেখাইয়া দিয়াছে পূর্বপ্রস্তুতি না থাকিলে কীভাবে অভাবনীয় দুর্যোগের মুখোমুখি হইতে হয়। তুরস্কের এই ঘটনাকে শিক্ষণীয় হিসাবে লইয়া ভবিষ্যতের জন্য আমাদের পরিকল্পনা, কার্যক্রম সাজাইতে হইবে। যাহা ইতিপূর্বে করা হয় নাই, তাহা এখন করিতে হইবে।

ঝুঁকিপূর্ণ ও অতিঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে শনাক্ত করা ভবনের ত্রুটিসমূহ দ্রুততম সময়ের মধ্যে সমাধান করা কর্তব্য। কালক্ষেপণে বড় দুর্ঘটনা ঘটিলে তাহার দায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তো রহিয়াছেই এবং তাহার চাইতেও বড় কথা—প্রাণহানি ঘটিলে উহা হইবে অবহেলাজনিত প্রাণহানি। মনে রাখিতে হইবে, সময়ের এক ফোঁড় অসময়ের দশ ফোঁড়।

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]