32372

05/29/2025 রহস্য উদঘাটন ‘রহস্য’ই রইল, ডিএমপি কমিশনার বললেন ‘মামলা ডিটেক্ট’

রহস্য উদঘাটন ‘রহস্য’ই রইল, ডিএমপি কমিশনার বললেন ‘মামলা ডিটেক্ট’

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৭ মে ২০২৫ ২১:৪৪

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে এমন দাবি করে ঘটা করে সংবাদ সম্মেলন ডাকে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। তবে সংবাদ সম্মেলনে ঘটনার সুনির্দিষ্ট ‘মোটিভ’ জানাতে পারেননি ডিএমপি কমিশনার।

মঙ্গলবার (২৭ মে) বিকেল ৫টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে সাম্য হত্যার ঘটনা ও তদন্ত নিয়ে একটি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। যেখানে উল্লেখ ছিল না ঘটনার মোটিভ কী? কী কারণে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার উপস্থিত ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলামকে বিস্তারিত বলার অনুরোধ করেন। নাসিরুল ইসলাম প্রাথমিক তদন্তে এটিকে ‘তাৎক্ষণিকভাবে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করেন এবং বলেন নেপথ্যের কারণ জানার ‘চেষ্টা করবেন’।

পুলিশের পক্ষ থেকে রহস্য উদঘাটনের যে দাবি করা হয়েছে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘মামলা তো ডিটেক্ট হয়েছে।’

লিখিত বক্তব্যে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সাম্য হত্যায় মোট ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে ডিবি পুলিশের হাতে ৮ জন, থানা পুলিশ কর্তৃক ৩ জন গ্রেপ্তার হয়েছে।

ডিবির হাতে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন— রাব্বি ওরফে ‘কবুতর’ রাব্বি, মেহেদী হাসান, নাহিদ হাসান পাপেল, সোহাগ, হৃদয় ইসলাম, রবিন, সুজন সরকার, রিপন। এই আটজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য দিয়ে ঘটনাটি ‘গুরুত্বের’ সঙ্গে নিয়ে পুলিশের নানা তৎপরতার কথা তুলে ধরেন তিনি।

তিনি বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে নাহিদ হাসান ঘটনার দায় স্বীকার করে মঙ্গলবার ঢাকার আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। আর রাব্বি ও মেহেদীর পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আগেরদিন সোমবার সোহাগ, হৃদয় ইসলাম ও রবিনকে আদালতে হাজির করলে রিমান্ডে পায় ডিবি। সেদিন রিপন আদালতে দোষ ‘স্বীকার করে’ জবানবন্দি দিয়েছেন এবং সুজন সরকারকে কারাগারে পাঠায় আদালত।

গত ১৩ মে রাত ১১টার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছুরিকাঘাতে আহত হন শাহরিয়ার আলম সাম্য। রাত ১২টার দিকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

সাম্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি এ এফ রহমান হল ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন। তার বাড়ি সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায়।

ঘটনার পর নিহতের বড় ভাই শরীফুল ইসলাম শাহবাগ থানায় ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

ডিএমপি কমিশনারের লিখিত বক্তব্যের পর সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম।

হত্যার মোটিভ সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মাদক ব্যবসার একটি চক্রের ‘নেতা’ মেহেদীর গ্রুপকে দায় দিয়ে তিনি বলেন, মেহেদী গ্রেপ্তার আছে এবং তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত সুইচগিয়ার উদ্যানের মাজার এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ঘটনার দিন একটি মোটরসাইকেলে করে সাম্য ও তার দুই বন্ধু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যায়। মেহেদীর গ্রুপের একজন রাব্বী, যার হাতে একটা ট্রেজার গান (যেটিতে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয়) ছিল। ট্রেজার গানটা শো করলে সাম্য জানতে চায় সেটা কী। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। ওই মাদক ব্যবসায়ীর অন্যান্য যারা সহযোগী আছে তারা ঘটনাস্থলে আসে এবং তাদের ভেতরে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। ‘এখন পর্যন্ত’ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সাম্যকে ছুরিকাঘাত করেন ওই গ্রুপের রাব্বী নামে একজন।

সাম্যদের সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ীদের সম্পর্কের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা আপাতত যতটুকু পেয়েছি তাতে সাম্য এবং তার দুই সহপাঠী খাবারের জন্য যায়। খাবারের জন্য গেলে এটা তাৎক্ষণিকভাবে ঘটে যাওয়া একটা ঘটনা। যখন ট্রেজার গানটা শো করে, জিনিসটা কি দেখার জন্য এবং তার কাছ থেকে এটা নেওয়ার জন্য যখন তাকে চ্যালেঞ্জ করে তখন তাৎক্ষণিকভাবে তারা এ ঘটনাটা ঘটায়।

তদন্ত কার্যক্রম এখনও চলমান আছে জানিয়ে ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে ঘটে যাওয়া একটা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে হত্যাকাণ্ড, আপাতত আমাদের তদন্ত এ পর্যন্ত আছে। এর নেপথ্যে আরও কোনো ঘটনা আছে কি না, অন্য কোনো বিষয় আছে কি না, সেটা নিবিড়ভাবে দেখা হচ্ছে।

ঘটনার ‘মূল আসামি’ মেহেদী রিমান্ডে আছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, রিমান্ডে আসার পর মূল মোটিভটা কী ছিল তার কাছ থেকে আমরা বের করার চেষ্টা করব। আর এর পাশাপাশি নেপথ্যে অন্য কোনো ঘটনা আছে কি না সেটার বিষয়ে আমাদের নিবিড় তদন্ত চলছে। আমরা বিভিন্নভাবে বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলে, যেখানে যে ধরনের কানেকশন আছে, সমস্ত কানেকশনগুলো আমরা খুঁজে দেখব- ফাইনালি নেপথ্যে অন্য কোনো কারণ আছে কি না।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মাদক কারবার প্রসঙ্গে করা এক প্রশ্নের জবাবে ডিবি কর্মকর্তা নাসিরুল ইসলাম সেখানে তিনটি গ্রুপের কথা জানিয়ে বলেন, আমরা তদন্ত করতে গিয়ে যেটা দেখেছি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ওদের কথিত ভাষায় যেটা গ্রিপ বলে, তিনটা ভাগে ভাগ করা। একটা গ্রিপ হলো তিন নেতার মাজারের এখানে, আরেকটা মাঝখানে আরেকটা ছবির হাটে। তিনটা গ্রিপের তিনটা গ্রুপ সেখানে দায়িত্বরত আছে। তারা মাদক ব্যবসা করে এটা আমাদের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে।

একটা গ্রিপের দায়িত্বে আছে মেহেদী। গ্রেপ্তার আটজনই তার গ্রুপের। আরও দুই গ্রুপ তারা তাদের কার্যক্রম করে আমরা জানি। ওই গ্রুপগুলোর নাম ‘তদন্তের স্বার্থে’ না বললেও তাদের আইনের আওতায় এনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে ‘মাদকমুক্ত’ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।

এ সময় ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী বলেন, বিশ্বব্যাপী যেখানে মাদক ব্যবসা হয় বা মাদকের ইউজার আছে, সেখানে অস্ত্র থাকে। আপনি আমেরিকার কথা বলেন, কলম্বিয়ার কথা বলেন, সারা পৃথিবীতে মাদকের ব্যবসা আছে। মাদকসেবীও আছে, মাদক ব্যবসায়ীও আছে। যেখানে মাদক ওইখানে অস্ত্র আছে।

ঢাকা শহরে সম্প্রতি কয়েকটি খুন ও ছিনতাইয়ের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, অধিকাংশ হত্যাকাণ্ড আমরা ডিটেক্ট করি। অধিকাংশ ঘটনায় আমাদের ডিটেকশন আছে। যার ফলে ক্রাইম সিচ্যুয়েশন, অপরাধের যে চিত্র সেটা প্রমাণ করে যে, অপরাধ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।

বাড্ডায় বিএনপি নেতা খুনের বিষয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের দয়া করে সময় দেন। একটা ঘটনা ঘটলেই আমরা বলে ফেলব, এরকম কোনো জাদুমন্ত্র আমাদের নাই।

অপরাধ দমনে সব ধরনের ‘প্রিভেন্টিভ ব্যবস্থা’ নেওয়া হয় জানিয়ে তিনি বলেন, সব ঘটনা প্রিভেন্টিভ মেজার্স দিয়ে ঠেকানো যায় না। এটা পৃথিবীর কোনো সমাজে হয় না।

পুলিশের তদন্তে হতাশা ব্যক্ত করে নিহত সাম্যর বড় ভাই সর্দার আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আশাবাদী ছিলাম, কিন্তু পুলিশের কর্মকাণ্ডে হতাশ। কী কারণে মারল, মোটিভটা কী? জানা গেল না।’

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]