33656

06/29/2025 কৃষি যন্ত্রপাতি আমদানিতে হয়রানি দূর করার দাবি

কৃষি যন্ত্রপাতি আমদানিতে হয়রানি দূর করার দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৮ জুন ২০২৫ ১৯:১৮

বাংলাদেশের কৃষির উন্নয়নে আধুনিক সেচ ব্যবস্থার প্রয়োগ ঘটাতে যন্ত্রপাতি আমদানি করা এবং এ সংক্রান্ত প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকারি বাধা তথা আমলাতান্ত্রিক হয়রানি দূরীকরণের দাবি জানিয়েছে শেরপা পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড।

তাদের অভিযোগ, কৃষি যন্ত্রপাতি আমদানি করতে গিয়ে নানা রকম আমলাতান্ত্রিক হয়রানি শিকার হতে হচ্ছে। বিশেষ করে কাস্টমস বিভাগের কর্মকর্তারা অযাচিতভাবে হয়রানি করে থাকে।

শনিবার (২৮ জুন) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শেরপা ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবু তাহের এসব কথা বলেন।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের কৃষিখাতে শেরপা পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং একটি সুনামি প্রতিষ্ঠান। ২০১১ সালে আমাদের দেশে সোলার পাওয়ার চালিত প্রথম সফল ডিপ টিউবওয়েলটি আমরাই স্থাপন করেছিলাম, যা ছিল পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ইসলামপুরে।’

আবু তাহের জানান, ‘আমরা দেশের কৃষির উন্নয়নে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা বিএডিসির সহযোগিতায় বাংলাদেশের সেচ ব্যবস্থায় অত্যাধুনিক একটি প্রযুক্তির প্রয়োগ করতে যাচ্ছি। এর জন্য বিএডিসি থেকে একটি প্রকল্পও গ্রহণ করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘কিন্তু সরকারের কাস্টমস বিভাগের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির কারণে আমাদের আমদানি করা সেন্টার পিভট ইরিগেশন (সিপিআই) সিস্টেমটি বর্তমানে চট্টগ্রাম পোর্টে পড়ে আছে। এই অচলাবস্থা নিরসনে সহযোগিতা পাবার আশায় আপনাদের শরণাপন্ন হয়েছি।’

আবু তাহের বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রায় ১৫ লাখ ডিপ টিউবওয়েল ও শ্যালো টিউবওয়েল রয়েছে। ফসল উৎপাদনের জন্য এসব টিউবওয়েলের মাধ্যমে ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে বিভিন্ন ধরনের সেচ কাজে ব্যবহার করা হয়। প্রচলিত এসব ডিপ টিউবওয়েল ও শ্যালো টিউবওয়েলের মাধ্যমে যে পানি উত্তোলন করা হয়, তার সঠিক ব্যবহার হয় মাত্র ৫০ শতাংশ। বাকি পানি অপচয় হয়। এই অপচয়ের কারণে বাংলাদেশের ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছে এবং দেশের উত্তরাঞ্চলের কিছু এলাকা মরুভূমিতে পরিণত হওয়ার আলামত শুরু হয়েছে।’

‘পানির অপচয় রোধ করার জন্য ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সেন্টার পিভট ইরিগেশন (সিপিআই) সিস্টেমে সেচ কাজ পরিচালনা করা হয়। আমাদের দেশে প্রচলিত পদ্ধিতে পাম্পের মাধ্যমে জমির মাটিতে সরাসরি পানি প্রবাহিত করা হয়। সিপিআই সিস্টেমে স্প্রে আকারে বৃষ্টির মতো করে পানি ছিটিয়ে দেওয়া হয়। যার ফলে ফসলের পাতা ও মাটি সসুসমভাবে পানি পেয়ে থাকে। এই পদ্ধতিতে পানির ব্যবহার বা কর্মদক্ষতা প্রায় ৮৫ থেকে ৯৮ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলকে দ্রুত মরুকরণের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য বিএডিসি প্রথমবারের মতো দেশে সিপিআই সিস্টেম চালু করা উদ্যোগ নিয়েছে।’

আবু তাহের বলেন, ‘চট্টগ্রাম কাস্টমসের কর্মকর্তা এ এইচ এম মাহবুবুর রশিদ (রাজস্ব কর্মকর্তা, সেকশন-৫-এ) এবং মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম (ডেপুটি কমিশনার অব কাস্টমস (প্রিভেন্টিভ) সিপিআই সিস্টেমকে একক সিস্টেম হিসেবে গ্রহণ করতে রাজি নন। তারা সিস্টেমটির বিভিন্ন যন্ত্রাংশকে আলাদা করে, বিশেষ করে সিস্টেমটির যন্ত্রাংশ ওয়াটার ডিস্ট্রিবিউশন ও টাওয়ারে ব্যবহৃত ৫ টন পাইপকে আলাদা করে শুল্কায়ন করতে আগ্রহী।’

তিনি বলেন, ‘সিপিআই সিস্টেমটি একটি সম্পূর্ণ সিস্টেম। এর একটি যন্ত্রাংশকে যদি সিস্টেম থেকে বিযুক্ত করা হয়, তাতে সম্পূর্ণ সিস্টেমটি অকার্যকর হয়ে যাবে। পাইপগুলোতে হাজার হাজার ছোট ছোট ছিদ্র আছে, যা দিয়ে বৃষ্টির মতো পানি ছিটিয়ে পড়ে। কিন্তু কাস্টমস কর্তারা বলছেন, এই পাইপ বাণিজ্যক কাজে ব্যবহার করা সম্ভব। এগুলো দিয়ে তেল ও গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব। প্রশ্ন হলো, হাজার হাজার ছিদ্র বিশিষ্ট পাইপ দিয়ে কীভাবে তেল বা গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব?’

আবু তাহের বলেন, ‘প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান এই যন্ত্রটিকে একক সিস্টেম হিসেবে রফতানি করেছে। বিএডিসির কার্যাদেশ এবং বিএডিসি থেকে চট্টগ্রামের কাস্টমস হাউস কমিশনারের কাছে পাঠানো চিঠিতেও সিপিআই সিস্টেমকে একক সিস্টেম হিসেবে বিবেচনা করার কথা বলা হয়েছে।’

কৃষি যন্ত্রটি চট্টগ্রাম কাস্টমস-এ আসার পর গত ১৭ জুন শুল্কায়নের জন্য জমা দেওয়া হয়। এতে ডিউটির পরিমান হওয়ার কথা ১২ লাখ ৫ হাজার ৪৬৯ টাকা।

আবু তাহের বলেন, ‘কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এটিকে বাণিজ্যিক উপকরণ আখ্যা দেওয়ায় শুল্ক ও জরিমানাসহ ৪২ লাখ টাকা দিতে হবে। কাস্টমসে আটকে থাকায় আমাদের প্রতি মাসে ৪ লাখ টাকা করে ক্ষতি গুণতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু সিপিআই সিস্টেমটি সম্পর্কে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের ধারণা কম সেক্ষেত্রে তারা এ বিষয়ে বিএডিসি অথবা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে মতামত গ্রহণ করতে পারতো।’

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলকে দ্রুত মরুকরণের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য বিএডিসি প্রথমবারের মতো দেশে সিপিআই সিস্টেম চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে উল্লেখ করে আবু তাহের বলেন, ‘বিএডিসি সিপিআই সিস্টেমের মাধ্যমে পাবনা, নাটোর ও সিরাজগঞ্জের ভূ-উপরিস্থ পানিকে কাজে লাগানোর জন্য সেচ উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করে দরপত্র আহ্বান করলে শেরপা ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড কার্যাদেশ পায়। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে অস্ট্রিয়ার একটি প্রতিষ্ঠান থেকে সিপিআই সিস্টেম আমদানি করে শেরপা।’

কাস্টমস বিভাগের অসহযোগিতা অব্যাহত থাকলে পুরো প্রকল্পটি ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলেও আবু তাহের জানান।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন শেরপা ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডেত ডেপুটি ম্যানেজার রুহুল আমিন, প্রজেক্ট ইনচার্জ মাহফুজুর রহমান প্রমুখ।

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]