বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকের ইস্যু করা ক্রেডিট কার্ড দিয়ে বিদেশে সবচেয়ে বেশি খরচ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে। আগে একসময় সবচেয়ে খরচ হতো ভারতে, কিন্তু ভিসা জটিলতায় তা ৬ নম্বরে নেমে এসেছে। আর ব্যাংকগুলোর ইস্যু করা ডেবিট কার্ড বিদেশে বেশি ব্যবহার হচ্ছে চীনে, প্রি-পেইড কার্ড বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে যুক্তরাজ্যে। এই হিসাব গত এপ্রিল মাসের; এটি শুধু দেশের বাইরে খরচের হিসাব।
ক্রেডিট কার্ডে দেশে-বিদেশে লেনদেনসংক্রান্ত চলতি বছরের এপ্রিলের হালনাগাদ প্রতিবেদন বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশ করেছে। এই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৫৬ ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের ক্রেডিট কার্ড সেবা দিয়ে থাকে। যাদের তথ্য নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিভাগ দেশের ক্রেডিট কার্ডের এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে।
প্রতিবেদনে দেশের অভ্যন্তর ও বিদেশে বাংলাদেশের নাগরিকদের এবং দেশের ভেতরে বিদেশি নাগরিকদের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের তথ্য তুলে ধরা হয়। এতে দেখা যায়, বাংলাদেশিরা বিদেশে ভ্রমণ ও কেনাকাটায় ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার কিছুটা কমিয়ে দিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে বিদেশের মাটিতে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশিরা ৪৬৮ কোটি টাকা খরচ করেছেন। এই পরিমাণ আগের মাস মার্চের তুলনায় ২৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ বেশি। মার্চে খরচ হয়েছে ৩৬১ কোটি টাকা। তবে বার্ষিক হিসাবে দেখা যাচ্ছে, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি এপ্রিল মাসে খরচ অনেকটাই কমেছে। ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশিরা ক্রেডিট কার্ডে বিদেশে খরচ করেছেন ৫০৬ কোটি টাকা, অর্থাৎ এ বছরের চেয়ে ৩৮ কোটি টাকা বেশি।
বিদেশে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার কমে আসার কারণ প্রসঙ্গে ব্যাংক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সরকারে পরিবর্তন আসার পর আওয়ামী লীগ সমর্থিত রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি বিভিন্ন পেশাজীবীদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। ফলে তাঁদের সব ধরনের কার্ড ব্যবহার বন্ধ হয়ে গেছে। দেখা গেছে, ব্যাংক হিসাবে টাকা জমা থাকলেও বিদেশে সেই অর্থ তাঁরা খরচ করতে পারছেন না। আবার ভারতের পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্য, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের ভিসা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বিদেশে কার্ডের লেনদেনে।
দেখা গেছে, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ভারতে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ড লেনদেন নেমে এসেছে মাত্র ৩১ কোটি টাকা; আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ৬৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ কম। ২০২৪ সালের এপ্রিলে মাসে ভারতে এই খাতে ব্যয় হয়েছিল ৯৮ কোটি টাকা।
ক্রেডিট কার্ডের মধ্যে এপ্রিল মাসে বিদেশে সবচেয়ে বেশি খরচ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে; এই অঙ্ক প্রায় ৬৬ কোটি টাকা। এরপর থাইল্যান্ডে ৪৭ কোটি টাকা, সিঙ্গাপুরে ৪৫ কোটি টাকা, যুক্তরাজ্যে ও মালয়েশিয়ায় খরচ হয়েছে ৪৩ কোটি টাকা করে।
ডেবিট কার্ড দিয়ে গত এপ্রিলে দেশের বাইরে খরচ হয়েছে ৩১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে চীনে খরচ হয়েছে ৬৪ কোটি টাকা, যুক্তরাষ্ট্রে ৩৬ কোটি টাকা, ভারতে ২৯ কোটি টাকা, যুক্তরাজ্যে ২৫ কোটি টাকা ও আয়ারল্যান্ডে ২৪ কোটি টাকা।
প্রি–পেইড কার্ড দিয়ে দেশের বাইরে খরচ হয়েছে ৮৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যে খরচ হয়েছে ১৮ কোটি টাকা, নেদারল্যান্ডসে ১০ কোটি টাকা, যুক্তরাজ্যে ও ভারতে ৯ কোটি টাকা করে ও কানাডায় প্রায় ৭ কোটি টাকা।
ডিএম /সীমা