35472

08/03/2025 রাবিতে শিক্ষক নিয়োগে জামায়াতপন্থি সাবেক এমপির সুপারিশ, সমালোচনার ঝড়

রাবিতে শিক্ষক নিয়োগে জামায়াতপন্থি সাবেক এমপির সুপারিশ, সমালোচনার ঝড়

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক, রাবি

৩ আগস্ট ২০২৫ ১২:২৫

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জামায়াতপন্থি সাবেক সংসদ সদস্যের সুপারিশের ঘটনা প্রকাশ্যে আসায় তীব্র সমালোচনার ঝড় উঠেছে। গতকাল শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খানের ফেসবুক স্টোরিতে ‘ভুলবশত’ একটি প্রবেশপত্র প্রকাশিত হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা ধরনের আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়।

ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগে প্রভাষক পদে আবেদনকারী আজমীরা আফরিনের প্রবেশপত্রে চাপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক এমপি ও রাবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের আজীবন সদস্য লতিফুর রহমানের সুপারিশের বিষয়টি উল্লেখ ছিল। লতিফুর রহমান ১৯৮৬ ও ১৯৯১ সালে জামায়াতে ইসলামীর মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। আজমীরা আফরিন আগামী ৪ আগস্ট সাক্ষাৎকারে অংশ নেবেন।

উপ-উপাচার্যের ফেসবুক স্টোরিতে প্রবেশপত্রটি প্রকাশিত হওয়ার কিছুক্ষণ পর তা মুছে ফেলা হলেও বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে সামাজিকমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। এ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি একটি পোস্ট লিখেন।

ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, ‘আমার ফেসবুকে হয়তো ভুলবশত একটি প্রবেশপত্র আপলোড হয়েছ। প্রতিদিনই অনেক আবেদনকারী বা তাদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে সিভি-প্রবেশপত্র দিয়ে যায়। রুয়ার নির্বাচনের সময় একজন অ্যালামনাস (সাবেক এমপি) ফোন করে উনার এলাকার একজন আবেদনকারীর কথা বলেন। আমার অফিস এবং ফোনে এরকম ডজনখানেক সুপারিশ আছে। তবে এগুলো কোনোভাবেই লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষায় প্রভাব ফেলে না। আশা করি, বিষয়টি নিয়ে কেউ ভুল বুঝবেন না।’

এদিকে স্টোরিটি শেয়ার হওয়ার পরেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শুরু হয় আলোচনা সমালোচনার।

সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী মিশু লিখেন, ‘সুপারিশে আসা বাকি সব প্রবেশপত্র পোস্ট করার দাবি জানাচ্ছি। আমরা জানতে চাই, কারা এইটারে বিশ্ববিদ্যালয় না ভাইভা দলীয় গোয়ালঘর বানাতে চায়।’

সাবেক সমন্বয়ক ফাহিম রেজা লিখেন, ‘হয় সব সুপারিশ সামনে আনেন; নয়তো প্রহসন বাদ দিয়ে সরে যান।’

ছাত্রদল সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী মিথ্যাবাদী না; মাননীয় উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব স্যার?’

আরেক সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার লিখেন, ‘কাল রাতে আমাদের প্রো-ভিসি মহোদয়ের ছেলে ছাগলকাণ্ড ঘটিয়ে ফেলেছেন। গেমস খেলতে গিয়ে বাবার ফোন থেকে একজন জামায়াতপন্থি সাবেক এমপির রেফারেন্সসহ প্রবেশপত্র স্টোরিতে দিয়ে ফেলে। স্যার ক্ল্যারিফিকেশনে লিখলেন; এমন অনেক রেফারেন্স ওনার হোয়াটস অ্যাপ, মেইল বা সরাসরি আসে। কিন্তু প্রশ্ন হলো- আপনাদের কাছে রেফারেন্স দেওয়ার সাহস কেনো পাবে? আপনারা কোন চেতনায় প্রশাসনে বসেছেন; ভুলে গেছেন স্যার? রেফারেন্স লেটার দেওয়ার কারণে এই তিনজনকে চাকরি দিব না। সিদ্ধান্ত এমন হওয়া উচিত ছিল।’

প্রবেশপত্রে কোনো সুপারিশের কথা অস্বীকার করলেও মুঠোফোনে উপ-উপাচার্যকে চাকরিপ্রার্থীর বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন সুপারিশকারী জামায়াতের সাবেক এমপি মো. লতিফুর রহমান। আজ সকালে তিনি সমকালকে বলেন, “চাকরিপ্রার্থীর প্রবেশপত্রে সুপারিশ করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে এটা সত্য যে- ওই প্রার্থীর বিষয়ে উপ-উপাচার্যকে ফোনে সুপারিশ করা হয়েছিলো। আমি তাকে বলেছিলাম, ‘বিগত দিনে ভাইভাগুলোতে অনেক বাজে চর্চা হয়েছে। তবে বর্তমান সময়ে আমরা এটা চাই না। আপনি এই প্রার্থীর আবেদনপত্রটা দেখবেন। আবেদনকারীর বিভাগের ফলাফল অনেক ভালো।’ এ বেশি আর কিছু বলতে পারছি না। আমি অসুস্থ।”

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে একটা পরিবর্তন আসলেও আমাদের চিন্তাগত কোনো পরিবর্তন আসেনি। সত্য কথা হচ্ছে, বিভিন্ন দপ্তরে সুপারিশ, তদবির এগুলো কোনো কিছুই বন্ধ হয়নি। এখনও দপ্তরগুলোতে শত শত তদবির জমা পড়ছে। এই ধরনের খারাপ প্র্যাকটিস আসলে কোনোটাই পাল্টায়নি। এগুলো মানুষ এখনও করছে, যা খুবই দুঃখজনক। তবে আমরা চেষ্টা করছি কোনো ধরনের অন্যায় আবদার, তদবির এবং আর্থিক দুর্নীতিকে কোনো প্রশ্রয় দেব না। মানুষের কাজ মানুষ করবে, আমরা আমাদের মতো করে আমাদের কাজ করার চেষ্টা করছি।

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]