যে কোনো ক্রীড়াবিদের জীবনে অভিষেক মুহূর্তটি সবচেয়ে প্রতীক্ষিত ও স্মরণীয় ঘটনা। সেই মাহেন্দ্রক্ষণের জন্য প্রস্তুত হন বছরের পর বছর ধরে, চোখে থাকে একরাশ স্বপ্ন আর উত্তেজনা। কিন্তু আর্জেন্টাইন মহাতারকা লিওনেল মেসির অভিষেক মুহূর্তটি একেবারেই অন্যরকম ছিল—অপ্রত্যাশিত, নাটকীয় এবং কিছুটা নির্মমও বলা চলে।
২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট, আজ থেকে দুই দশক আগে, বুদাপেস্টের পুসকাস অ্যারেনায় হাঙ্গেরির বিপক্ষে একটি প্রীতি ম্যাচে আর্জেন্টিনার জার্সিতে অভিষেক হয় তরুণ লিওনেল মেসির। কাগজে-কলমে প্রীতি ম্যাচ ছিল, যা হতে পারতো তরুণ মেসির জন্য স্বপ্নের মতো সূচনা। তবে বাস্তবতা ছিল সম্পূর্ণ উল্টো।
মাঠে নেমে মাত্র ৪৫ সেকেন্ডেই লাল কার্ড!
আর্জেন্টিনার তৎকালীন কোচ হোসে পেকারমান ম্যাচে দ্বিতীয়ার্ধের ১৮ মিনিটে লিসান্দ্রো লোপেজকে তুলে নিয়ে ১৮ নম্বর জার্সি পরা ১৮ বছর বয়সী লিওনেল মেসিকে মাঠে নামান। তরুণ মেসি ধীরে ধীরে মাঠে ঢুকছিলেন, যেন নিজের অভিষেকের উত্তেজনা আড়াল করতে চাইছেন।
তবে সেই স্বপ্নের যাত্রা বেশিক্ষণ টেকেনি। মাত্র ৪৫ সেকেন্ড পরে নিজের প্রথম বল ধরার চেষ্টায় হাঙ্গেরির ডিফেন্ডার ভিলমোস ভানচজাক তার জার্সি ধরে টানেন। মেসি হাত দিয়ে তাকে সরাতে গিয়ে সামান্য ঘষা লাগান, আর তাতেই ভানচজাক পড়ে যান এবং নাটকীয়ভাবে রেফারির মন জয় করেন।
রেফারির সেই বিতর্কিত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিবাদ জানান লিওনেল স্কালোনি।
জার্মান রেফারি মার্কাস মার্ক কোনো সময় নষ্ট না করে মেসিকে সরাসরি লাল কার্ড দেখান। মেসির আন্তর্জাতিক ফুটবল ক্যারিয়ারের শুরুটা হয়ে যায় একটি লাল কার্ড দিয়ে! ‘আমি ভেবেছিলাম আর কখনো ডাক পাব না’—২০১৯ সালে টিওয়াইসি স্পোর্টসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেই দুঃখজনক দিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন মেসি। তিনি বলেন, “আমি ভেবেছিলাম, আমি নামলাম আর সঙ্গে সঙ্গেই বের করে দিল, আমাকে আর কখনো ডাকা হবে না। খুব খারাপ লাগছিল।”
তখন মেসি শুধু জাতীয় দলের সিনিয়র দলে নিজের জায়গা হারানোর ভয় পাননি, বরং পুরো দেশের প্রত্যাশার ভারটাও অনুভব করেছিলেন। সেই সময় তিনি যুব দলে দুর্দান্ত পারফর্ম করেছিলেন। ফ্রান্সিসকো ফেরারোর অধীনে আর্জেন্টিনা জিতেছিল ফিফা অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ, যেখানে মেসি হয়েছিলেন সেরা খেলোয়াড় ও সর্বোচ্চ গোলদাতা।
আর্জেন্টিনার বর্তমান বিশ্বজয়ী কোচ লিওনেল স্কালোনি, তখন ছিলেন মাঠে মেসির সতীর্থ। ম্যাচে ৪ নম্বর জার্সি পরে খেলছিলেন তিনি। রেফারির সেই বিতর্কিত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিবাদ জানান স্কালোনিই। দীর্ঘক্ষণ রেফারির সঙ্গে তর্ক করে বোঝানোর চেষ্টা করেন, যাতে লাল কার্ড প্রত্যাহার করা হয়। তবে কোনো কিছুতেই কাজ হয়নি। রেফারি নিজের সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন, আর মেসির জন্য সেটা হয়ে ওঠে এক ভুলে যাওয়া যায় না এমন অভিষেক রাত।
সেই নাটকীয় ও হতাশাজনক অভিষেকের পরও থেমে থাকেননি লিওনেল মেসি। বরং সেটা ছিল এক বিশ্বসেরা ক্যারিয়ারের সূচনা। পরবর্তী দুই দশকে তিনি পরিণত হয়েছেন আর্জেন্টিনার সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়ে। তিনি দেশকে এনে দিয়েছেন—কোপা আমেরিকা ও বিশ্বকাপ ট্রফি।