দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় বিভিন্ন স্তরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদ খালি। কোনো কোনো দপ্তরে একরকম অচলাবস্থা বিরাজ করছে। এসব প্রতিষ্ঠানে অনেকেই প্রয়োজনীয় কাজে এসে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন।
শেখ হাসিনার পতনের পর আওয়ামী মতাদর্শে অনেক কর্মকর্তাকে বদলি করা হয় বিভিন্ন দপ্তরে। এখনো প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের দরপত্র চূড়ান্ত হয়নি। এবারও বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের বই পাওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়।
অনিয়ম ও দুর্নীতির দায়ে গত ২২ জুলাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব সিদ্দিক জোবায়েরকে প্রত্যাহার করা হয়। এরপর রুটিন দায়িত্বে ছিলেন অতিরিক্ত সচিব মো. মজিবর রহমান। সোমবার নতুন সচিব হিসাবে দায়িত্ব পেয়েছেন রেহানা পারভীন। তিনি আজ দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।
গেল বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. খ. ম. কবিরুল ইসলাম অবসরে গেছেন। ওই পদেও কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তবে অতিরিক্ত সচিব কামরুন নাহার রুটিন দায়িত্বে আছেন। এছাড়া শিক্ষার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে (এনসিটিবি) স্থবিরতা বিরাজ করছে। দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পাঠ্যবই সরবরাহকারী এ প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন ধরে চেয়ারম্যানের পদ খালি। এছাড়া আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য। ইতোমধ্যে আগামী শিক্ষাবর্ষের বই ছাপানোর কাজও থেমে আছে। এখনো প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের দরপত্র চূড়ান্ত হয়নি। এবারও বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের বই পাওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়।
চলতি শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের বিন্যামূল্যে পাঠ্যবই ছাপাতে ব্যাপক দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে বেশির ভাগ মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান। সেখানে শিক্ষার্থীদের ৩০ ভাগ নিম্নমানের বই দেওয়া হয়েছে। নিয়মিত চেয়ারম্যান না থাকায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উলটো পুরস্কার হিসাবে এসব বিতর্কিত মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগকে বই ছাপানো কাজ পেতে সুযোগ করে দেয় এনসিটিবি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২৬ জানুয়ারি পিআরএলে যান এনসিটিবির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক একেএম রিয়াজুল হাসান। পরে তাকে দুই মাস অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর থেকে চেয়ারম্যান পদ ফাঁকা। যদিও একজন কর্মকর্তা অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন।
এ বিষয়ে এনসিটিবির প্রধান সম্পাদক মুহাম্মদ ফাতিহুল কাদীর যুগান্তরকে বলেন, একটা প্রতিষ্ঠানের প্রধান না থাকলে স্বাভাবিকভাবে কাজের ব্যাঘাত ঘটে। এতে নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়। সামনের সময়গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই দ্রুত শূন্য পদগুলো পূরণ হওয়া দরকার।
শিক্ষার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর। এ দপ্তরের পরিচালক পদও খালি রয়েছে। সেখানে রুটিন দায়িত্বে আছেন যুগ্ম পরিচালক প্রফেসর খন্দকার মাহফুজুল আলম। এছাড়া জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম) সহকারী পরিচালক ও মেডিকেল অফিসার পদও খালি রয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) সহকারী পরিচালক (প্রশিক্ষণ-৩) ও মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন শাখার উপপরিচালক পদও খালি রয়েছে।
এদিকে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর বোর্ডের সচিব অধ্যক্ষ শরীফ আহমদও পালিয়ে যান। এরপর রুটিন দায়িত্ব পান শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা অধ্যাপক মো. জাফর আহম্মদ। দপ্তরটি এক বছরেও স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরেনি। সেখানে তিন মাস ধরে সার্ভার বন্ধ রয়েছে। ফলে শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরভাতার গুরুত্বপূর্ণ ফাইলও আটকে আছে। এতে দিন দিন বাড়ছে ভোগান্তি। ৪০ হাজারের বেশি শিক্ষক-কর্মচারী অবসরভাতার জন্য দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছেন। দিন যত যাচ্ছে, শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর সুবিধার টাকা পেতেও অপেক্ষার সঙ্গে কষ্ট ও ভোগান্তি বাড়ছে। এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দিয়ে অবসর সুবিধা বোর্ড পুনর্গঠন করার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক নেতারা।
এদিকে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পদে অধ্যাপক এসএম কামাল উদ্দিন হায়দারকে নিয়োগ দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন সাবেক সচিব সিদ্দিক জুবায়ের। অথচ এই পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আওয়ামী সরকারের আমলে সুবিধাভোগীদের একজন। তিনি এর আগে রাজধানীর তিতুমীর সরকারি কলেজের দায়িত্বে ছিলেন। পতিত আওয়ামী সরকারের আমলে শিক্ষার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. খন্দকার এহসানুল কবিরও আওয়ামী দোসরদের একজন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের রুটিন দায়িত্বে অতিরিক্ত সচিব (কলেজ) মো. মজিবর রহমান যুগান্তরকে বলেন, শিক্ষা খাতে অবহেলা, গাফিলতি, বিশৃঙ্খলা ও অনিয়মের চিত্র দীর্ঘদিনের। অল্প সময়ের মধ্যে এর পরিবর্তন সম্ভব নয়। এর জন্য সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা প্রয়োজন। শিক্ষার সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে পর্যায়ক্রমে সমাধান করতে হবে।