প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন ও দায়িত্বশীল নাগরিক আচরণ প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নিতে হবে।
সুবিস্তৃত জনসচেতনতা ও সব স্তরে স্বাস্থ্যবান্ধব নীতি-কৌশল গ্রহণ হতে পারে অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে বড় হাতিয়ার। তাই স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন ও দায়িত্বশীল নাগরিক আচরণ প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নিতে হবে। এটিকে সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করতে হবে।
বুধবার (২০ আগস্ট) দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আন্ত:মন্ত্রণালয় সহযোগিতা বৃদ্ধির নিমিত্ত ‘যৌথ ঘোষণাপত্র’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামকগুলোর বিষয়ে আমাদের যথেষ্ট সচেতনতা আছে, এ কথা জোর দিয়ে বলা যায় না। অনেকেই সচেতন থাকলেও জীবনযাপনে হয়ত সেভাবে প্রতিফলন নেই। ফলে নানামাত্রিক শারীরিক ও মানসিক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে এবং দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন অগ্রগতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। যেমন- তরুণদের মধ্যে অনেকে একইসঙ্গে পুষ্টিহীনতায় ভুগছে, আবার অতিরিক্ত ওজন নিয়ে শারীরিক ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতেও রয়েছে। তামাকের বিরুদ্ধে তরুণ সমাজকে আজ সচেতন করা না গেলে, আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
স্বাস্থ্য সচেতনতার জন্য চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে জরুরিভিত্তিতে মানুষকে সচেতন করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, জাতীয় নীতিগুলো এমনভাবে প্রণয়ন করতে হবে যেন সেগুলো স্বাস্থ্যবান্ধব হয়, অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হয়; শিশু, কিশোর ও নারী স্বাস্থ্য যেন বিশেষ অগ্রাধিকার পায়, নাগরিক সমাজ ও যুব শক্তি যেন সচেতনতা কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে পারে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যৌথ ঘোষণা বাস্তবায়নে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগ নিতে হবে। দরকার আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক কারিগরি সহযোগিতা। আমি বিশ্বাস করি, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ মডেল প্রয়োগ করে এ সংক্রান্ত উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে ‘যৌথ ঘোষণা’ বাস্তবায়ন সহজ হবে। আমি আশা করছি, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এ বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করবে। স্বাক্ষরকারী মন্ত্রণালয়গুলো সহযোগিতা করবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রয়োজনীয় সাপোর্ট দেবে।
যেকোনো কর্ম পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নিবিড় মনিটরিং ও মূল্যায়ন আবশ্যক জানিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, যৌথ ঘোষণা বাস্তবায়নের কাজটি বিশেষ অগ্রাধিকারে রাখবেন, প্রয়োজনীয় বরাদ্দ ও জনবল নিশ্চিত করবেন যেন বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় বিশেষ কোনো সীমাবদ্ধতা বা চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি না হয়।
তিনি বলেন, আজকের এই ‘যৌথ ঘোষণা’ স্বাক্ষরের মাধ্যমে জাতীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আমরা একসঙ্গে কাজ করতে নতুন করে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলাম। এটি শুধু একটি আয়োজনের মধ্যে যেন সীমাবদ্ধ না থাকে। এটি আমাদের সম্মিলিত প্রয়াস। আমি বিশ্বাস করি, এটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা কার্যক্রম আরো গতিশীল হবে। এটি হবে অগ্রগতির একটি নতুন মাইলফলক। স্বাস্থ্য সম্পর্কিত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ও এসডিজি পরবর্তী উন্নয়ন এজেন্ডাগুলো অধিকতর দক্ষতার সঙ্গে অর্জনে সহায়ক হবে।
‘বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে, বিশেষ করে ৫ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বাংলাদেশ অফিসের সত্যিই প্রশংসনীয় ভূমিকা নিয়েছে। আমি জেনেছি, আজকের আয়োজনে তারা গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতা করেছে। এ জন্য আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই’, বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
ডিএম/রিয়া