ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ড ইস্যুতে নীতি নিয়ে প্রশ্ন তোলায় মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্তকৃত ওই কর্মকর্তার নাম শাহেদ ঘোরেশি।
তিনি ইসরায়েল ও গাজার প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিমালা প্রণয়নের বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রেস অফিসার ছিলেন। জেরুজালেমে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস থেকে অভিযোগ ওঠার পর তাকে বরখাস্তের এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিকট প্রাচ্য বিষয়ক ব্যুরোতে চুক্তিভিত্তিক কর্মরত শাহেদ ঘোরেশিকে গত সপ্তাহে দুটি ঘটনার পর ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির প্রতি তার আনুগত্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় সাপ্তাহিক ছুটির দিনে তাকে বরখাস্ত করা হয়।
শাহেদ ঘোরেশিকে বরখাস্তের খবর প্রথম প্রকাশ করে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট। ইরানি-আমেরিকান ঘোরেশিকে বরখাস্তের পর বুধবার কট্টরেউগ্র ডানপন্থি কর্মী লরা লুমারও লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন। তিনি অভিযোগ করেন, ঘোরেশি প্রশাসনের মধ্যপ্রাচ্য নীতিকে পুরোপুরি সমর্থন করছেন না।
শাহেদ ঘোরেশি ও দুই মার্কিন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানা গেছে, গত সপ্তাহে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের এক প্রশ্নের জবাব খসড়া করার সময় প্রথমে জেরুজালেম দূতাবাসের এক সিনিয়র কর্মকর্তা এবং পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর শীর্ষ উপদেষ্টাদের বিরাগভাজন হন ঘোরেশি। প্রশ্নটি ছিল ইসরায়েল ও দক্ষিণ সুদানের মধ্যে গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের দক্ষিণ সুদানে স্থানান্তর নিয়ে আলোচনার বিষয়ে।
তার খসড়া উত্তরে একটি লাইন ছিল—‘যুক্তরাষ্ট্র গাজার ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক স্থানান্তর সমর্থন করে না’। অথচ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ বারবার এমন কথা বলেছেন।
শাহেদ ঘোরেশি ও অন্য কর্মকর্তাদের দাবি, এই লাইনটি জেরুজালেম দূতাবাস বাতিল করে দেয়, যা নিয়ে ওয়াশিংটনে নীতি-সংক্রান্ত প্রশ্ন ওঠে।
এছাড়া শাহেদ ঘোরেশি দূতাবাসের এক বিবৃতিতেও প্রশ্ন তোলেন, যেখানে অধিকৃত পশ্চিম তীরকে বাইবেলীয় নাম ‘জুডিয়া ও সামারিয়া’ বলা হয়েছিল— যা কট্টর উগ্র ডানপন্থি ইসরায়েলি কর্মকর্তারা প্রায়ই ব্যবহার করেন। ইসরায়েলে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি এ নাম ব্যবহারের পক্ষে বারবার মত দিয়েছেন।
শাহেদ ঘোরেশি বলেছেন, “আমার পরিশ্রমী সহকর্মীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা সত্ত্বেও আমি গত সপ্তাহে দুটি ঘটনায় হঠাৎ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হই। একটি হলো — আমরা গাজার ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক স্থানান্তরের বিরোধিতা করা — যা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও বিশেষ দূত উইটকফ নিজেরাও আগেই বলেছেন। আরেকটি হলো— ‘জুডিয়া ও সামারিয়া’ উল্লেখ কেটে দেওয়া।”
তিনি আরও বলেন, “আগে এসব সিনিয়র পর্যায়ে অনুমোদিত ছিল। তাহলে হঠাৎ করে কেন আমাকে কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই টার্গেট করা হলো? এর মানে কি আমাদের ইসরায়েল-ফিলিস্তিন নীতি আরও খারাপ হতে চলেছে— এমনকি জাতিগত নিধনের বিরুদ্ধেও কোনো অবস্থান নেবে না? ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখাচ্ছে।”
এদিকে এই সপ্তাহে ট্রাম্প প্রশাসন আরও ৩৭ জন বর্তমান ও সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তার সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স বাতিল করেছে। এদের মধ্যে অনেকে ২০১৯ সালে ট্রাম্পবিরোধী এক চিঠিতে স্বাক্ষর করেছিলেন।
ডিএম/রিয়া