বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান বলেছেন, আমি যদি ৫ আগস্ট নিয়ে কালো শক্তি বলে থাকি, কোনো অন্যায় করে থাকি তাহলে আমাকে শাস্তি দেন, মামলা করেন, কিন্তু মব করবেন না।
সোমবার (২৫ আগস্ট) দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সামনে তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপির এ নেতা বলেন, আমি ফজলুর রহমান। আমার বয়স এখন ৭৮ বছর। আমার জীবনের প্রথম পরিচয় আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমার যখন যৌবন ছিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় আমি তখন মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলাম। কমান্ডার হিসেবে আমি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম। আজকে জীবনের শেষ পর্যায়ে। আমার ২য় পরিচয় আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা। আমার আরও একটি পরিচয় আমি একজন সিনিয়র আইনজীবী। আমার রাজনৈতিক জীবনের আরও পরিচয় আছে। সেগুলো না দিলাম। আমার বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু সন্তান শ্লোগান দিয়েছে। তারা আমার ওপর বিক্ষুব্ধ হয়ে অনেক কাজ করেছে। আমি তাদের জন্য দোয়া করি। তাদেরকে আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখুক। তাদেরকে আল্লাহ আরও ওপরে তুলুক। তাদের প্রতি আমার ব্যক্তিগতভাবে কোনো হিংসা থাকতে পারে না।
‘ তিনি বলেন, গতকাল বিকেল ৫টায় আমি হঠাৎ জানতে পারলাম আমার নামে আমার দল থেকে একটি শোকজ নোটিশ করা হয়েছে। নোটিশটা আমি মানুষের কাছে শুনলেও রাত ৯টায় নিজের হাতে পেলাম। সেই নোটিশে জানতে পারলাম আমার দল আমার দল আমার বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ তুলে ধুরেছে। আমি কেন এই কথাগুলো বললাম। সেই উত্তর আমি নির্দিষ্ট সময় আমার দলকে দিব। এবং আমার দল আমার বিরুদ্ধে যে সিদ্ধান্ত নিব আমি সেটি মেনে নেব। কিন্তু আজকে সকালে আমি ঘুম থেকে উঠে দেখলাম। আমার বিরুদ্ধে কিছু সন্তান আমার বিরুদ্ধে শ্লোগান দিচ্ছে। ৭/৮ জন সন্তান শ্লোগান দিচ্ছে ফজলুকে হত্যা কর, ফজলুকে গ্রেফতার কর ইত্যাদি।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে শংকার কথা জানিয়েছে তিনি বলেন, আমার বাসার মালিক আমাকে বাসা থেকে বের করে দেয় কি না। আমি একজন মানুষ আমি এদেশের জন্য যুদ্ধ করেছিলাম। কাজেই আমার এদেশে নিশ্চিন্তে নির্বিঘ্নে বাঁচার অধিকার আছে। এটা আমার সাংবিধানিক অধিকার। আজকে আমার বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়া হচ্ছে আমাকে মেরে ফেলা হবে। বিদেশ থেকে দুজন লোক ইউটিউবে অর্ডার দিয়েছে আমাকে হত্যা করার জন্য। আমি মৃত্যুকে ভয় পাই না। কিন্তু আমি অপমৃত্যু কামনা করি না। আমি কাদের জন্য যুদ্ধ করেছি। আমার বিরুদ্ধে সন্তানেরা কেন এরকম করবে। আমি তো সবার জন্য যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম। যদি তোমরা কষ্ট পেয়ে থাক। আমার বিরুদ্ধে মামলা কর। আমাকে গ্রেফতার কর, শাস্তি দাও। আমাকে হত্যা করার জন্য আমার বাসা পর্যন্ত গিয়ে মব সৃষ্টি কর কেন?
এ সময় দেশের মানুষের প্রতি তিনি আহ্বান রাখেন, হে বাংলাদেশের মানুষ আপনারা যদি মনে করেন একজন মুক্তিযোদ্ধার নির্বিঘ্নে বাঁচার অধিকার আছে। আমার জন্য দোয়া করবেন। এবং আমার জন্য আন্দোলন করবেন। ফজলুর রহমানকে নির্বিঘ্নে বাঁচতে দাও।
শোকজের জবাব প্রসঙ্গে অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান বলেন, দল আমাকে নোটিশ দিয়েছে। নোটিশ দিতেই পারে। আমি সেই প্রশ্নের উত্তর দেব। সেটার সাথে মবের কোনো সম্পর্ক নেই। কাজেই আমি আইনশৃংখলাবাহিনীকে বলবো, আমি ও আমার স্ত্রী-সন্তানের মানবাধিকার নিশ্চিত করেন।
৫ আগস্টের কালো শক্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি এটা বলিনি। আমার সমস্ত বক্তব্য আমাকে দেখান। তারপর বলেন। প্রমাণ করতে পারলে আমি সঙ্গে সঙ্গে মাফ চাইব। ইউটিউবের এক লাইন দেখে মন্তব্য করবেন না।
উল্লেখ্য, ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছেন দেড় হাজারেরও বেশি ছাত্রজনতা, আহত ও পঙ্গু হয়েছেন প্রায় ৪০ হাজার। টেলিভিশনের একটি টকশোতে ৫ আগস্টে রাজাকারের বাচ্চারা অভিনয় করেছে, ৫ আগস্টের কালো শক্তি জামায়াত— এমন বক্তব্য দেওয়ার পর সারাদেশে প্রতিবাদের ঝর ওঠে। এ ঘটনায় ফজলুর রহমানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় বিএনপি। আজ সোমবার সকালে তার বাসার সামনে আহত শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে তার বিরুদ্ধে স্লোগান দেন।
ডিএম/রিয়া