38978

09/19/2025 সালমান শাহ কি এখনো জনপ্রিয়?

সালমান শাহ কি এখনো জনপ্রিয়?

নজরুল সৈয়দ

১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১০:২৮

নব্বইয়ের আগে-পরে, গোটা বিশ্বে তখন তুমুল পরিবর্তন এসেছে। কয়েক বছরের ব্যবধানে একদিকে ভেঙে গেছে সোভিয়েত ইউনিয়ন, আরেকদিকে ভেঙেছে বার্লিন ওয়াল। চীনের প্রাচীর না ভাঙলেও তিয়ানআনমেন স্কোয়ারে তুমুল ছাত্র বিক্ষোভ হলো আর সামান্য বাজারের ব্যাগ হাতে সারিবদ্ধ ট্যাঙ্কের সামনে দাঁড়িয়ে বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিলেন এক মধ্যবিত্ত পুরুষ।

সাম্যবাদ গুটিয়ে পুঁজিবাদ আসর বিছিয়ে দিলো সারাবিশ্বে, মুক্তবাজার অর্থনীতির জোয়ারে বাংলার পাড়া-মহল্লার টং দোকানে ঝুলতে লাগলো বিদেশি বিস্কুটের ঝলমলে প্যাকেট। ততদিনে নব্বইয়ের গণ-আন্দোলন শেষ, ‘গণতন্ত্র’-এর শুরু। বাড়িতে বাড়িতে টেলিভিশন আর ফ্রিজ, পাড়ায়-মহল্লায় ভিসিআরের দোকান। ভাড়ায় আনা ভিসিআরের ক্যাসেটে মহল্লাবাসী এক হয়ে নাচছে অমিতাভ বচ্চন থেকে মিঠুন চক্রবর্তী পর্যন্ত। আমির খান, সালমান খান আর শাহরুখ খানও চলে এসেছেন মার্কেটে। ভিউকার্ডে জৌলুস ছড়াচ্ছে রেখা, শ্রীদেবী, মাধুরী দীক্ষিত আর জুহি চাওলারা।

তো এই ভীষণ টালমাটাল পরিবর্তনের কালে বাংলা সিনেমাও পিছিয়ে থাকল না। ১৯৯১ সালে ‘চাঁদনী’ সুপার ডুপার হিট হয়ে এহতেশামের হাত ধরে ঢালিউডে অভিষেক হলো নাঈম-শাবনাজ জুটির। আর দুই বছর পরেই ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ দিয়ে আলো ছড়ালো আরও এক নতুন জুটি সালমান শাহ-মৌসুমী। সাড়ে তিন বছরের ক্যারিয়ারে, মাত্র ২৭টা ছবি করে সালমান শাহ এমন তাক লাগিয়ে দিলেন যে, এতবছর বাদেও তার বিকল্প কাউকে পাওয়া যায়নি!

বলিউড আর ভিসিআর মারফত বাংলাদেশেও তখন ‘সনম বেওয়াফা’, ‘দিল’ আর ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’ ভীষণ জনপ্রিয়। ঢাকার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আনন্দমেলা কিনে নিলো এই তিনটি সিনেমার কপিরাইট। প্রথমে ‘সনম বেওয়াফা’ রিমেকের প্ল্যান করলেন পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান। তিনি চাইছিলেন নতুন মুখ নিতে।

ততদিনে লাক্স আনন্দবিচিত্রা ফটোসুন্দরী হয়ে মডেলিংয়ে নাম করেছেন মৌসুমী। তার কাছে প্রস্তাব গেলে তিনি রাজি হয়ে যান। নায়ক হিসেবে তখন ভাবা হচ্ছিল টিভির জনপ্রিয় তারকা তৌকীর আহমেদের কথা, কিন্তু তিনি রাজি হলেন না। এরপর প্রস্তাব গেল টিভি বিজ্ঞাপনের জনপ্রিয় তারকা নোবেলের কাছে, তিনিও প্রত্যাখ্যান করলেন। আলমগীর তখনও নায়ক হিসেবে তুমুল জনপ্রিয়, শাবানার সঙ্গে পারিবারিক সিনেমায় তিনি হিট। আলমগীরের তৎকালীন স্ত্রী গীতিকার খোশনূর আলমগীর বললেন ইমন নামে এক ছেলের কথা। দেখেই পছন্দ করে ফেললেন পরিচালক সোহান।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেটের দাড়িয়াপাড়ার নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন ইমন। পড়াশোনা করেছেন খুলনার বয়রা মডেল হাই স্কুলে। কাকতালীয়ভাবে এখানে তার সহপাঠী ছিলেন মৌসুমী।

১৯৮৫ সালে ‘আকাশ ছোঁয়া’ নাটক দিয়ে ইমনের শুরু। পরের বছর হানিফ সংকেতের ইত্যাদির এক মিউজিক ভিডিওতে মা নীলা চৌধুরীর সঙ্গে মডেল হয়েছিলেন। এতদিন ‘সনম বেওয়াফা’র প্রস্তুতি চললেও ইমনের জোরাজুরিতে সোহান হাত দিলেন ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’ সিনেমার রিমেকে। এই ছবি ইমন ইতিমধ্যে ২৬ বার দেখে ফেলেছেন! শুরু হলো ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ এর কাজ।

মৌসুমী তখন রীতিমতো স্টার, মিডিয়া কাভারেজ পুরোটাই মৌসুমীকেন্দ্রিক, ইমন ব্রাত্য। তিনি নিজেই বলেছেন, ‘অনেক সময় সারাদিন শুটিং করে গাজীপুর থেকে ট্যাক্সি নিয়ে বাসায় গিয়ে ভাত খেয়েছি। কেউ সামান্যতম খোঁজও নেয়নি।’

১৯৯৩ সালের ২৫ মার্চ মুক্তি পেল ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’। একই সঙ্গে চলচ্চিত্রে অভিষেক হলো তিনজনের—নায়িকা মৌসুমী, খান আতার ছেলে গায়ক আগুন আর ইমন থেকে নায়ক হয়ে ওঠা সালমান শাহ। প্রথম ছবিতেই ছানাবড়া করে দিলেন বাংলা সিনেমার দর্শকের চোখ, আর হৃদয়ে ঝড় তুললেন তরুণীদের।

বাংলা সিনেমার আগের নায়কেরা যথাসময়ে স্মার্ট ছিলেন না তা বলা ঠিক হবে না। আনোয়ার হোসেন, হাসান ইমাম, বুলবুল আহমেদ, রহমান, রাজ্জাক, আলমগীর, জসিম, উজ্জ্বল, সোহেল রানা, রুবেল, ইলিয়াস কাঞ্চনরা অবশ্যই যার যার সময়ের নিরিখে স্মার্ট ছিলেন যথেষ্ট। কিন্তু তারপরেও বাংলা সিনেমার নায়কদের মধ্যে ফ্যাশন আইকন স্মার্ট দুজনই—জাফর ইকবাল আর সালমান শাহ। হালের শাকিব খানকেও এই তালিকায় তুলতে আগ্রহী না দর্শকেরা।

প্রথম ছবির আলাপে মৌসুমী প্রধান থাকলেও এক ছবিতেই সালমান শাহ যে ক্রেজ তৈরি করে নেন, তাতে ‘এক বনে দুই বাঘ’ এর মতো ব্যক্তিত্বের সংকট তৈরি হয় দুইজনের। দ্বিতীয় সিনেমা ‘তুমি আমার’-এর শুটিং চলার সময়ই সালমান সিদ্ধান্ত নেন নির্মাণাধীন ছবিগুলো শেষ হলেই মৌসুমীর সঙ্গে চুকিয়ে ফেলবেন সম্পর্কের লেনাদেনা।

তৃতীয় ছবি ‘অন্তরে অন্তরে’ মুক্তির আগেই সে খবর ছড়িয়ে পড়ে দর্শকের কানে, ফলে এই ছবি হয় আরও বেশি হিট। বিশেষ করে রুনা লায়লা ও এন্ড্রু কিশোরের কণ্ঠে এই ছবির গান ‘এখানে দুজনে নির্জনে সাজাবো প্রেমেরও পৃথিবী’ আর ‘কাল তো ছিলাম ভালো আজ আমার কি হলো’ তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। আর এই ছবি দিয়েই সালমান শাহ বক্সঅফিস হিটের হ্যাট্রিক করেন। মৌসুমী সেখানে ফেইল। কারণ তিনি দ্বিতীয় ছবি ‘দোলা’ করেছিলেন ওমর সানীর সঙ্গে, সেটা ফ্লপ হয়।

৭৫ সালে ফারুক-কবরী জুটির তুমুল হিট ছবি ‘সুজন সখি’ রিমেক ভার্সনে প্রথমবারের মতো জুটি বাঁধেন সালমান শাহ আর শাবনূর। সেটাও হয় চরম ফ্লপ। পরের ছবি একটু ব্যতিক্রমী, রোমান্টিক ইমেজ ভেঙে প্রতিবাদী যুবকের বেশে ‘বিক্ষোভ’ ছবিতে হাজির হন সালমান শাহ, সঙ্গে শাবনূর। এ ছবি নিয়ে তিনি ব্যাপক উচ্ছ্বসিত ছিলেন, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়ার বাসনাও ছিল। কিন্তু সে আশা পূর্ণ হয়নি। সেবার পুরস্কার পায় হুমায়ুন আহমেদের ‘আগুনের পরশমনি’ আর নায়ক হিসেবে পুরস্কার পান আলমগীর।

মৌসুমীর সঙ্গে মাঝখানে ‘স্নেহ’ পেরিয়ে সে বছরই ডিসেম্বরে সালমান শাহ স্ক্রিনে আবির্ভূত হন তার তৃতীয় নায়িকা লিমাকে নিয়ে। এ ছবির প্রয়োজনে মার্শাল আর্টও শিখেছিলেন তিনি। এমনকি এ ছবিতেই প্রথমবারের মতো প্লেব্যাকও করেন তিনি। কিন্তু সব চেষ্টাই বিফলে যায়, স্থূলদেহী নায়িকা আর কাটপিসের কারণে চরম ফ্লপ হয় ‘প্রেমযুদ্ধ’। একাধিক ফ্লপের পরেও সালমান শাহ নায়ক হিসেবে তুমুল জনপ্রিয়। ১৯৯৩ সালে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ মুক্তির পরের বছরেই তার ৬টি ছবি মুক্তি পায়।

পরের বছর অর্থাৎ ১৯৯৫ সালে মুক্তি পায় সালমান শাহ-শাবনূরের ‘স্বপ্নের ঠিকানা’। ‘বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না’র পর বাংলাদেশের ইতিহাসে তখন পর্যন্ত সবচেয়ে ব্যবসাসফল ছবি ছিল সেটি। ‘এইদিন সেইদিন কোনদিন’ গানটিও প্রবল জনপ্রিয় হয়। এই ছবিতে অভিনয় করে শাবনূর পান বাচসাস চলচ্চিত্র পুরস্কার, কিন্তু সালমান শাহর কপাল এবারও খোলেনি, সে বছর সেরা অভিনেতার বাচসাস জেতেন ইলিয়াস কাঞ্চন। এই ছবি করতে গিয়ে সালমান দুর্ঘটনার শিকার হন, সেই অ্যাকশন দৃশ্য স্থিরচিত্রে দেখাতে বাধ্য হন পরিচালক।

‘স্বপ্নের ঠিকানা’ দারুণ হিট হওয়ার পরেও ‘আঞ্জুমান’-এ সালমান নায়িকা নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করেন। ‘চাঁদনী’ খ্যাত শাবনাজের সঙ্গে জুটি গড়েন, সেটাও ফ্লপ। পরের ছবি ‘মহামিলন’-এ আবার সালমান-শাবনূর হিট হলে আবারও পরের ছবি ‘আশা ভালোবাসা’য় এক্সপেরিমেন্ট করেন সালমান। এবার হাজির হন দুই নায়িকা নিয়ে। স্ত্রীর ভূমিকায় শাবনাজ আর প্রাক্তন প্রেমিকার ভূমিকায় সাবরিনা। ঘরে বউ রেখে প্রাক্তন স্ত্রীর সঙ্গে প্রেম তখনকার মধ্যবিত্ত দর্শক মেনে নেয়নি, ফলে আবারও ফ্লপ দিয়ে শেষ হয় ১৯৯৫ সাল। এবছরেও মুক্তি পায় তার ৬টি ছবি!

পরের বছর দেশজুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিল, ‘বিচার হবে’ তেমন ব্যবসা করতে পারেনি। কিন্তু এর পরের ছবি দুটোও ফ্লপ হয়। পরপর চার ফ্লপের পর বাংলা সিনেমার চিরায়ত কাহিনি ধনী-গরিবের প্রেম দিয়ে সালমান-শাবনূর জুটি আবার স্ক্রিনে আসেন ‘তোমাকে চাই’ দিয়ে, সাফল্যও জোটে। আর এই ছবি থেকেই শুরু হয় সালমান শাহ-শাবনূরের প্রেমের গুঞ্জন।

সেবছর ১২ জুলাই একই সঙ্গে মুক্তি পায় সালমান-শাবনূর জুটির ‘স্বপ্নের পৃথিবী’ আর মৌসুমী-ওমর সানীর ‘গরীবের রানী’। মৌসুমীর ছবি ফ্লপ, সালমানের ছবি হিট। এই ছবিতেই হলুদ শাড়ি আর ব্লাউজ পরিহিতা বৃষ্টিভেজা শাবনূর আর সালমানের ‘বৃষ্টিরে বৃষ্টি আয়না জোরে, ফিরে যাব না আজকে ঘরে’ দর্শক মাতায়, বাড়ায় প্রেমেরও গুঞ্জন।

গোপনে বিয়েও সেরে ফেলেছেন এমন কথাও ওঠে। ছবি মুক্তির এক সপ্তাহ পর মগবাজারের মিকাডো চাইনিজ রেস্টুরেন্টে সালমান শাহ এক সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে বলেন, ‘শাবনূর আমার ছোট বোনের মতো’! কিন্তু তাতেও রক্ষা হয় না, পারিবারিক সংকট তীব্র হতেই থাকে। শেষ পর্যন্ত সেবছরের ৬ সেপ্টেম্বর ‘আত্মহত্যা’ করেন সালমান শাহ। ‘স্বপ্নের পৃথিবী’ই ছিল তার শেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি। এরপরেই তিনি চলে যান নতুন এক অজানা পৃথিবীতে।

মৃত্যুর এক সপ্তাহ পরেই মুক্তি পায় তার পরের সিনেমা ‘সত্যের মৃত্যু নেই’। এর পোস্টারে ছাপা হয় কয়েদির পোশাক পরা সালমান শাহ ফাঁসির দড়িতে ঝুলছেন। মাত্র এক সপ্তাহ আগে প্রিয় নায়ক সিলিং ফ্যানের সঙ্গে দড়িতে ঝুলন্ত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। তাকে এই পোস্টারে দর্শকের আবেগ আকুল হয়, মুখে মুখে সিনেমার নাম হয়ে যায় ‘সালমান শাহর মৃত্যু নেই!’ সিনেমা হিট। তবে এই ছবিতে শাবনূর ছিলেন না, নায়িকা ছিলেন শাহনাজ।

সালমানের মৃত্যুতে সবচেয়ে বেশি চাপে ছিলেন শাবনূর। ১৮ অক্টোবর মুক্তি পায় এই জুটির সিনেমা ‘জীবন সংসার’। বক্স অফিসে সাফল্য পেয়ে তিনি এবং তার পরবর্তী প্রযোজক পরিচালকেরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন।

তারপর একে একে চলতে থাকে জোড়াতালি, ডামি ইত্যাদি দিয়ে তৈরি ‘মায়ের অধিকার’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’, প্রেম পিয়াসী’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘শুধু তুমি’, ‘আনন্দ অশ্রু’। ১৯৯৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর মুক্তি পায় ‘বুকের ভেতর আগুন’। এটাই তার মুক্তি পাওয়া শেষ ছবি। এই ছবিগুলোয় তার বিকল্প বা ডামি হিসেবে উঠে আসতে থাকেন রিয়াজ, ফেরদৌস, শাকিল খান, সোহেল চৌধুরী, আমিন খান প্রমুখ।

সালমান শাহর মৃত্যুর পর তার মোট নয়টি ছবি মুক্তি পায় যার ছটিতেই জুটি ছিলেন শাবনূর। শাহনাজ, শাবনাজ আর শামা একটি করে ছবিতে জুটি গড়েন তার সঙ্গে। এর মধ্যে নবাগতা শামা ছিলেন ভীষণ সম্ভাবনাময়ী। লন্ডনে বেড়ে ওঠা, ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া সুন্দরী শামা বাংলা চলচ্চিত্রে এসেছিলেন আধুনিকতা আর সম্ভাবনা নিয়ে। কিন্তু দুঃখের বিষয় মাত্র দুটি চলচ্চিত্র করেই ১৯৯৭ সালের ১৮ জুলাই এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়।

মৃত্যুর আগে কিছু কাজ করে গেছিলেন ‘কে অপরাধী’ আর ‘তুমি শুধু তুমি’ ছবির। সেগুলো আবার নতুন করে শুট করা হয় অন্য নায়ক দিয়ে। আর ‘প্রেমের বাজি’ সিনেমার কিছু অংশের কাজ করে গেলেও এটা পরে আর মুক্তি পায়নি। এই তিনটি সিনেমার অব্যবহৃত ফুটেজগুলো কোনোদিন দর্শকের দেখার সুযোগ হয়নি।

তীব্র জনপ্রিয়তা পাওয়া নায়কদের মধ্যে বাংলাদেশে সালমান শাহর ক্যারিয়ারই সবচেয়ে ছোট, মাত্র সাড়ে তিন বছরের। এর মধ্যেই করেছেন ২৭টি ছবি। মৌসুমীর সঙ্গে দারুণ জুটি হওয়ার সুযোগ থাকলেও ব্যক্তিত্বের দ্বন্দ্বে সেটা হয়নি। বদলে জুটি হলো শাবনূরের সঙ্গে। ২৭টির মধ্যে ১৪টিই তার সঙ্গে। জুটিবদ্ধ থাকা আর প্রেম অথবা প্রেমের গুঞ্জনই হয়তো তাকে ঠেলে দিলো মৃত্যুর দিকে। সালমান শাহ এককভাবে যতটা জনপ্রিয় সালমান-শাবনূর জুটি ততটা না। অন্তত রাজ্জাক-কবরী, রাজ্জাক-ববিতা, শাবানা-আলমগীরের মতো না।

সালমান শাহর ক্যারিয়ারটা এত ছোট যে এর মধ্যে কোনো চ্যালেঞ্জ আসার সুযোগই পায়নি। বলা যায় নায়ক হিসেবে দীর্ঘদিন ইন্ডাস্ট্রিতে ফাইট বা স্ট্রাগল করার যে ব্যাপারটা অন্য নায়কদের জীবনে অবশ্যম্ভাবী, সালমান শাহকে তা ছুঁতে পারেনি। দর্শকের কাছে ‘পুরোনো’ হয়ে নতুন নায়কের আগমনধ্বনিতে সংকটে পড়ার যে কষ্ট, সালমান শাহকে তা পেতে হয়নি। বিপুল জনপ্রিয়তার ক্রেজ নিয়েই তিনি বিদায় নিয়েছেন বাংলার সবচেয়ে ফ্যাশন আইকনখ্যাত নায়ক সালমান শাহ।

মজার ব্যাপার হলো এই যে, তার ২৭টি ছবি, এর মধ্যে আছেন ২৩ জন পরিচালক! তার মধ্যে ৬০ দশকের নির্মাতা দিলীপ সোম যেমন আছেন, আছেন তৎকালীন তরুণ নির্মাতা জাকির হোসেন রাজুও। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩টি ছবি করেছেন শিবলী সাদিকের সঙ্গে, শাহ আলম কিরণ আর ছোটকু আহমেদের সঙ্গে দুটি করে। বাকি প্রত্যেকের সঙ্গে একটি করে ছবি।

এমনকি সোহানুর রহমান সোহানের ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ দিয়ে সুপারহিট হলেও পরে আর কোনো ছবিতে সোহান তাকে নেননি অথবা সালমানই করেননি। যে ‘সনম বেওয়াফা’ রিমেকের উদ্দেশে সালমানকে খুঁজে বের করা, সেই ছবিতেও সালমান নেই!

সালমান শাহর খুব ইচ্ছে ছিল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়ার। একাধিক ছবির ব্যাপারে তীব্র আশাবাদীও ছিলেন। কিন্তু এত এত হিট ছবি থাকলেও সালমানের শোকেসে ওঠেনি কোনো জাতীয় পুরস্কার। এমনকি বাচসাস পুরস্কারও পাননি।

মৃত্যুর মাত্র দুদিন আগে গ্রহণ করেছিলেন ওয়াই.ডি.কে পদক। সেই অখ্যাত পদকই তার একমাত্র অর্জন বলা যেত। কিন্তু তারচেয়ে বেশি বলা উচিত যেকোনো পুরস্কার না, মৃত্যুর এত বছর পরেও সালমান শাহ এই বাংলার মানুষের কাছে বেঁচে আছেন ভালোবাসায়। এখনো তিনি বাংলার দর্শকের স্বপ্নের নায়ক, থাকবেন আরও অনেক বছর।

নজরুল সৈয়দ: সংস্কৃতিকর্মী

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]