যেদিন নামাজের ইমাম সমাজের ইমাম হবেন সেইদিন সত্যিকারের মুক্তি মিলবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
সমাজের ফায়সালা মসজিদের মিম্বর থেকে হবে— এমন স্বপ্নের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের ইমাম এবং খতিব সাহেবেরা কারও করুণার পাত্র হবেন এটা আমরা দেখতে চাই না। খতিব-ইমামদের আসল মর্যাদা তাদের হাতে তুলে দিতে হবে।
রোববার (২৩ নভেম্বর) রাজধানীর চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে সম্মিলিত ইমাম-খতিব জাতীয় সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
জামায়াত আমির বলেন, আমরা যখন জীবিত আপনারা (ইমাম-খতিব) ইমামতি করেন আমরা পেছনে দাঁড়িয়ে যাই। আমরা যখন দুনিয়া থেকে বিদায় নিই, তখনও আপনারা (ইমাম-খতিব) আমাদের ইমাম। শুধু ব্যতিক্রম এতোটুকু। জীবিত অবস্থায় আপনাদের পেছনে দাঁড়াই। আর দুনিয়া থেকে চলে গেলে আমাদের লাশটা সামনে রেখে আপনারা দাঁড়ান। আপনারা হায়াতেও ইমাম মউতেও ইমাম। আমরা এদিক থেকে কলিজার ভেতর থেকে আপনাদের প্রতি আজীবন সম্মান দেখাতে চাই।
রাসূলে কারীম (সা.) মহান রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে দায়িত্ব পেয়েই মসজিদ গড়েছিলেন এবং মসজিদকে আল্লাহ তাআালার পছন্দ অনুযায়ী মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন উল্লেখ করে জামায়াত আমির বলেন, তখন আলাদা কোনো ক্যাবিনেট হাউজ ছিল না এবং আলাদা কোনো রাষ্ট্রপতি অথবা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ছিল না। সমস্ত আঞ্জাম দেওয়া হতো মসজিদে নববী থেকে। বিভিন্ন ধর্মের, মতের মানুষ, সারা বিশ্ব থেকে প্রতিনিধি নিয়ে তার কাছে এসেছেন। তিনি তাদের সবার সঙ্গে মিলিত হয়েছেন মসজিদে নববীতে। রাষ্ট্রের সব কর্মকাণ্ডের পরামর্শ আহলে রায়েদের সঙ্গে করেছেন মসজিদে নববীতে। যুগের যতটুকু সময় মসজিদে নববী এবং মসজিদগুলোকে মর্যাদা দিয়ে চলেছে। আর এই মসজিদকেন্দ্রিক যে সমাজটা দুনিয়ার যে অঞ্চলে ছিল সেই সমাজই ছিল বিশ্বের ভালো সমাজ। আর রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু সাল্লাম যে সমাজ মসজিদে নববীকে কেন্দ্র করে গড়ে তুলেছিলেন সেই সমাজ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে তিনি সার্টিফাই করে গিয়েছেন, ‘বিশ্ববাসী তোমরা জেনে রাখ আজ আমি যে সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছি আল্লাহর কিতাবের ভিত্তিতে এই সমাজটাই হচ্ছে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ সমাজ।’ এর আগে এই ধরনের কোনো সমাজ জন্ম নেয়নি। ভবিষ্যতে এ
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, সুতরাং ওই সমাজকে অনুসরণ করে যেই সমাজ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে সেই সমাজ ব্যবস্থায় দুনিয়ায় শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বসবে। নবীজির সমাজকে বাদ দিয়ে মন গড়া কোন মতবাদ তন্ত্র মন্ত্র দিয়ে যে সমাজ গড়া হবে সেই সমাজ আল্লাহর কসম দুনিয়াকে শান্তি এবং সম্মান দুটার কোনোটাই দিতে পারবে না। এটি প্রমাণিত সত্য। দুনিয়ার যে কোন মহাদেশে হোক, দেশে হোক, অঞ্চলে হোক এটি প্রমাণিত সত্য।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশ। এদেশের ৯০ ভাগ মুসলমান আল্লাহর ওপর ঈমান রাখে। আল্লাহর কোরআনকে মানে, নবী করীম (সা.) কে শেষ পয়গম্বর স্বীকার করে। এই দেশে আইন চলবে কোরআনের মতবাদেই ইনশাআল্লাহ। এই জায়গায় যতদিন পর্যন্ত আমাদের দেশ না আসবে, এদেশে আমরা কোনো সত্যিকারের মানবিক সমাজ কায়েম করতে পারবো না।
এদেশে অন্য ধর্মের মানুষ যারা আছে তাদের কী হবে? এমন প্রশ্নের তুলে নিজেই উত্তর দেন জামায়াত আমির। বলেন, কোরআন শুধু মানুষের সম্মানের গ্যারান্টি দেয় নাই। অধিকারের ওয়ারেন্টি দেয় নাই। কোরআন সমস্ত মাখলুকাতের অধিকারের ওয়ারেন্টি দিয়েছে। মানুষ তো অবশ্যই, মদীনায় যেমন সব ধর্মের মানুষ পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা নাগরিক নিরাপত্তা এবং অধিকার ভোগ করেছেন, আল্লাহর দেওয়া আইনের এবং বিধানের ভিত্তিতে আমাদের প্রিয় দেশেও যদি সেই সমাজ ব্যবস্থা কায়েম হয় ইনশাআল্লাহ তাআলা আজিম সেই অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে।
ইমাম-খতিবদের জন্য উত্থাপিত সাত দাবির মধ্যে একটা দাবি-মসজিদ কমিটি ইমাম এবং খতিব সাহেবদের সম্মানের সঙ্গে একমোডেট করতে হবে। এর বিপক্ষে মত দিয়ে তিনি বলেন, আমি এই দাবির সঙ্গে একমত না। মসজিদ কমিটি হবে ইমাম এবং খতিব সাহেবের পরামর্শের ভিত্তিতে। এই কমিটির প্রাণপুরুষ হবেন খতিব কিংবা ইমাম। তাকে বাদ দিয়ে নয়। তাকে সহযোগিতা করার জন্য এই কমিটি হবে।
তিনি বলেন, খতিব এবং ইমাম সাহেবরাও মানুষ। তারাও ভুলের ঊর্ধ্বে নন। ভুল তো হতেই পারে। ভুল যদি হয় এর সমাধান করতে হবে সম্মানজনকভাবে। এই সমাধান এইভাবে নয়। আমার পছন্দ হয়নি, আমি দুপুরবেলা জোহরের নামাজের সময় বলে দিলাম যে উনি কিভাবে ইমাম থাকেন আমি দেখে নেবো। আসরের নামাজের সময় দেখা গেল উনি আর মেহরাবে নাই, আমাদের ইমাম এবং খতিব সাহেবদের জন্য আমরা এমন ফায়সালা চাই না। এমন ফায়সালা বরদাস্ত করবো না। তাদের পূর্ণ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করতে হবে।
জামায়াত আমির বলেন, আপনাদের (ইমাম-খতিব) দাবিগুলা খুব ছোট। কিন্তু এত ছোট জায়গায় পড়ে থাকলে হবে না। আপনাদের এই সমাজের দায়িত্ব নিতে হবে। নামাজের ইমাম যেদিন সমাজের ইমাম হবেন সেইদিন ইনশাআল্লাহ আমরা সত্যিকারের মুক্তি পাব।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র ইমাম মাওলান মুহিব্বুল্লাহিল বাকি আন নদভীর সভাপতিত্বে রোববার দুপুর ২টায় রাজধানীর চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মেলনে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা, মুসলিম জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় অধিকার সংরক্ষণ, ইমাম-খতিবদের সামাজিক নিরাপত্তা, সম্মানজনক ভাতা এবং মসজিদ পরিচালনার আধুনিক নীতিমালা প্রণয়নসহ গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় বিষয়ে একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ উপস্থাপিত হয়।