40871

11/24/2025 ক্ষমতায় গেলে ‘ইনসাফভিত্তিক বাংলাদেশ’ গড়ার অঙ্গীকার তারেক রহমানের

ক্ষমতায় গেলে ‘ইনসাফভিত্তিক বাংলাদেশ’ গড়ার অঙ্গীকার তারেক রহমানের

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৩ নভেম্বর ২০২৫ ২০:০৭

ক্ষমতায় গেলে মহানবীর আদর্শ অনুসরণে ‘ইনসাফভিত্তিক বাংলাদেশ’ গড়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

তিনি বলেন, আইয়ামে জাহেলিয়ার সময়ে আমাদের মহানবী (সা.) কে যারা অপছন্দ করতো তারাও মহানবীকে ন্যায়পরায়ণ হিসেবে মানতো এবং বিশ্বাস করত। মহানবীর ন্যায়পরায়ণতা নিয়ে মুসলমান-অমুসলমান বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী কারও মধ্যেই কোনো সংশয় ছিল না। মহানবীর সেই ন্যায় পরায়ণতার আদর্শ সমুন্নত রেখে রাষ্ট্র এবং সরকার পরিচালনায় বিএনপির মূলমন্ত্র হবে ইনশাআল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা।

রোববার (২৩ নভেম্বর) জাতীয় ইমাম খতিব সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে সম্মিলিত ইমাম খতিব পরিষদের উদ্যোগে জাতীয় ইমাম খতিব সম্মেলন-২০২৪ সম্মেলন হয়। এই সম্মেলন কমিটির সদস্য সচিব মুফতি আজহারুল ইসলাম ইমাম খতিবদের ৭ দফা দাবি উপস্থাপন করেন।

তারেক রহমান বলেন, ‘মহানবীর ন্যায় পরায়ণতার আদর্শ উজ্জীবিত একটি ইনসাফভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আগামী নির্বাচনে বিএনপি দেশের সব সম্মানিত ইমাম-খতিব- মুয়াজ্জিন-আলেম-ওলামা-পীর-মাশায়েকদের দোয়া এবং সমর্থন চায়।

তারেক রহমান আরও বলেন, আমি আপনাদের কাছে দোয়া চাই, আমার মায়ের জন্য দোয়া চাই, দলের নেতা-কর্মী-সমর্থক এবং দেশবাসীর জন্য দোয়া চাই।

ইমাম-খতিব-মুয়াজ্জিনদের দাবি অগ্রাধিকার দেওয়া হবে’

তারেক বলেন, ‘‘আপনাদের উপস্থাপিত দাবির বেশ কয়েকটি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পূরণ করার সব রকমের সুযোগ রয়েছে বলে আমি মনে করিআপনারা ইমাম-খতিব-মুয়াজ্জিনদের জন্য সার্ভিস রুল প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেনএই দাবিটি অত্যন্ত যৌক্তিক।”

অনেক মসজিদে মসজিদ কমিটির ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপরে ইমাম মুয়াজ্জিন চাকরি নির্ভর করে বলে উল্লেখ করে বিএনপি শীর্ষ এই নেতা বলেন, আমি মনে করি এটি হওয়া উচিত নয়, এটি হতে পারে না। এটিকে ইমাম মুয়াজ্জিনদের বিরুদ্ধে অন্যায্য আচরণ বলে মনে করি। বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে আপনাদের সার্ভিস রুল প্রণয়নের ব্যাপারে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করবে। উপস্থাপিত অন্যান্য দাবিগুলো বাস্তবায়নের জন্য কার্যকর উদ্যোগও বিএনপি সরকার গ্রহণ করবে।

এ ব্যাপারে ইমাম-খতিবদের একাধিক কমিটি করে প্রতিটি দাবির সুনির্দিষ্ট সুপারিশ বিএনপিকে দেওয়ার আহ্বানও জানান তিনি।

বিএনপির দর্শন’

তারেক রহমান বলেন, ‘‘ইসলামী মূল্যবোধের আলোকে বিএনপি এমন একটি কল্যাণমূলক সমাজ, সরকার এবং রাষ্ট্রব্যবস্থার পক্ষে যে রাষ্ট্র সমাজে মুসলমানরা নিঃসংকোচে কোরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী নিজেদের জীবন পরিচালনা করতে সক্ষম হবেন, নির্ভয়ে নিরাপদে এবাদত বন্দেগি করতে পারবেন। একইভাবে অন্য ধর্মের মানুষও নিরাপদে নিশ্চিন্তে যার যার ধর্ম ও সংস্কৃতি পালন করতে সক্ষম হবে। বিএনপি কখনোই ইসলামের মূলনীতি কিংবা মৌলিক বিশ্বাসের সঙ্গে আপস করেনি, ভবিষ্যতেও করবে না।

তিনি বলেন, পতিত পরাজিত পলাতক স্বৈরাচারের দল যারা স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসে নিজেদের ইচ্ছেমতন সংবিধান রচনা করেছিল, সেই সংবিধানে দেশের অধিকাংশ জনগোষ্ঠীর আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন তখন ঘটেনি। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র পরিচালনা দায়িত্ব পাওয়ার পর সংবিধানেবিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিমঅন্তর্ভুক্ত করেছিলেন, সংবিধানে সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপরে আস্থা এবং বিশ্বাস অন্তর্ভুক্ত করেছেনবর্তমানেসর্বশক্তিমান আল্লাহর উপরে আস্থা এবং বিশ্বাস’ কথাটি এভাবে রাখা হয়নিকেন এভাবে রাখা হয়নি? এই প্রশ্নটি আজ আমি আপনাদের সামনে রেখে গেলাম

বিএনপি বরাবরই ইসলাম এবং মুসলমানদের স্বার্থবিরোধী যেকোন অপতৎপরতার বিরুদ্ধে সোচ্চার উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, পতিত, পরাজিত, পলাতক স্বৈরাচার ইসলাম, মুসলমান এবং ইসলামী সংস্কৃতিকে রাষ্ট্র এবং সমাজে নানাভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টা করেছিল। অনেকেরই নিশ্চয়ই মনে আছে যে, ২০২৪ সালে পবিত্র রমজান মাসে হঠাৎ করে মুসলমানদের ধর্মীয় সংস্কৃতি ইফতার মাহফিল আয়োজনের উপরে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না। এটি ছিল বাংলাদেশের ইসলাম বিরোধী, ইসলামের মূল্যবোধ এবং সংস্কৃতির বিরুদ্ধে সুদূর প্রসারী ষড়যন্ত্রের একটি অংশ। সেই সময় বিএনপি অপতৎপরতার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিল। ২০১৩ সালে রাজধানীর শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের হাজার হাজার নেতা-কর্মী-সমর্থকদের ওপরে হানাদার বাহিনীর মতো ক্র্যাকডাউন চালানো হয়েছিল। গণহত্যার প্রতিবাদে এবং হেফাজতে ইসলামের সমর্থনে বিএনপি সারাদেশে দুইদিন হরতালসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছিল তখন।

ইমাম-খতিবদের বাইরে রেখে টেকসই উন্নয়ন হবে না’

তারেক বলেন, যেকোনো পেশা কিংবা চাকরির ক্ষেত্রে সার্টিফিকেটের গুরুত্ব বিবেচনা করে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ ডিগ্রি দাওরে হাদিস অর্থাৎ তাকমিল সনদকে মাস্টার্স সমমানের স্বীকৃতি দেওয়ার উদ্যোগ ২০০৬ সালে খালেদা জিয়া সরকারের আমলেই নেওয়া হয়েছিল। দেশে বর্তমানে কওমি ও আলিয়া, সরকারি বেসরকারি বা নিবন্ধিত বা অনিবন্ধিত সব মিলিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের ৫০ হাজারেরও বেশি মাদ্রাসা রয়েছে। এসব মাদ্রাসায় লাখ লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন।

তিনি আরও বলেন, দেশের সরকারি কিংবা বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় সারাদেশে সব মিলিয়ে মসজিদের সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন লাখ বা তারও কিছু বেশি হতে পারে। এই মসজিদগুলোতে কম বেশি প্রায় ১৭ লাক ইমাম-খতিব-মুয়াজ্জিন ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করছেনলাখ লাখ মসজিদ মাদ্রাসায় ইমাম মুয়াজ্জিন, মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের রাষ্ট্রীয় অগ্রগতিমূলক কার্যক্রমের বাইরে রেখে দেশ কখনোই টেকসই উন্নয়ন করা সম্ভব নয়এই বাস্তবতা থেকে বিএনপি আগামী দিনের কর্মসূচিতেব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে

ইমাম-খতিবরা সমাজ সংস্কারক’

তারেক রহমান বলেন, ‘‘বিএনপি বিশ্বাস করে সারাদেশে ইমাম-খতিব-মোয়াজ্জিনরা প্রত্যেকেই সমাজ সংস্কারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ। নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আপনারা মানুষের নৈতিক এবং আত্মিক শুদ্ধির জন্য নিজেদের সময় ব্যয় করেছেন বা করছেন। ধর্মীয় মূল্যবোধে উজ্জীবিত একটি নৈতিক সমাজ গঠনের জন্য এটি আপনাদের একটি প্রশংসনীয় অবদান।”

বিএনপি মনে করে সমাজ সংস্কারকের ভূমিকায় বা ভূমিকা পালনকারী ইমাম-খতিব-মুয়াজ্জিনরা যারা আর্থিকভাবে পিছিয়ে রয়েছেন তাদের অবশ্যই প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা প্রদান রাষ্ট্রের দায়িত্ব বলে উল্লেখ করে তারেক রহমান। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে আল্লাহর রহমতে বিএনপির রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের সম্মানী দেওয়ার পরিকল্পনা পর্যায়ক্রমে ইনশাল্লাহ আমরা বাস্তবায়ন করব।

একই সঙ্গে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের আর্থিকভাবে আরো স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে ইমাম মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্টকে শক্তিশালী করে বহুমুখী প্রকল্প গ্রহণ, দুর্যোগ প্রতিরোধে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের সম্পৃক্ত করার বিভিন্ন চিন্তাভাবনা বিএনপির রয়েছে বলে জানান তারেক রহমান।

সম্মিলিত ইমাম খতিব পরিষদের আহ্বায়ক বায়তুল মোকাররম মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি মুহিবুল্লাহির বাকী নদভীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় হেফাজতে মাওলানা জোনায়েদ আল হাবিব, মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজী, মুফতি হাবিবুর রহমান কাশেমী, মুফতি বশির উল্লাহ, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নুর, খেলাফত আন্দোলনের মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী/মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা মনজুরুল ইসলাম আফেন্দী, মুফতি মহিউদ্দিন ইকরাম, নেজামী ইসলাম পার্টি মুফতি মুসা বিন ইজহার, শায়খ আহমদুল্লাহ, মাওলানা মুনির হোসাইন কাশেমী, মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, মাওলানা আবদুল্লাহ বিন আবদুর রাজ্জাক, মাওলানা গোলাম রাব্বানীসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ইমাম-খতিব সাহেরা বক্তব্য রাখেন।

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]