40976

11/26/2025 সব হারিয়ে মানবিক বিপর্যয়ের মুখে কড়াইল বস্তিবাসী

সব হারিয়ে মানবিক বিপর্যয়ের মুখে কড়াইল বস্তিবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৬ নভেম্বর ২০২৫ ১০:৪১

ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে সব হারিয়ে কড়াইল বস্তির হাজারো মানুষ এখন চরম মানবিক বিপর্যয়ের মুখে। মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) সন্ধ্যার দিকে লাগা আগুনের তাণ্ডবে বস্তির দেড় সহস্রাধিক ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। আর তাতে শীত ও ক্ষুধার জ্বালা নিয়ে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাতে বাধ্য হন শিশু ও বৃদ্ধসহ হাজারো মানুষ। বস্তির ধ্বংসস্তূপের আশপাশে ত্রিপল আর ছেঁড়া কাপড় বিছিয়ে কোনোরকমে রাত্রিযাপন করেন অধিকাংশরা।

বুধবার (২৬ নভেম্বর) সকালে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বস্তির বিশাল একটি অংশে এখন পোড়া কাঠ, টিন ও ছাইয়ের স্তূপ। সেখানে এখনো ধোঁয়া উড়ছে। ক্ষতিগ্রস্তরা তাদের পুড়ে যাওয়া ঘরের ধ্বংসস্তূপের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করছেনঅনেকেই আশপাশে ত্রিপল, পলিথিন ও কাপড়-কম্বল বিছিয়ে অস্থায়ী আশ্রয়স্থল তৈরি করেছেন। তবে দুর্গতদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধরাই সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছেন। এদের মধ্যে বহু মানুষ ভিজে যাওয়া কাপড় শুকিয়ে নিচ্ছেন এবং পোড়া মালামালের মধ্যে হাতড়ে বেড়াচ্ছেন কোনো কিছু অবশিষ্ট আছে কি না দেখতে।

ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একদিকে সব হারানোর বেদনা, অন্যদিকে শীত ও খাদ্যের অভাব মিলিয়ে সবাই এখন বিপর্যস্ত।

শাফিয়া বেগম নামের ক্ষতিগ্রস্ত এক নারী বলেন, ‘আমার গতর খাটা টাকা, সব পুড়্যা গেলো। রাইতে না খাইয়াই কাটাইছি। একটা কম্বলও পাই নাই। এই ছাইয়ের গন্ধ আর শীতে সারারাত ঘুমাইতেই পারি নাই। পেটে ক্ষুধা, খাবারও জোটেনি।’

পুড়ে যাওয়ার আগে ঘরের কয়েকটি টিন সরাতে পেরেছিলেন রিকশাচালক আব্দুল করিম। তিনি বলেন, ‘আমার ঘরের কিছুই নাই। বউ-পোলাপান নিয়ে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটলো। কাল থাইক্যা এ পর্যন্ত কেউ একটু খাবার দেয় নাই। সবাই খালি ফটো তুলে কিন্তু দরকারি সাহায্য পাইনি।’

এর আগে মঙ্গলবার বিকেল ৫টা ২২ মিনিটে বস্তির বৌবাজারের একটি ঘর থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়।

ফায়ার সার্ভিস ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘিঞ্জি এলাকা হওয়ায় এবং শুকনো মৌসুমের কারণে আগুন দ্রুত শতাধিক ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের মোট ১৯টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও সরু পথপানির অভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে মারাত্মক বেগ পেতে হয়এলাকার লেক থেকে পাইপ টেনে এনে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা চেষ্টার পর রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইন্টেনেন্স) লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, বিভিন্নভাবে কথা বলে আমরা জানতে পেরেছি আনুমানিক ১৫০০ ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে তদন্তের পর জানা যাবে আসলে কত ঘর-বাড়ি পুড়েছে।

তিনি আরও বলেন, আগুন লাগার ৩৫ মিনিট পর ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছায় তিনটি স্টেশনের ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট, ওই সময় সড়কে অনেক যানজট ছিল। এরপর আরও ইউনিট এলেও বড় গাড়িগুলো ঢুকতে পারেনি সরু রাস্তার কারণে। অনেক সীমাবদ্ধতা নিয়ে কাজ করতে হয়েছে, তবে এখানে পৌঁছানোর আগেই আগুন ডেভেলপ স্টেজে চলে যায়। এ আগুন নিয়ন্ত্রণে একটু বেশি সময় লেগেছে বলেও জানান তিনি।

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]