40991

11/26/2025 মহানবীর (সা.) বিনয় ও সরলতা

মহানবীর (সা.) বিনয় ও সরলতা

ধর্ম ডেস্ক

২৬ নভেম্বর ২০২৫ ১২:৩৩

আমরা প্রত্যেকে কোনো না কোনোভাবে নিজেদেরকে অন্যের চেয়ে উত্তম মনে করি। এ ধারণা থেকেই অহংকার জন্ম নেয়, এই অহংকার আমাদের মনে নেতিবাচক প্রবণতা সৃষ্টি করে।

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) আমাদের জীবনের আদর্শ। অসংখ্য সাহাবি তাকে অনুসরণ করতেন। কিন্তু মহানবী (সা.) কখনো নিজেকে সাহাবিদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ হিসেবে উপস্থাপন করতেন না। আচার-আচরণ ও কথাবার্তায় সবসময় বিনয় ও সরলতা বজায় রাখতেন।

তিনি রাজা-বাদশাহদের মতো আচরণ বা সম্মান পেতে পছন্দ করতেন না। কেউ তাকে দাঁড়িয়ে বা হাঁটু গেড়ে সম্মান জানাবে, তা তিনি পছন্দ করতেন না এবং এভাবে সম্মান জানাতে নিষেধ করতেন। তার ঘর-বাড়ি, জীবনযাপন, পানাহার সবকিছু ছিল একেবারে সাদামাটা।

নবী হওয়া সত্ত্বেও তিনি কখনো প্রভাব-প্রতিপত্তি সম্মান ব্যবহার করে বিলাসী জীবনযাপন করেননি। বরং বিনয় ও সাদাসিধে জীবনই ছিল তার নীতি।

সাহাবিদের কাজে সহযোগিতা

একবার নবীজি (সা.) সাহাবিদের সঙ্গে সফরে ছিলেন। যাত্রাপথে খাবার খাওয়ার জন্য একটি ভেড়া জবাই করতে হবে এবং কাজ ভাগ করে নিতে হবে।

এক সাহাবি বললেন : আমি জবাই করব। অন্যজন বললেন : আমি চামড়া ছাড়াব। তৃতীয়জন বললেন : আমি রান্না করব। নবী করিম (সা.) বললেন :আমি জ্বালানির কাঠ সংগ্রহ করব।

সাহাবিরা বললেন : ইয়া রাসুলাল্লাহ, আপনি কষ্ট করবেন কেন? আমরা সব করে ফেলব।

তিনি বললেন : আমি জানি তোমরা আমার জন্য সব কাজ করতে পারবে; কিন্তু আমি আলাদা সুবিধা ভোগ করা অপছন্দ করি। আল্লাহ তার বান্দাকে অন্যদের চেয়ে পৃথক কোনো বিশেষ সুবিধা পেতে দেখতে পছন্দ করেন না। তারপর তিনি নিজেই কাঠ সংগ্রহ করতে বের হলেন।

গৃহস্থালি কাজে মহানবী (সা.)

নবী মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন আদর্শ স্বামী ও পিতা। একাধিক স্ত্রী থাকার পরও তিনি তাদের সকলের সঙ্গে ন্যায়সঙ্গত আচরণ করতেন। তিনি ঘরের কাজেও সহায়তা করতেন। নিজের জুতা-স্যান্ডেল মেরামত করা থেকে কাপড় সেলাই করা সবই নিজ হাতে করতেন।

নারীদের সঙ্গে মহানবীর (সা.) আচরণ

আবু সাঈদ আল-খুদরি (রা.) বলেন : তিনি পর্দার আড়ালে থাকা কুমারীর চেয়েও বেশি লজ্জাশীল ছিলেন। তিনি কোনো কিছু অপছন্দ করলে আমরা তা তার মুখ থেকেই বুঝে নিতাম। তিনি কারো মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতেন না, বরং দৃষ্টি নত রাখতেন। তার দৃষ্টি সাধারণত মাটির দিকেই থাকত। (সহিহ বুখারি)

দরিদ্রদের প্রতি সহানুভূতি

দরিদ্র-নির্যাতিত মানুষের প্রকৃত অভিভাবক ছিলেন নবীজি (সা.) । তিনি দাস-দাসীদের কখনো কষ্ট দিতেন না, নির্যাতন ও অপমান করতেন না বরং সবাইকে সমান মর্যাদায় দেখতেন।

খাদিজা (রা.) তাকে বিবাহের পর জায়েদ ইবনে হারিসা নামে একজন দাস উপহার দিয়েছিলেন মহানবী (সা.)-কে। মহানবী (সা.) জায়েদকে এত ভালোবাসতেন যে তাকে মুক্ত করে পালকপুত্র বানালেন।পরবর্তীতে জায়েদ (রা.) হয়ে ওঠেন মহানবী (সা.)-এর অন্যতম ঘনিষ্ঠ সাহাবি।

আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, নবী (সা.) বলেছেন : যে ব্যক্তি বিধবা ও দরিদ্রের যত্ন নেয় ও তাদের জন্য কাজ করে, সে আল্লাহর পথে যোদ্ধার মতো, অথবা দিনের বেলায় রোজা রাখে ও রাতভর ইবাদত করে এমন ব্যক্তির মতো। (সহিহ বুখারি)

নবী (সা.)-এর চরিত্র ছিল এমন যে মানুষ তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ইসলাম গ্রহণ করত। তিনি জানতেন দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী আসল আবাস আখিরাততাই তার অনুসরণ করে আমাদেরও ভালো কাজের প্রতি যত্নশীল হতে হবে, যেনো আমরা নিজে সৎ মুসলিম হতে পারি এবং অন্যদের জন্য উত্তম উদাহরণ হয়ে উঠতে পারি

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]