41489

12/06/2025 পাকিস্তানের পারমাণবিক বোতামের নিয়ন্ত্রণ এখন অসীম মুনিরের হাতে

পাকিস্তানের পারমাণবিক বোতামের নিয়ন্ত্রণ এখন অসীম মুনিরের হাতে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৯:২৭

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ নেতৃত্বাধীন সরকার দেশটির সেনাবাহিনীর প্রধান ফিল্ড মার্শাল অসীম মুনিরকে আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তানের প্রথম চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস (সিডিএফ) হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশটিতে নতুন করে তৈরি করা এই প্রভাবশালী পদে তার মেয়াদ হবে পাঁচ বছর। এ নিয়োগের ফলে তিন বাহিনীর সর্বোচ্চ দায়িত্ব এখন মুনিরের হাতে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে দেশটির প্রেসিডেন্টের কার্যালয় বলেছে, অসীম মুনিরকে চিফ অব আর্মি স্টাফ (সিওএএস) ও সিডিএফ হিসেবে সুপারিশ করে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের পাঠানো সারসংক্ষেপে অনুমোদন দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট।

পোস্টে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি ফিল্ড মার্শাল সৈয়দ আসিম মুনিরকে সিওএএস ও সিডিএফ হিসেবে ৫ বছরের জন্য নিয়োগ দিয়েছেন।''

পারমাণবিক অস্ত্রের বোতাম এখন মুনিরের হাতে

সিডিএফ পদটি শুধু সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর ওপর পূর্ণ কর্তৃত্বই নয়, বরং জাতীয় কৌশলগত কমান্ডের ওপরও নজরদারি চালানোর এখতিয়ার দেয়। আর এই কমান্ড পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাপনার দেখভাল করে। ফলে দেশটির সামরিক কাঠামোয় অসীম মুনিরই বর্তমানে সবচেয়ে ক্ষমতাধর কর্মকর্তা।

নতুন পদে অসীম মুনিরকে আইনি সুরক্ষাও দেওয়া হয়েছে। এই পদে আসীন হওয়ায় তিনি দেশটির প্রেসিডেন্টের কাছাকাছি মর্যাদা পাবেন। একই সঙ্গে প্রেসিডেন্টের মতো আজীবন যেকোনও আইনি মামলার হাত থেকে রেহাই পাবেন ফিল্ড মার্শাল অসীম মুনির। তবে এই সুরক্ষা বিমান ও নৌবাহিনীর প্রধানদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।

পাঁচ বছর মেয়াদ শেষে তিনি পুনরায় দায়িত্ব নিতে চাইলে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীকে তা জানাতে হবে। তার বর্তমান ক্ষমতা বিবেচনায় সেটি প্রত্যাখ্যাত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

সংশোধনী অনুযায়ী, দেশটির সামরিক বাহিনীর ওপর বেসামরিক সরকারের নজরদারি ক্ষমতা হ্রাস করা হয়েছে। দেশটির সংবাদমাধ্যম বলছে, এখন থেকে সিডিএফই ভাইস চিফ অব আর্মি স্টাফ (ভিসিওএএস) পদে নিয়োগের সুপারিশ করবেন; যা পরে ফেডারেল সরকার অনুমোদন দেবে। আগে এ নিয়োগের ক্ষমতা পুরোপুরি বেসামরিক সরকারের হাতে ছিল।

পাকিস্তানের সামরিক প্রেক্ষাপট

২৪ কোটি মানুষের পারমাণবিক শক্তিধর দেশ পাকিস্তান ১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বেসামরিক ও সামরিক শাসনের দোলাচলের মধ্যে রয়েছে। দেশটির শেষ সামরিক শাসক ছিলেন পারভেজ মুশাররফ; যিনি ১৯৯৯ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে ২০০৮ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ছিলেন।

এর পর থেকে বেসামরিক সরকার ক্ষমতায় থাকলেও পাকিস্তানের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে সেনাবাহিনীর প্রভাব গভীর হয়েছে। বিশ্লেষকরা দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটির শাসনব্যবস্থাকে ‌‌‘‘হাইব্রিড’’ বলে অভিহিত করেন।

অসীম মুনিরকে অধিক ক্ষমতা দেওয়ার ব্যাপারে দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের আগ্রহ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে জল্পনা চলছিল। গত ২৯ নভেম্বর অসীম মুনিরের সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগের তিন বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার দিনই সরকারের সিডিএফ নিয়োগের ঘোষণা দেওয়ার কথা ছিল।

চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস পদটি গত মাসে সংবিধানের ২৭তম সংশোধনীর মাধ্যমে তৈরি হয়; যার লক্ষ্য সামরিক কমান্ডকে কেন্দ্রীভূত করা। এই পদ তৈরির মাধ্যমে আগের চেয়ারম্যান, জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটি (সিজেসিসি) বাতিল করা হয়েছে।

চলতি বছর ফিল্ড মার্শাল পদে উন্নীত হওয়া অসীম মুনির সিডিএফের দায়িত্বের পাশাপাশি সেনাপ্রধানের দায়িত্বও পালন করবেন; যা তাকে কয়েক দশকের মধ্যে পাকিস্তানের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের একজন করে তুলেছে।

তিনি পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথম কর্মকর্তা যিনি একাধারে ফাইভ-স্টার ফিল্ড মার্শাল, সিওএএস এবং সিডিএফ; শীর্ষ তিনটি পদের কর্তৃত্ব ধরে রেখেছেন। তিনি দেশটির ইতিহাসে দ্বিতীয় ফিল্ড মার্শাল। এর আগে, ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় দেশের নেতৃত্ব দেওয়ায় সামরিক শাসক আইয়ুব খান এই উপাধি পেয়েছিলেন।

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]