41906

12/16/2025 মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে হত্যায় ব্যবহৃত সেই ছুরিও ছিল চুরি করা

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে হত্যায় ব্যবহৃত সেই ছুরিও ছিল চুরি করা

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ২১:০৭

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডে চুরি ধরে ফেলায় মা ও মেয়েকে হত্যায় ব্যবহৃত সুইচ গিয়ারটিও ছিল চুরি করা। এই ঘটনার আগে ঘাতক গৃহকর্মী আয়েশা একইভাবে অন্য একটি বাসা থেকে চাকুটি চুরি করেছিল বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

পুলিশ ও একাধিক সূত্রে জানা যায়, গত ৮ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যবর্তী সময়ে মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের একটি বাসায় কুপিয়ে মা লায়লা আফরোজ (৪৮) ও নবম শ্রেণির ছাত্রী মেয়ে নাফিসা বিনতে আজিজকে (১৫) হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় লায়লার স্বামী আ জ ম আজিজুল ইসলাম বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন।

ঘটনার দুই দিন পর ঝালকাঠির নলছিটি এলাকায় আয়েশার স্বামী জামাল শিকদার ওরফে রাব্বি শিকদারের দাদাবাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। পরবর্তীতে আদালতে তোলা হলে গৃহকর্মী আয়েশার ৬ দিন ও তার স্বামী রাব্বি শিকদারের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে হত্যার ঘটনায় সেই গৃহকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা

রিমান্ড শেষে চাঞ্চল্যকর এই হত্যা-পরবর্তী সময়ে নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে আয়েশা। অপরদিকে আদালতে রাব্বি দাবি করেছে, সে জানত তার স্ত্রী আয়েশা সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্মচারী। কিন্তু মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যার পর রাব্বি প্রথমবার জানতে পারে, তার স্ত্রী গৃহকর্মীর কাজ করে।

আদালতে রাব্বি আরও বলেছে, রাব্বি পেশায় একজন নিরাপত্তাকর্মী। সে হেমায়েতপুর এলাকায় রাত্রিকালীন নিরাপত্তার কাজ করত এবং দিনে ঘুমাত। পাশাপাশি, স্ত্রী বাইরে কাজ করায় দুই বছরের সন্তানকে দেখাশোনা করত। মোহাম্মদপুরের লায়লা আফরোজ ও তার মেয়ে নাফিসাকে হত্যার দিনে সে ফেসবুকের মাধ্যমে ঘটনাটি দেখেছে। কিন্তু এ ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর তার স্ত্রী জড়িত এটা জেনেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন রাব্বি। মা ও মেয়েকে ছুরিকাঘাতে হত্যার সময়ে ধস্তাধস্তিতে স্ত্রী আয়েশার হাত কেটে যায়। কাটা হাত নিয়ে বাসায় যাওয়ার পর ঘটনার বিস্তারিত জেনে প্রথমে তার হাতের চিকিৎসা করান রাব্বি। পরবর্তী সময়ে স্ত্রীকে নিয়ে সদরঘাট চলে আসেন। এই এলাকায় এসে স্ত্রী আয়েশার চুরি করে আনা একটি ল্যাপটপ পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন। পরে সদরঘাট থেকে লঞ্চে করে বরিশাল যান। সেখান থেকে ঝালকাঠির নলছিটি এলাকায় দাদাবাড়িতে গিয়ে আত্মগোপন করেন।

মা ও মেয়েকে হত্যায় জড়িত ঘাতক আয়েশা ৬ দিনের রিমান্ডে পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) রিমান্ডের চতুর্থ দিন চলছে।

মোহাম্মদপুর থানার একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রিমান্ডে থাকা আয়েশা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেনদুটি জীবন কেড়ে নেওয়ার ঘটনায় আয়েশা এখন অনুশোচনায় ভুগছেনতিনি ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করছেন নারিমান্ড চলাকালে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকায় তাকে বাড়তি নজরদারিতে রাখা হয়েছে

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে কুপিয়ে হত্যা, গৃহকর্মী পলাতক

গৃহকর্মীর জোড়া হত্যায় ব্যবহৃত অত্যাধুনিক ধারালো সুইচ গিয়ারটির উৎস সম্পর্কে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, এই সুইচ গিয়ারটিও চুরি করা। মোহাম্মদপুরের হুমায়ুন রোডে একটি বাসায় একই কায়দায় কাজ নেয় আয়েশা। পরবর্তী সময়ে সেই বাসায় এই চাকুটি পায় সে। পরে এই চাকু ব্যবহার করে ওই বাসার আলমারির তালা ভেঙে ২০ হাজার টাকা চুরি করে। এই ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবার থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশ তাকে আটক করে।

পরবর্তী সময়ে চুরি করা টাকা ফেরত দিয়ে সে যাত্রায় রক্ষা পায় আয়েশা। যদিও সুইচ গিয়ারটি নিজের কাছে রেখে দেয়, যা দিয়ে মা ও মেয়েকে নির্মমভাবে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন তিনি।

গৃহকর্মীর আড়ালে পেশাদার চোর আয়েশা

মোহাম্মদপুর থানা সূত্রে জানা গেছে, আয়েশা গৃহকর্মীর আড়ালে পেশাদার চোর। বিভিন্ন বাসায় কাজ নিয়ে প্রবেশ করে চুরি করত। ২০২৪ সাল থেকে গত ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত অন্তত পাঁচটি বাসায় চুরি করেছে। এমনকি তার বোনের বাসা থেকেও নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার চুরি করেছে। এতোগুলো ঘটনার মধ্যে মোহাম্মদপুর থানায় একবার সে আটক হয়েছিল।

আয়েশা ও রাব্বির পরিবার সাভারে থাকলেও চুরির সুবিধার্থে আয়েশা জেনেভা ক্যাম্পে ভাড়া থাকত।

ক্যাম্প সূত্রে জানা গেছে, জেনেভা ক্যাম্পের ৭ নম্বর ব্লকের একটি বাসায় ভাড়া থাকা অবস্থায় চুরি করে ধরা খায় আয়েশা। সেই বাসা থেকেও তাকে মারধর করে বের করে দেওয়া হয়েছিল।

যা জানালেন তদন্ত কর্মকর্তা

আলোচিত এ জোড়া খুনের মামলা তদন্ত করছেন মোহাম্মদপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শহিদুল ওসমান মাসুম। বাসা থেকে চুরি যাওয়া মালামাল উদ্ধারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনার দিন বাসা থেকে দুটি ল্যাপটপ, একটি স্মার্টফোন ও একটি বাটন ফোন চুরি হয়। এছাড়া এক জোড়া চুড়ি ও একটি গলার চেইন গায়েব হয়। হত্যার পরে নিহত নাফিসার স্কুল ড্রেস পরে ও ব্যাগ নিয়ে আয়েশা বের হয়ে যায়। ঘটনা জানাজানি হলে আয়েশার স্বামী মোবাইল, নাফিসার স্কুল ড্রেস ও বোরকা ব্যাগ ভর্তি করে নদীতে ফেলে দেন, তাই উদ্ধার সম্ভব হয়নি।

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা : গৃহকর্মী ৬ দিন, স্বামী ৩ দিনের রিমান্ডে

তিনি আরও বলেন, সদরঘাট এলাকায় বিক্রি করে দেওয়া ল্যাপটপটি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। এর আগে গ্রেপ্তার অভিযানে তাদের কাছ থেকে এক জোড়া চুড়ি ও চেইন উদ্ধার করে জব্দ করা হয়েছে।

এদিকে মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যার ঘটনাটি শুরু থেকেই ক্লুলেস ছিল। যদিও পরে চাঞ্চল্যকর মা-মেয়ে হত্যার রহস্য উদঘাটন হয়েছে। এই ঘটনায় রাব্বি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। রিমান্ডে থাকা প্রধান আসামি আয়েশা প্রাথমিকভাবে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। আশা করি সে আদালতে এই একই জবানবন্দি দেবে।

এসআই আরও জানান, ২০১৭ সালে আয়েশা নিজের গায়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। তখনও সে হেমায়েতপুর এলাকায় থাকত।

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]