6749

05/01/2024 সমন্বিত উদ্যোগের অভাবে অনিশ্চিত ৯ পণ্যের দাম নির্ধারণ

সমন্বিত উদ্যোগের অভাবে অনিশ্চিত ৯ পণ্যের দাম নির্ধারণ

ডেস্ক রিপোর্ট

১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২৩:০১

অত্যাবশ্যকীয় ভোগ্যপণ্য চাল, ডাল ও আটার দাম নির্ধারণের বিষয়টি আমলাতান্ত্রিক জটিলতার মুখে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো ‘সমন্বিত উদ্যোগ’ গ্রহণে ব্যর্থ হলে দীর্ঘদিনের জন্য ঝুলে যেতে পারে নয়াপণ্যের দাম নির্ধারণের বিষয়টি। এতে করে অসাধু ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়াতে নতুন কারসাজির সুযোগ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গত কয়েক বছর ধরে দেশে ভোগ্যপণ্যের বাজারে অতিরিক্ত মুনাফাখোর সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। এদের কাছে ভোক্তারা জিম্মি হয়ে পড়ছেন। এ কারণে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয়-এমন সব পণ্যের দাম নির্ধারণের বিষয়টি জরুরী বলে মনে করছে সরকার। কিন্তু নানা ধরনের জটিলতা বিশেষ করে একে অন্যের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে দাম নির্ধারণের বিষয়টি থেকে সরে আসা হচ্ছে। এ ছাড়া অভিযোগ উঠেছে পণ্যের দাম নির্ধারণের উদ্যোগ ব্যর্থ করতে অসাধু ব্যবসায়ীরাও সক্রিয় রয়েছে।

জানা গেছে, নয় পণ্যের দাম নির্ধারণের বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের আপত্তি রয়েছে। এতে করে ব্যবসায়ীরা চাপের মুখে পড়তে পারে- এ ধরনের আশঙ্কা করছে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)। সংগঠনটি মনে করছে, মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে কোন পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। চাহিদা ও জোগানের ওপর পণ্যের দাম নির্ধারিত হয়ে থাকে।

এ কারণে আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য, ঋণপত্র খোলা, আমদানি ব্যয়, কাস্টমস ও বন্দর চার্জ, উৎপাদন ব্যয় এবং সর্বশেষ ভোক্তা পর্যন্ত একটি পণ্য পৌঁছাতে কি পরিমাণ খরচ হয় সেটির তথ্য চেয়ে বাণিজ্য সংগঠনগুলোকে চিঠি দেয় বাংলাদেশ ট্রেড এ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি)। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোন তথ্য সরবরাহ করেনি খাতভিত্তিক ব্যবসায়ীরা।

কোন কোন সংগঠন আংশিক তথ্য দিয়ে দায়মুক্ত হয়েছে। অন্যদিকে চাল, ডাল, আটা, ময়দা, পেঁয়াজ ও রড-সিমেন্টের ব্যবসায়ীরা পৃথকভাবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দফতরে যোগাযোগ করে দাম নির্ধারণের বিষয়টি নিয়ে তাদের আপত্তির কথা মৌখিকভাবে জানিয়ে দিয়েছে।

এ ছাড়া দাম নির্ধারণের বিষয়টি নিয়ে ইতোপূর্বে সমালোচনা করেছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। ফলে সবদিক বিবেচনায় নিয়ে এককভাবে দাম নির্ধারণের বিষয়টি থেকে সরে আসছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর প্রেসক্লাবে ওভারসিজ করেসপনডেন্ট এ্যাসোসিয়েশন (ওকাব) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানান, দাম বেঁধে দেয়ার ঘোষণা আসতে হবে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে।

শুধু তাই নয়, কৃষি মন্ত্রণালয় ইতিবাচক হলে দাম নিয়ন্ত্রণ ও সরবরাহ বাড়াতে ডিম আমদানি করা হবে। দাম নির্ধারণ হবে আলোচনার মাধ্যমে। তিনি বলেন, ভারত থেকে ডিম আমদানি করে কম মূল্যে ভোক্তাদের দেয়ার পক্ষে আমি। কৃষি মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন পণ্যের দাম নির্ধারণ বিষয়ে কাগজ পাঠাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সমন্বিত উদ্যোগে দাম নির্ধারণের বিষয়টি নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।

জানা গেছে, ব্যবসায়ীদের অসহযোগিতা ও তথ্য ঘাটতির মুখে নয় পণ্যের দাম নির্ধারণ সংক্রান্ত প্রতিবেদন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দাখিল করতে পারেনি বিটিটিসি। তবে সম্প্রতি বিটিটিসি পণ্যমূল্য নিয়ে করা অন্য একটি প্রতিবেদনে বলছে, ভোজ্যতেল ও চিনির দাম আরও কমানো সম্ভব।

এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে দেশে অপেক্ষাকৃত অনেক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে চাল, ডাল, আটা, ময়দা, পেঁয়াজ, রড ও সিমেন্ট। যদিও বাজারে এখন নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে চিনি ও ভোজ্যতেল। প্রতিকেজি খোলা চিনি ৭৪ এবং প্যাকেট চিনির নির্ধারিত মূল্য হচ্ছে ৭৫ টাকা। কিন্তু বাজারে এখন এই দামে চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৯০-৯৫ টাকায়। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে দাম আরও বাড়বে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।

একইভাবে ভোজ্যতেলও নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজার পর্যবেক্ষণ ও আমদানি মূল্য বিবেচনায় নিয়ে এই দুটো পণ্যের দাম আরও কমতে পারে বলে মনে করছে বিটিটিসি।

এ ছাড়া দেশের বাজারে চিনির দাম এক বছরে বেড়েছে ১৫ শতাংশ। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত চিনির দাম কমেছে প্রায় ১১ শতাংশ। একইভাবে এক বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে মসুর ডালের দাম কমেছে প্রায় ১৪ শতাংশ। অথচ দেশের বাজারে তা বেড়েছে মান ভেদে ২৯ থেকে ৩৯ শতাংশ।

এমএস রডেরও একই অবস্থা। এক বছরে স্টিল স্ক্র্যাপের দাম কমেছে ১৪ শতাংশ। দেশের বাজারে ৬০ গ্রেডের রড ১৫ শতাংশ এবং ৪০ গ্রেডের রড ১৬ শতাংশ বেড়েছে। এ ছাড়া সিমেন্টের দাম বেড়েছে এক বছরে ৩১ শতাংশ।

উল্লেখ্য, আড়াই সপ্তাহ আগে নয়টি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেঁধে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। এখন সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন তিনি। গত ৩০ আগস্ট বাণিজ্যমন্ত্রী চাল, গম (আটা- ময়দা) ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, চিনি, মসুর ডাল, রড ও সিমেন্টের দাম বেঁধে দেয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন।

১৫ দিনের মধ্যে তা কার্যকরের কথাও বলেন তিনি। সে হিসেবে সে সময় দুদিন আগে পেরিয়ে গেছে। সর্বশেষ বাণিজ্যমন্ত্রী আরও সাত দিন সময় চেয়েছিলেন। তবে এখন আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে গিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এ সংক্রান্ত একটি চিঠি কৃষি মন্ত্রণালয়কে দেয়া হবে। প্রয়োজন হলে তারাই দাম নির্ধারণ করবে।

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]