9626

03/29/2024 ফ্রান্সে বিক্ষোভ: পুলিশের পিটুনিতে অণ্ডকোষ হারালেন যুবক

ফ্রান্সে বিক্ষোভ: পুলিশের পিটুনিতে অণ্ডকোষ হারালেন যুবক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

২৪ জানুয়ারী ২০২৩ ০৬:৪৬

পেনশন পেনশন সংস্কারে সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় বিক্ষোভে পুলিশের মারধরের শিকার হয়ে ইভান এস নামের ওই যুবক

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে পেনশন সংস্কারে সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় চলমান বিক্ষোভে পুলিশের মারধরের শিকার হয়ে নিজের অণ্ডকোষ হারিয়েছেন এক যুবক। ২৬ বছর বয়সী ওই যুবক বলেছেন, পুলিশের একজন কর্মকর্তা এমনভাবে তাকে আঘাত করেছেন যে, তার একটি অণ্ডকোষ কেটে ফেলতে হয়েছে।

ফরাসি গণমাধ্যমের খবরে ওই যুবকের নাম ইভান এস বলে জানানো হয়েছে। সোমবার ব্রিটিশ দৈনিক দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট বলেছে, এই ঘটনায় ওই যুবক প্যারিস পুলিশের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগ দায়ের করেছেন।

আর ফ্রান্সের দৈনিক লিবারেশন বলছে, ফরাসি একটি বড় কোম্পানিতে প্রকৌশলী হিসাবে কর্মরত রয়েছেন ইভান। গত সপ্তাহে প্যারিসে সরকারের পেনশন সংস্কারের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া বিক্ষোভ-প্রতিবাদে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। ওই দিন প্রায় ১০ লাখ মানুষ ফ্রান্সজুড়ে সরকারের পেনশন সংস্কারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন।

এরমধ্যে অন্তত ৮০ হাজার মানুষ কেবল প্যারিসের বিক্ষোভে অংশ নেন। তারা চাকরি থেকে অবসরের বয়সসীমা দুই বছর বাড়িয়ে ৬৪ করার সরকারি পরিকল্পনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন।

ইভান বলেন, ‘আমি ইতোমধ্যে কয়েকবার বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিলাম। আমার ৬০ বছর বয়সী খালাও এই বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করেছিলেন।’

ফরাসি অপর একটি দৈনিককে ইভান বলেছেন, পুলিশের হাতে নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, এমন প্রথম ব্যক্তি কেবল তিনিই নন। এর আগেও অনেকেই পুলিশের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এটা থামানোর জন্যই আমি পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করতে বাধ্য হয়েছি।

তিনি বলেন, প্যারিসে বিক্ষোভের দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণের সময় পুলিশের এক কর্মকর্তা তাকে ধাক্কা মেরে মাটিতে ফেলে দেন। মাটিতে পড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্য এক পুলিশ কর্মকর্তা চড়াও হন এবং লাঠি দিয়ে তার অণ্ডকোষে আঘাত করেন।

অন্যান্য বিক্ষোভকারীদের ধারণ করা এই ঘটনার একটি ভিডিও দেশটির বিভিন্ন টেলিভিশনে প্রচার করা হয়। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ভিডিও মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। ফ্রান্সের পুলিশের বিরুদ্ধে অতীতেও অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগে উঠেছিল। তবে এবারের এই ঘটনা দেশটির জনগণের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি করেছে।

প্যারিস পুলিশ প্রধান লরেন্ট নুনেজ ওই ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। ভুক্তভোগী প্রকৌশলী ইভানের আইনজীবী লুসি সিমন বলেছেন, তিনি পুলিশের ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছায় সহিংসতা চালানোর দায়ে একটি অভিযোগ দায়ের করছেন। জনগণের কর্তৃত্বে নিযুক্ত একজন কর্মী ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাষ্ট্রের নাগরিকের অঙ্গহানি করেছেন।

বিক্ষোভের দৃশ্য ধারণের সময় পুলিশের এক কর্মকর্তা তাকে ধাক্কা মেরে মাটিতে ফেলে দেন এবং অন্য এক পুলিশ লাঠি দিয়ে তার অণ্ডকোষে আঘাত করেন।

‘আঘাত এতটাই শক্তিশালী ছিল যে তার একটি অণ্ডকোষ কেটে ফেলতে হয়েছে। এটি পুলিশের ওই কর্মকর্তার আত্মরক্ষার ক্ষেত্রে ঘটেনি। আমাদের কাছে থাকা ছবিতে তার প্রমাণ আছে এবং তখন তাকে (ইভান) গ্রেপ্তারও করা হয়নি।’

ফরাসি সরকারের মুখপাত্র ওলিভার ভেরান দেশটির টেলিভিশন চ্যানেল বিএমএফ টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি পুলিশ বা বিচারিক ব্যবস্থার অংশ নন, তবে অবশ্যই ‘ওই ব্যক্তির প্রতি আমার পরিষ্কার সমবেদনা’ রয়েছে।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ২০১৭ সালে যখন এলিসি প্রাসাদে প্রবেশ করেন তখন পেনশন ব্যবস্থা মোটাদাগে ঢেলে সাজানো হবে বলে অঙ্গীকার করেছিলেন। তার নির্বাচনী প্রচারণার সংস্কারবাদী ইশতেহারের কেন্দ্রীয় ভিত ছিল এই প্রতিশ্রুতি। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারির প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় হিমশিম খাওয়ায় ২০২০ সালে নেওয়া ম্যাক্রোঁর প্রথম সংস্কার প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত বাতিল হয়ে যায়।

দীর্ঘদিন পর সম্প্রতি দেশটিতে অবসরের বয়সসীমা ২ বছর বাড়িয়ে ৬৪ করার পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়। ফরাসি সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দেশটির হাজার হাজার নাগরিক প্রতিবাদ করছেন। গত সপ্তাহে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ফ্রান্সজুড়ে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করেছেন। বিক্ষোভের জেরে দ্রুতগতির ট্রেনসেবা বন্ধ এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হয়।

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]