মঙ্গলবার, ২৩শে এপ্রিল ২০২৪, ১০ই বৈশাখ ১৪৩১


ভাতার টাকা আত্মসাৎ, সমাজসেবা অফিসে তদন্ত কমিটি


প্রকাশিত:
৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২০:৫৪

আপডেট:
২৩ এপ্রিল ২০২৪ ১৫:৪৪

ছবি সংগৃহিত

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর প্রায় আড়াই কোটি টাকা গায়েবের কোনো সন্ধান মেলেনি। এ বিষয়ে ভুক্তভোগীদের প্রেরিত অভিযোগ সংবাদপত্রে প্রকাশিত হবার পর কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে সমাধানের আশ্বাস দিলেও শুধুমাত্র অভিযোগকারী কিছু ভাতাভোগী কয়েকজনকে সাড়ে ৪ হাজার টাকার স্থলে ১ হাজার করে টাকা দিয়ে অজ্ঞাত কারণে সিংহভাগ ভাতাভোগীদের বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়।

এদিকে বিগত সালে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকের এনফোর্সমেন্ট কমিটিকর্তৃক গৃহীত অভিযোগ তদন্তকালে এই দুর্নীতির হোতা উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তাকে সতর্ক করা হয়েছিল। পরে গত সপ্তাহে ভুক্তভোগীরা ঘটনার সুরাহা চেয়ে জাতীয় প্রেসক্লাব ও গণভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।

অবস্থানকালে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশ্বাসে তারা নিজ উপজেলায় ফিরে আসেন। তারই ধারাবাহিকতায় রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) উপজেলা সমাজসেবা অফিসে সরেজমিনে তদন্তে আসেন সামজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দেবব্রত দাস, সামজসেবা অধিদপ্তরের সমাজসেবা অফিসার রায়হান কবীর ও বিভাগীয় সমাজসেবা কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক সমির মল্লিক।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ২০২০ থেকে ২০২১ অর্থবছরে উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে নতুন করে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধি ও দলিত হরিজন ভাতা প্রাপ্ত হিসাবে নিবন্ধিত হন। এজন্য ২০২১ সালের জুন মাসে তাদের মোবাইল ব্যাংকে সরাসরি টাকা প্রেরণের জন্য এমআইএস সম্পন্ন হয়। কিন্তু নিবন্ধিত হওয়ার পর থেকে কেউ তিন মাস কেউ ছয় মাস কেও আবার এক বছরের ভাতা পায়নি তাদের দেয়া মোবাইল নম্বরে।

এ ব্যাপারে ভুক্তভোগীরা সমাজসেবা অফিসে খোঁজ নিলে জানানো হয় তাদের টাকা অন্য নাম্বারে চলে গেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সেসময় নতুন ভাতাভোগীদের এমআইএস সম্পন্ন করেছিল সমাজসেবা কর্মকর্তা আতাউর রহমান। তার কার্যালয়ের সুপারভাইজার তরিকুল ইসলাম, মশিউর রহমান এবং স্থানীয় সংসদ সদস্যের নিয়োগকৃত প্রতিনিধি টিপু নেওয়াজ।

ভাতাভোগীরা অভিযোগ করে বলেন, সমাজসেবা অফিসের অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারী ও সংসদ সদস্যের নিয়োগকৃত প্রতিনিধি টিপু নেওয়াজের যোগসাজেসে আমাদের মোবাইল নাম্বার আপলোড না করে তাদের নিয়ন্ত্রিত মোবাইল নাম্বার আপলোড করে টাকা তুলে নিয়েছেন।

হোগলবাড়িয়া ইউপির চরদিয়াড় গ্রামের ভাতাভোগী ৮০ বছরের বৃদ্ধ হোসেন মন্ডল, ইন্তাদুল, মাজু ও রাহেদ ঘোষ, প্রতিবন্ধী শাকিল ও মাহাতাব বলেন, এমআইএস সিস্টেম হবার পর তারাসহ এই ইউনিয়নের প্রায় ৭ শতাধিক ভাতাভোগী ঠিকভাবে টাকা পাননি।

উল্লেখ্য যে, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আতাউর রহমান দৌলতপুর আসনের সাংসদ সরওয়ার জাহান বাদশার নিয়োগকৃত প্রতিনিধি টিপু নেওয়াজের আত্মীয় হিসাবে এমপি সাহেবের তদবিরে তিনি সমাজসেবা অধিদপ্তরের গত ৭ জানুয়ারি ২০২১ সালে দৌলতপুরে বদলি হয়ে আসেন।

এ ব্যাপারে সংসদ সদস্য সরওয়ার জাহান বাদশার সেল ফোনে বারবার কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

সংসদ সদস্যের প্রতিনিধি টিপু নেওয়াজের নিকট জানতে চাওয়া হলে এমপি সাহেবের প্রতিনিধি হিসেবে ভাতাভোগীদের সহায়তা করেন শুধু, তা ব্যতীত অন্য কিছু জানেন না বলে জানান তিনি। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আতাউর রহমানের কাছে জানতে চাইলে টিপু নেওয়াজ তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন। তিনি আরও বলেন, আমি রাজনৈতিক গেমের বলি।

জানা গেছে, ঘটনায় ২০২১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে ভুক্তভোগীরা অনশন করেন। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বিধবা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের ভাতা দেওয়া হচ্ছে। তবে সুবিধাভোগীরা জানেন না তাদের টাকা কোন নম্বরে যাচ্ছে। এসব টাকা পৌঁছে দেওয়ার জন্য তাদের বিপরীতে যে নগদ অ্যাকাউন্ট নম্বর দেওয়া হয়েছে, সেখানে কারও নম্বর ভুল, কারও নম্বর থাকলেও ওই নম্বর কার তা জানেন না ভাতাভোগীরা। এ কারণে সঠিকভাবে ভাতাভোগীরা তাদের প্রাপ্য পাচ্ছেন না। অনেক নম্বর বন্ধ থাকায় টাকা কে নিয়েছেন তাও জানা যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মুরাদ হোসেন বলেন, এই ঘটনায় আমরা একাধিকবার তদন্ত করেছি। শুধু আমারই না, সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারাও বিষয়টি তদন্ত করে দেখেছেন। আমরা তদন্ত করে যেটি পেয়েছি, সেটি হলো- সমাজসেবা অফিস থেকে সবাইকে টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভাতাভোগীরা যেই অ্যাকাউন্ট নম্বর দিয়েছে, সমাজসেবা অফিস সেই নম্বরেই টাকা পাঠিয়েছে। তারা হয়তো তাদের পরিচিত জনের, নিজেদের লোকের অথবা দোকানের নম্বর দিয়েছিল। ওই টাকা হয়তো তারা তাদেরকে দেয়নি। সমাজসেবা অফিস ঠিকই টাকা পাঠিয়েছে, সবাই টাকা পেয়েছে, সব নম্বরেই টাকা পাঠানো হয়েছে। সমাজসেবা অফিসের কেউ দুর্নীতি করেনি।

এ ব্যাপারে প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা সমাজসেবা অধিদপ্তর ঢাকার উপ-পরিচালক দেবব্রত দাস তদন্তের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top