রবিবার, ১৯শে মে ২০২৪, ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


পরীক্ষামূলক শৈবাল চাষে সাফল্য, রপ্তানিতে সম্ভাবনার দুয়ার


প্রকাশিত:
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২৩:৫৮

আপডেট:
১৯ মে ২০২৪ ০০:৫৬

ছবি সংগৃহিত

বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়েছে সামুদ্রিক শৈবালের চাহিদা। সামুদ্রিক শৈবাল থেকে পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য, ঔষধি পণ্য, প্রসাধনী ও পরিবেশ দূষণরোধক পণ্য উৎপাদন করা যায়। বর্তমানে এই জলজ উদ্ভিদটির বৈশ্বিক চাহিদা ২৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন। যার বাজারমূল্য ৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার।

অর্থনীতিতে এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে দেশে বাণিজ্যিকভাবে শৈবাল চাষ করে আয়ের নতুন পথ সৃষ্টির চেষ্টা করছে সরকার। এর মধ্যে কক্সবাজারের উখিয়ার রেজু খালে পরীক্ষামূলক শৈবাল চাষে সাফল্য এসেছে। এ সাফল্যের পর শৈবাল চাষের পরিসর বৃদ্ধি করে চীনসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করতে চায় বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ অ্যাসোসিয়েশন।

কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের উখিয়ার রেজু খালে শৈবালের পরীক্ষামূলক চাষ হচ্ছে বাংলাদেশে মেরিন ফিশারিজ অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে। এতে অর্থায়ন করছে বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল। আর কারিগরি সহযোগিতা দিচ্ছে বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উখিয়া রেজু খালে দুই পদ্ধতিতে চাষ হচ্ছে সামুদ্রিক শৈবাল। নেট পদ্ধতিতে বাঁশের সঙ্গে জাল বাঁধা আর লাইন পদ্ধতিতে বাঁশের সঙ্গে রশি টানানো হয়। রশি বা জালের সঙ্গে শৈবালের বীজ বেঁধে নোনা পানির নিচে ডুবিয়ে রাখা হয়। এর ১৫ দিন পরপর ৫ বর্গমিটার আয়তনের একটি প্লটে ১৫ থেকে ১৮ কেজি শৈবাল উৎপাদিত হচ্ছে বলে জানান চাষিরা।

শৈবাল চাষ প্রকল্পের পরিচালক শিমুল ভূঁইয়া বলেন, শৈবাল চাষে খরচ কম কিন্তু আয় অনেক বেশি, যা বিপুলসংখ্যক লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারে। স্থানীয় জনগণকে উৎসাহিত করে প্রশিক্ষণ করা গেলে দেশের ৭১০ কিলোমিটার সমুদ্রসৈকত ও ২৫ হাজার বর্গকিলোমিটার উপকূলীয় এলাকায় সামুদ্রিক শৈবালের চাষ সম্ভব। রপ্তানি করা যাবে বিদেশেও।

তিনি আরও বলেন, শুধু রেজু খাল নয়, দেশের সমুদ্র উপকূলে ধীরে ধীরে বাড়ছে শৈবালের চাষ। দেশের দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে স্থানীয় কিছু বাসিন্দা শৈবাল চাষের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। বর্তমানে কক্সবাজারের টেকনাফে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ, শাহপরীর দ্বীপ ও জালিয়াপাড়া এলাকায় নাফ নদীর তীর, মহেশখালীর সোনাদিয়া এবং কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়াতে শৈবাল চাষ হচ্ছে। এসব চাষি বছরে দুটি প্রজাতির শৈবাল গড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ মণ উৎপাদন করছে। এছাড়া আরও অনেক চাষি রয়েছে, যারা প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত প্রায় এক হাজার থেকে দেড় হাজার মণ শৈবাল সংগ্রহ করছেন। উৎপাদিত এসব শৈবালের অধিকাংশই যাচ্ছে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান অঞ্চলে। সেন্ট মার্টিন দ্বীপ থেকে কিছু শৈবাল যাচ্ছে মিয়ানমারেও।

বাংলাদেশ সমুদ্র ইনস্টিটিউটের তথ্য মতে, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, বাগেরহাটসহ ৭১০ কিলোমিটার সমুদ্রসৈকত ও ২৫ হাজার বর্গকিলোমিটার উপকূলীয় এলাকার বালু, পাথর ও কর্দমাক্ত মাটি শৈবাল চাষের জন্য উপযুক্ত। সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ এলাকায়ও শৈবাল চাষ সম্ভব। সরকারের সমুদ্র অর্থনীতি কার্যক্রমে শৈবালকে সম্ভাবনাময় অর্থনৈতিক ফসল হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এসকে আবিদ হোসেন বলেন, শৈবাল থেকে পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য, ঔষধি পণ্য, প্রসাধনী ও পরিবেশ দূষণরোধক পণ্য উৎপাদন সম্ভব। উপকূলে পরীক্ষামূলক চাষে সাফল্য পাওয়ায় শৈবাল চাষের পরিসর বৃদ্ধি করে চীনসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করতে চাই।

তিনি আরও বলেন, শৈবাল বর্তমানে আমাদের রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবানে স্থানীয় কিছু মানুষ খেয়ে থাকে। আমাদের দেশেও ভোক্তা আছে। তবে সবচেয়ে বেশি ভোক্তা আছে চীনে। আমরা যদি এটিকে শুকনা আকারে পলিব্যাগ করে পাঠাতে পারি তাহলে আমাদের বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের মূল কাজটা হচ্ছে উদ্যোক্তাদের দেখানো যে এটা একটা পণ্য যা বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা সম্ভব।

বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ও সমুদ্রবিজ্ঞানী সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর বলেন, বাণিজ্যিক উৎপাদন ও বাজার সৃষ্টির পাশাপাশি শৈবাল চাষাবাদের সঙ্গে স্থানীয় জনগণকে উৎসাহিত করতে হবে। সারা বিশ্বে সামুদ্রিক শৈবাল সাধারণত খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। প্রসাধন শিল্পে এবং ওষুধ শিল্পে শৈবালের একটা বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা দেখেছি, সামুদ্রিক শৈবাল থেকে এলজিনেট, ক্যারাজিন, এগারএগার এগুলো তৈরি করা যায়। আমাদের ল্যাবরেটরিতেও আমরা এটি শুরু করতে পেরেছি।

সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর আরও বলেন, রেজু খালে আমরা গত ২ বছর ধরে শৈবালের পরীক্ষামূলক চাষ করছি। পাশাপাশি সেন্ট মার্টিন থেকে শুরু করে কুতুবদিয়া পর্যন্ত কোন কোন এলাকায় শৈবালের চাষ করা সম্ভব সে ব্যাপারে আমরা তথ্য সংগ্রহ করছি।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top