১১ বছর পর বাবা-মায়ের কাছে ফিরল কাঞ্চনমালা
প্রকাশিত:
৩১ মার্চ ২০২৩ ০০:৪৪
আপডেট:
৯ মে ২০২৫ ০২:১১

অভাবের তাড়নায় চার মেয়ের বাবা দিনমজুর আলমগীর মন্ডল দ্বিতীয় মেয়ে কাঞ্চনমালাকে ঢাকার আগারগাঁও এলাকার একটি বাসায় কাজের মেয়ে হিসেবে রেখে আসেন ২০১২ সালে। তখন কাঞ্চনমালার বয়স ছিল মাত্র ছয় বছর। কিছু দিন পর সে ওই বাসা থেকে পালিয়ে যায়।
তারপর আর ফেরা হয়নি বাড়িতে। দেখা হয়নি বাবা-মায়ের সঙ্গে। দীর্ঘ ১১ বছর পর কাঞ্চনমালা তার নিজ বাড়ি ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামে ফিরেছে।
কাঞ্চনমালার বাবা আলমগীর মন্ডল বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আমি দিনমজুরি করে সংসার চালাই। অভাবের সংসারে চার মেয়ে। বড় মেয়ে ডায়রিয়ায় মারা যায়। দ্বিতীয় মেয়ে কাঞ্চনমালাকে রাজধানীতে এক বাসায় কাজে দেই। এর সে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। অনেক খুঁজেছি।
এর মধ্যে ১১ বছর পার হয়েছে। না পেয়ে তার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। মানিকগঞ্জের দেওয়ান আবু ইলিয়াস ও সুরাইয়া দেওয়ান তাকে খুঁজে পান। তাদের তিন ছেলের সঙ্গে আমার কাঞ্চনমালা বড় হতে থাতে সেখানে। তারাই আমাদের খুঁজে বের করে যোগাযোগ করেন। বুধবার (২৯ মার্চ) সন্ধ্যায় আমাদের কাছে ফিরেছে কাঞ্চনমালা। আমরা খুব খুশি ।
হরিণাকুন্ডুর বেসরকারি একটি ব্যাংকের এজেন্ট কর্মকর্তা ব্যাংক কর্মকর্তা আসাদুর রহমান বলেন, আমার এক সহকর্মী মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলায় কাজ করেন। কাঞ্চনমালার পালক বাবা-মা ওই সহকর্মীর পরিচিত। তারা মেয়েটির বাড়ি হরিণাকুন্ডু বলে জানান।
পরে তাদের সঙ্গে আমার মোবাইল ফোনে কথা হয়। আমি মেয়েটির কাছে গ্রামের নাম জানতে চাইলে হরিণাকুন্ডেুর বোয়ালমারি ও বোয়ালখালী ছাড়া আর কিছুই বলতে পারছিল না। আমাদের এখানে বোয়ালিয়া নামে একটি গ্রাম আছে। আমি ওই গ্রামে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, আলমগীর মন্ডল নামে এক দিনমজুরের মেয়ে কয়েক বছর আগে ঢাকায় কাজ করতে যায়। পরে সে হারিয়ে যায়। ২৮ মার্চ মেয়েটির বাবা-মাকে মানিকগঞ্জে আনা হয়। মেয়েটি তার বাবা-মাকে চিনতে পারে।
কাঞ্চনমালার পালক মা সুরাইয়া দেওয়ান বলেন, কাঞ্চনমালা মানিকগঞ্জের একটি রাস্তার ধারে বসে কাঁদছিল। আমরা তাকে বুকে তুলে নিই। আমাদের কোনো মেয়ে নেই। আমাদের তিন ছেলে। আমাকে মা বলেই ডাকতো কাঞ্চনমালা। সেই থেকে আমরা কাঞ্চনমালার আসল ঠিকানার খোঁজ করতে থাকি। পরে একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তার মাধ্যমে ওর ঠিকানা খুঁজে পাই। এক দিকে খুব আনন্দ হচ্ছে। অন্যদিকে কষ্টটা বলে বোঝাতে পারবো না। ও আমাদের মেয়ের মতো বড় হয়েছে।
এদিকে বাব-মাকে ফিরে পেয়ে কাঞ্চনমালা আনন্দে আত্মহারা। দীর্ঘদিন পরেও সে তার বাব-মাকে চিনতে পেরেছে। কাঞ্চনমালা বলে, পরিবারের আপনদের খুঁজে পাব ভাবিনি । মাত্র ছয় বছর বয়সে হারিয়ে যাই। এখন আমার বয়স ১৭ বছর। এতদিন পর বাবা-মা-বোনদের দেখবো ভাবিনি। আমি কখনোই আমার পালক বাবা-মাকে ভুলবো না। তারা আমাকে নিজের মেয়ের মতো করে মানুষ করেছে। তারা আমাকে স্কুলে ভর্তি করেছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: