শুক্রবার, ৯ই মে ২০২৫, ২৬শে বৈশাখ ১৪৩২


নারায়ণগঞ্জে তিন দিনব্যাপী বউ মেলা


প্রকাশিত:
১৬ এপ্রিল ২০২৩ ১৯:৫৮

আপডেট:
৯ মে ২০২৫ ০৬:১২

ছবি সংগৃহিত

নারায়ণগঞ্জে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বর্ষপঞ্জিকা মতে বৈশাখের প্রথম দিনে শতবর্ষী বটবৃক্ষের নিচে সিদ্ধেশ্বরী পূজার আয়োজন করা হয়। সংসারে শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য নারীরা দল বেঁধে এ মেলায় এসে পূজা দিয়ে থাকেন। ঢাকের তালে ভক্তিভরে উলুধ্বনির সঙ্গে পূজায় মগ্ন হন বধূরা। তাই এটি স্থানীয়ভাবে বউ মেলা হিসেবে বেশি পরিচিত।

এদিন ঝুড়ি ভর্তি বৈশাখী ফলের ভোগ, কবুতর উড়ানো ও পাঠা বলি দেওয়া হয়। এই পূজাকে কেন্দ্র করে তিন দিনের মেলাও বসে সেখানে। জেলার সোনারগাঁ উপজেলার জয়রামপুর গ্রামে ভট্টচর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের বটবৃক্ষকে সিদ্ধেশ্বরী দেবী রুপে এই পূজার প্রচলন ঘটে আরও একশো বছর আগে। পরে বংশ পরম্পরায় পালিত হয়ে আসছে এই পূজা।

তবে শুরুর দিকে শুধুমাত্র বাড়ির নববধূদের নিয়ে এই আয়োজন হলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন বয়সের নারীরা সমাজের মঙ্গল কামনায় এবং পরিবারের শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য এতে অংশ নেন। শতবর্ষী ওই বট গাছটিকে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা সিদ্ধেশ্বরী দেবী বলে আখ্যায়িত করেন। তাই অনেকে এ মেলাকে সিদ্ধেশ্বরী দেবীর মেলাও বলে থাকেন।

বউ মেলায় অংশ নেওয়া নববধূ উর্বশ্রি সাহার বলেন, বিয়ের প্রথম বর্ষপূর্তিতে পরিবারের সবার মঙ্গল কামনা ও স্বামী-সন্তান নিয়ে যেন সুখে থাকতে পারি সে জন্যই এই পূজায় আসা।

রিয়া সরকার নামে আরেকজন বলেন, বিয়ে হয়ে আসার পর থেকে প্রতি বছর এখানে পরিবারের মঙ্গল কামনায় পূজা-অর্চনা করে আসছি। এটি বেশ পুরোনো রীতি, বিয়ের পর থেকেই দেখছি সবাই মঙ্গল কামনায় এই পূজায় অংশ নেন। মূল পূজা দুপুরে হলেও ভোর থেকেই এখানে পরিবারের বউরা স্নান করে শ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালী মাকে তেল-পান দিয়ে পরিবারের সকলের জন্য মঙ্গল কামনা করে।

এ বিষয়ে পার্বতী রানি বলেন, একশো বছর ধরে এই পূজার মাধ্যমে সকলে সিদ্ধেশ্বরী দেবীর কাছে আশির্বাদ নেন। আমি এখানে বউ হয়ে আসার পর থেকেই দেখছি এখানে বউ মেলার আযোজন হয়। তবে এটি বংশ পরম্পরায় চলে আসছে। পূজা উপলক্ষ্যে সবাই উপোষ থাকে ও ফল ভোগ দেয়। যখন নববধূ ছিলাম তখন থেকে এই পূজায় আসি, এখন ছেলের বউকে নিয়ে পূজায় আসি।

পূজার আয়োজক নিলুৎপল রায় বলেন, শুরুর দিকে এখানে পুরুষরা আসতো না, এই পূজা শুধুমাত্র বউদের জন্য উন্মুক্ত ছিল। জামাইদের নিমন্ত্রণ করা হতো তারা মেলায় আসতেন, তবে তারা পূজায় অংশ নিতেন না। তাই তখন থেকেই এই মেলা বউ মেলা নামে পরিচিতি পায়। নববর্ষের প্রথম দিনে দেশবাসীর মঙ্গল কামনায় এই পূজার আয়োজন করা হয়। নতুন বছর যেন ভাল কাটে, সবাই যেন ভাল থাকতে পারি, শান্তিতে থাকতে পারি তাই এই পূজার আয়োজন করা হয়। একশো বছর ধরে এই পূজার আয়োজন হচ্ছে। এক সময় পূর্ব পুরুষরা এই আয়োজন করতেন, এখন বংশ পরম্পরায় আমি উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এই আয়োজন করি।

মেলা প্রাঙ্গণে বাঁশের বাঁশি, মাটির হাতি, ঘোড়াসহ মৃৎশিল্পের নানা সামগ্রী ও ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী খাবার খই, উড়খা, কদমা, পেঁয়াজু, নিমকি, জিলাপিসহ বিভিন্ন পণ্যের দোকান বসে। এছাড়া শিশুদের জন্য নাগরদোলাসহ বেশ কিছু রাইডের ব্যবস্থা করেন আয়োজকরা। ফলে ঐতিহ্যবাহী এই মেলাকে কেন্দ্র করে সনাতন ধর্মাবলম্বী ছাড়াও বিভিন্ন ধর্মের দর্শনার্থীরা এখানে ছুটে আসেন। বউ মেলাকে কেন্দ্র করে পুরো এলাকায় বৈশাখী উৎসবের আমেজ বিরাজ করে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top