রবিবার, ৫ই মে ২০২৪, ২১শে বৈশাখ ১৪৩১


পালিচড়া এমএন উচ্চ বিদ্যালয়

ভুয়া সার্টিফিকেটে ১৭‌ বছর শিক্ষকতা


প্রকাশিত:
৪ জুন ২০২৩ ২০:৫৯

আপডেট:
৫ মে ২০২৪ ০১:২৩

ফাইল ছবি

রংপুর সদর উপজেলার পালিচড়া এমএন উচ্চ বিদ্যালয়ে ভুয়া সার্টিফিকেটের মাধ্যমে উচ্চতর স্কেল নিয়ে ১৭ বছর ধরে চাকরি করছেন আলমগীর বাদশাহ নামের এক সহকারী শিক্ষক। তার বিরুদ্ধে তথ্য গোপন রেখে প্রতারণার মাধ্যমে সরকারের কয়েক লাখ টাকা আত্মসাতের চাঞ্চল্যকর অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, পালিচড়া এমএন উচ্চ বিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী শিক্ষক আলমগীর বাদশাহ ২০০৬ সালে বিএড কোর্স সম্পন্ন করেন। সেই সময় তিনি এশিয়ান ইউনিভার্সিটি থেকে (২১.০৭.২০০৬ তারিখের) বিএড কোর্সের একটি ভুয়া প্রবেশনারি সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে শিক্ষা অফিসে জমা দেন। ওই সার্টিফিকেটে তিনি জিপিএ-৪ এর মধ্যে ৩ দশমিক ১৫৪ পেয়েছেন বলে দেখানো হয়। এর মাধ্যমে তিনি বিএড কোর্সের যোগ্যতা দেখিয়ে সেই সময়ে প্রাপ্ত ১১তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডে এবং পরবর্তীতে ৯ম গ্রেডে উচ্চতর স্কেলে বেতন উত্তোলন করেন। এভাবে তিনি গত ১৭ বছর ধরে তথ্য গোপন রেখে সরকারের কোষাগার থেকে কয়েক লাখ টাকা অতিরিক্ত আত্মসাৎ করেছেন।

সম্প্রতি ওই শিক্ষক ৯ম গ্রেড থেকে ৮ম গ্রেডে আরও উচ্চতর স্কেলে বেতন উত্তোলনের অভিলাষে শিক্ষা অফিসে পূর্বের ন্যায় ভুয়া প্রবেশনারি সার্টিফিকেটসহ কাগজপত্র বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সুপারিশসহ অনলাইনে জমা দেন। এ সময় তার দাখিলকৃত কাগজপত্র উপজেলা এবং জেলা শিক্ষা অফিস অতিক্রম করে বিভাগীয় শিক্ষা অফিসে জমা হয়। এখানে চূড়ান্ত পর্যায়ে তার দাখিলকৃত কাগজপত্র পর্যবেক্ষণ করে এর প্রবেশনারি সার্টিফিকেটটি নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এর প্রেক্ষিতে তার মূল বিএড কোর্সের সার্টিফিকেট জমা দিতে বলে বিভাগীয় শিক্ষা অফিস।

আলমগীর বাদশাহ এশিয়ান ইউনিভার্সিটি থেকে সংগৃহীত (০৯.০৯.২০০৭ তারিখের ইস্যু করা) মূল বিএড সার্টিফিকেট পুনরায় নতুন করে অনলাইনে দাখিল করলে সেখানে দেখা যায় যে, তিনি বিএড কোর্সে জিপিএ-৪ এর মধ্যে ২ দশমিক ৭৫০ পেয়েছেন। এর প্রেক্ষিতে বিভাগীয় শিক্ষা অফিস তার প্রবেশনারি সার্টিফিকেট জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি বলে অভিহিত করে ভুয়া প্রবেশনারি সার্টিফিকেট এবং মূল বিএড সার্টিফিকেটের মধ্যে তথ্য জালিয়তি ও বিভ্রান্তি থাকায় শিক্ষক আলমগীর বাদশাহর ৮ম গ্রেডে উচ্চতর স্কেলে বেতন উত্তোলনের ওই আবেদন বাতিল করে দিয়েছে। বর্তমানে দাখিলকৃত বিএড কোর্সের ভুয়া প্রবেশনারি সার্টিফিকেট এবং মূল বিএড কোর্সের সার্টিফিকেটের অনুলিপি বর্তমানে রংপুর বিভাগীয় শিক্ষা অফিসের অনলাইনে সংরক্ষিত রয়েছে বলে জানা গেছে।

এ অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত হওয়ার জন্য আলমগীর বাদশাহর মুঠোফোনে কল করলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি অভিযোগের বিষয়ে কোনো জবাব না দিয়ে ফোন রেখে দেন। এরপর কয়েক দফা তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

পালিচড়া এমএন উচ্চ বিদ্যালয়ের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এএইচএম আমিনুর রহমান বলেন, আমি দুই বছর ধরে দায়িত্বে আছি, এ বিষয়ে কিছুই জানি না। উনি অনেক আগে কীভাবে উচ্চতর স্কেল নিয়েছেন তা উনিই ভালো জানেন।

বিষয়টি নিয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আবু তালেবের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমি নতুন দায়িত্বে আছি, এ বিষয়ে কিছু জানি না।

এ বিষয়ে সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এসআর ফারুক বলেন, বিষয়টি এখন জানতে পারলাম। আগের দাখিল করা প্রবেশনারি সার্টিফিকেট ভুল থাকলে বিধি মোতাবেক তাকে অতিরিক্ত উত্তোলন করা টাকা ফেরত দিতে হবে।

জেলা শিক্ষা অফিসার এনায়েত হোসেন এই প্রতিবেদককে জানান, অভিযোগের বিষয়ে কেউ লিখিতভাবে জানালে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে রংপুর বিভাগীয় বিদ্যালয় পরিদর্শক ও ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক সাঈদা বেগম জানান, সহকারী শিক্ষক আলমগীর বাদশাহর দাখিলকৃত কাগজপত্রে অসংগতি পাওয়ায় এবং তা বিধিসম্মত না হওয়ায় তার উচ্চতর স্কেলের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। ডিডি স্যার হজ্জ থেকে ফিরে এসে যোগদান করলে এ ব্যাপারে বিভাগীয় বিধিসম্মত ব্যবস্থা নেবেন।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top