মঙ্গলবার, ১৭ই জুন ২০২৫, ৩রা আষাঢ় ১৪৩২


মাদারীপুরে বিএনপির সম্মেলনে সংঘর্ষ, টাকার বিনিময়ে কমিটি দেওয়ার অভিযোগ


প্রকাশিত:
১৭ জুন ২০২৫ ১৬:৩৫

আপডেট:
১৭ জুন ২০২৫ ২০:২৩

ছবি সংগৃহীত

মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার বাজিতপুর ইউনিয়ন বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে দুই গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এ সম্মেলনে ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে টাকার বিনিময়ে কমিটি ঘোষণার অভিযোগ উঠেছে।

এ নিয়ে সোমবার (১৭ জুন) রাতে উপজেলার বাজিতপুর ইউনিয়নের সাধুরব্রিজ এলাকায় ইউনিয়ন বিএনপির অফিসে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেন ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কামাল চৌকিদারসহ পদবঞ্চিতরা।

সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয় বিএনপি নেতা শাহাবুল শিকদার বলেন, আমি বাজিতপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলাম। কিন্তু অর্থের বিনিময়ে আমাকে এ পদ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। অথচ যিনি সভাপতি প্রার্থী ছিলেন এবং হওয়ার যোগ্য তাকে সাধারণ সম্পাদক পদে রেখেছেন। দীর্ঘ ১৭ বছর বিএনপির কোনো মিছিল মিটিং বাদ দেই নাই। রাজপথে থেকেছি, মামলায় পড়েছি, জেল খেটেছি। আওয়ামী লীগের কোনো নেতার সাথে আমার কোনো ছবিও নাই। তারপরও আমাদের মতো ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগ ঘেঁষা, আওয়ামী লীগেরটা খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকাদের নিয়ে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। আমাদের বিষয় সব কিছু জেনেও আমাদের বাদ দিয়ে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ সময় আওয়ামীপন্থি লোকজন হট্টগোল করে চেয়ার ছোড়াছুড়ি ও ভাঙচুর করেছে। এতে আমরা কয়েকজন কিছুটা আহত হয়েছি।

বাজিতপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কামাল চৌকিদার বলেন, আমি দীর্ঘ ১২ বছর আওয়ামী লীগের নির্যাতন সহ্য করে, আমার ব্যবসা বাণিজ্য নষ্ট করে বাজিতপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি। আওয়ামী লীগের নৌকা পোড়ানোর মামলা খেয়েছি। বিভিন্ন আতঙ্কে ভয়ে পরিবার নিয়ে বাড়ি ছেড়ে বাসা ভাড়া থেকেছি। এই দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে আমাকে সভাপতি পদ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। আমি সভাপতি প্রার্থীর ফরম কিনে জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে সাধারণ সম্পাদক করে ফজলু হাওলাদারকে সভাপতি পদ দেওয়া হয়েছে। আমরা তাদের এই আচরণে খুবই কষ্ট পেয়েছি। বিপদের সময়ে রাজপথে থাকা নেতাকর্মীরা যদি যোগ্য পদ না পায় তাহলে কষ্টের সীমা থাকে না। সভাপতি প্রার্থী হিসেবে ৭ জন ফরম জমা দিয়েছিল। এর মধ্যে আমি ছাড়া কারো কোনো আন্দোলন সংগ্রামের ডকুমেন্টস নাই। তারা সকলের আমলনামা যাচাই-বাছাই করে দেখুক। যদি আমি সভাপতি পাওয়ার যোগ্যতা রাখি তাহলে আমি সভাপতি চাই। কিন্তু আমাকে সাধারণ সম্পাদক পদ দিল কেন। আমিতো সাধারণ সম্পাদকের ফরম কিনিই নাই। দলের কাছে পুনরায় বিবেচনার দাবি করছি।

এ সময় রাজৈর উপজেলার বাজিতপুর ইউনিয়ন যুবদল নেতা আব্দুল্লাহ বেপারী, যুবদল নেতা মিন্টু ফকির, শ্রমিক দলের সভাপতি কাঁলাচান সরদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সোমবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার বাজিতপুর ইউনিয়ন বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন নয়াকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিল্টন বৈদ্য সমর্থিত কামাল চৌকিদার ও সিরাজুল ইসলাম মোল্লা গ্রুপের সঙ্গে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব জাহান্দার আলী জাহান সমর্থিত ফজলু শেখ ও লুৎফর হাওলাদার গ্রুপের বাগবিতণ্ডা হয়। পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার পর সভাস্থলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার জন্য অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তিনটি আতশবাজি বিস্ফোরণ ঘটায়। এ সময় পুলিশ এগিয়ে গেলে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা দৌড়ে পালিয়ে যায়।

পরে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিভিন্ন সভা সমাবেশ, মিছিল মিটিং ও নেতাকর্মীদের সাথে ছবি থাকার প্রসঙ্গ উঠালে আবারও দুই গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতি ও চেয়ার ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে নিয়ন্ত্রণ করে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক তিনটি পদে প্রতিদ্বন্দ্বীরা ৫০০ টাকা মূল্যে দলীয় ফরম সংগ্রহ করেন এবং পূরণ করে জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দের কাছে জমা দেন। এ সময় যাচাই-বাছাই এবং আলোচনা শেষে ফজলুল হক হাওলাদারকে সভাপতি, কামাল চৌকিদারকে সাধারণ সম্পাদক ও কিবরিয়া হাওলাদারকে সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির নেতৃবৃন্দ।

পরবর্তীতে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। এ নিয়ে আবারও তৃতীয় দফায় সংঘর্ষ হয়। আহ্বায়ক কমিটির ওপর চড়াও হন বঞ্চিত নেতাকর্মীরা। পুলিশের সহযোগিতায় গাড়িতে উঠে স্থান ত্যাগ করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট জাফর আলী মিয়া। তার সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য বজলু হাওলাদার অ্যাডভোকেট এএইচএম মিজানুর রহমান ও গাউস-উর-রহমান।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top