সোমবার, ৩০শে জুন ২০২৫, ১৬ই আষাঢ় ১৪৩২


ঢাবির সাবেক ছাত্র গড়েছেন ফলের বাগান, আছে বিদেশি ২৫ জাতের আঙুর


প্রকাশিত:
৩০ জুন ২০২৫ ১১:২৭

আপডেট:
৩০ জুন ২০২৫ ১৮:০৭

ছবি সংগৃহীত

পড়াশোনা শেষে সবাই যখন চাকরির চিন্তায় বুঁদ হয়ে থাকে। অনেকের কাটে না হতাশার ছাপ। চাকরির পেছনে ছুটতে ছুটতে হয়ে যায় নির্বাক। ঠিক তখন ব্যতিক্রম একজন মাসুদুর রহমান (৩৫)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করে এই যুবক বেছে নিয়েছেন একেবারে ভিন্ন পথ।

২০১৪ সালে ইসলামিক স্টাডিজে পড়াশোনা শেষ করে সরকারি কিংবা কর্পোরেট চাকরি করতে চাননি। চেয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা ও গবেষণার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে। কিন্তু কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ না পেয়ে কৃষিকে নিজের সাধনার ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নেন। আর এই ভিন্ন পথের যাত্রাই আজ তাকে উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিতি এনে দিয়েছে।

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার খেজমতপুর গ্রামের উচ্চশিক্ষিত মাসুদুর রহমান এখন শুধু কৃষক নন, একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা। বিদেশি ২৫ জাতের আঙুর চাষ করে যেমন আলোচনায় এসেছেন, তেমনি বাড়ির ছাদে গড়ে তুলেছেন বারোমাসি ফলের বাগান, যা দেখে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন অনেকেই।

সম্প্রতি মাসুদুরের আঙুরবাগানে গিয়ে দেখা যায়, বাঁশ ও সুতা দিয়ে তৈরি বিশেষ মাচায় থোকায় থোকায় ঝুলে আছে বিভিন্ন ধরনের আঙুর। দেখে মনটা জুড়িয়ে যায়। সবুজ পাতার ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে কোথাও লম্বাটে, কোথাও গোল আবার কোথাও হালকা রঙিন জাতের আঙুর। মিষ্টি এসব আঙুর এখন পরিপক্ব হয়েছে।

মাসুদুর রহমানের বাড়ির ছাদে আছে ১ হাজার ২০০ বর্গফুটের ছাদবাগান। সেখানে ১০ প্রজাতির বারোমাসি ফলের গাছ আর নিচের জমিতে রয়েছে আঙুর। ১০ শতাংশ জমিতে ২৫ জাতের আঙুরের চাষ করেছেন তিনি।

তার বর্গফুট ছাদজুড়ে রয়েছে থাই কমলা, ড্রাগন, জামরুল, শরিফা, আমড়া, আনারসহ ১০ জাতের বিদেশি ফলের বাগান। এছাড়া বাড়ির পাশের ১৭ শতাংশ জমিতে আরও ১৫ জাতের ফলের চাষ করছেন। সাথী ফসল হিসেবে সেখানে আদা চাষ করে এবারই তিনি পেয়েছেন ৮০ হাজার টাকা। পাশাপাশি চার একর জমিতে চাষ করছেন আলু ও কচুমুখী। শুধু কচুমুখী থেকেই গত বছর তার আয় হয়েছে প্রায় ৫ লাখ টাকা।

সফল এই কৃষি উদ্যোক্তা বলেন, রাশিয়া, ইতালি, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে সংগ্রহ করেছেন আঙুরের চারা। এই বাগানে ৫০টির মতো গাছে এ বছর আঙুর ধরেছে। ইতোমধ্যে তিন মণ আঙুর বিক্রি করে পেয়েছেন প্রায় ৬০ হাজার টাকা। মাচা তৈরি, পরিচর্যা, চারা কেনাসহ সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক না হতে পারলেও মাসুদুর কৃষিক্ষেত্রকেই গবেষণার মাঠে পরিণত করেছেন। তিনি বলেন, প্রথমে ভয় ছিল বিদেশি আঙুরের স্বাদ নিয়ে। কিন্তু এখন মানুষ খেয়ে মুগ্ধ। আমি চাই, দেশের প্রতিটি বাড়িতে অন্তত একটি মিষ্টি জাতের আঙুরগাছ থাকুক। যারা চায়, তাদের আমি চারা দিচ্ছি—একেবারে বিনামূল্যে।

তিনি আরও জানান, প্রতিদিন তার আঙুরের বাগান দেখতে বিভিন্ন স্থান থেকে শত শত মানুষ আসেন। বাগান থেকে মণ দুয়েক আঙুর দর্শনার্থীদের মধ্যে বিলিয়েছেন। আরও মণ তিনেক আঙুর বাগানে রয়েছে।

গাইবান্ধায় ধাপেরহাট এলাকার কলেজ শিক্ষক ফারজানা ববি বলেন, চাকরি না করেও যে সফল হওয়া যায় তার উজ্জ্বল উদাহরণ মাসুদুর রহমান। যদি সাহস, নিষ্ঠা আর অদম্য আগ্রহ থাকে তাহলে মানুষ যেকোনো ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করতে পারে।

রংপুর শহরের মাহিগঞ্জ এলাকা থেকে বাগান দেখতে আসা দর্শনার্থী সুমন মিয়া বলেন, আমার অনেক দিনের ইচ্ছে ফল বাগান গড়বো। এজন্য বিভিন্ন সময়ে ফেসবুক ও ইউটিউবে ভিডিও দেখে থাকি। হঠাৎ মাসুদুর ভাইয়ের বাগানের আঙ্গুরের ভিডিও দেখে ভালো লাগে। ইউটিউবে যে রকম আঙুর দেখেছি, সেটা বাস্তবে আরো বেশি ভালো লেগেছে। খেয়ে দেখলাম, খুবই মিষ্টি।

মাসুদুর রহমান বলেন, মাটির সঙ্গে প্রেম করলেই জীবন বদলায়। কৃষির এই নতুন যাত্রায় যদি আরও কেউ এগিয়ে আসেন, তাহলেই স্বপ্ন স্বার্থক হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

পীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাদেকুজ্জামান সরকার বলেন, উচ্চশিক্ষিত একজন মানুষ কৃষিকে জীবনের লক্ষ্য করে দেশের মাটিতে বিদেশি ফল চাষ করছেন—এটা শুধু উদাহরণ নয়, অনুপ্রেরণাও। তাঁর বাগানে যে পরিমাণ আঙুর ধরেছে, তা বিদেশি বলে বোঝা যায় না।

ডিএম /সীমা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top