চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে প্রাণ গেল জামাই-শ্বশুরের
প্রকাশিত:
১০ আগস্ট ২০২৫ ১২:২৮
আপডেট:
১০ আগস্ট ২০২৫ ১৫:২৬

রংপুরের তারাগঞ্জে চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে প্রাণ হারিয়েছেন দুজন। নিহতরা হলেন- সম্পর্কে জামাই-শ্বশুর।
রোববার (১০ আগস্ট) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ ফারুক। এর আগে শনিবার (৯ আগস্ট) রাত ৯টার দিকে সয়ার ইউনিয়নের বুড়িরহাট বটতলা এলাকায় ঘটে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন— কুর্শা ইউনিয়নের ঘনিরামপুরের রূপলাল দাস (৪০) ও মিঠাপুকুরের বালুয়াভাটা গ্রামের প্রদীপ দাস (৩৫)। প্রদীপ দাস, রূপলাল দাসের ভাগনি জামাই।
নিহত ব্যক্তিদের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রূপলাল দাসের মেয়ের বিয়ের কথাবার্তা চলছিল মিঠাপুকুর থানার শ্যামপুর এলাকার লালচাদ দাসের ছেলে ডিপজল দাসের সঙ্গে। আজ রোববার তাদের বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক করার কথা ছিল। এ জন্য মিঠাপুকুর থেকে প্রদীপ দাস নিজেই ভ্যান চালিয়ে রূপলাল দাসের বাড়ির দিকে রওনা হন। কিন্তু গ্রামের রাস্তা না চেনায় প্রদীপ দাস সয়ার ইউনিয়নের কাজীরহাট এলাকায় এসে রুপলালকে ফোন করেন। সেখানে রূপলাল পৌঁছালে দুজনে রিকশায় চড়ে ঘনিরামপুর গ্রামের দিকে রওনা হন। পথিমধ্যে রাত ৯টার দিকে তারাগঞ্জ-কাজীরহাট সড়কের বটতলা এলাকায় পৌঁছালে ভ্যান চোর সন্দেহে তাদের কয়েকজন আটক করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে সেখানে লোক জড়ো হতে থাকেন। একপর্যায়ে প্রদীপ দাসের ভ্যানে থাকা বস্তা থেকে চারটি প্লাস্টিকের ছোট বোতল বের করেন তারা। এর মধ্যে একটি বোতল খুললে ভেতরে থাকা তরলের ঘ্রাণে অসুস্থ হয়ে পড়েন পাশারিপাড়া গ্রামের ভ্যানচালক আলমগীর হোসেন ও বুড়িরহাটের মেহেদী হাসান। অজ্ঞান করে ভ্যান চুরি করে মর্মে লোকজনের সন্দেহ আরও বাড়ে। এরপর ভ্যান চুরির সন্দেহে তাদের মারধর শুরু করেন উপস্থিত লোকজন। মারধর করতে করতে বটতলা থেকে বুড়িরহাট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে নিয়ে আসা হয় তাদের। মারধরের একপর্যায়ে অচেতন হলে সেখানে ফেলে রাখে তারা। পরে রাত ১১টায় তাদের উদ্ধার করে পুলিশ তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্মরত চিকিৎসক রূপলাল দাসকে মৃত ঘোষণা করেন। অন্যদিকে প্রদীপ দাসকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ভোররাতে তিনিও মারা যান।
নিহত রূপলাল দাসের ভাই খোকন দাস বলেন, দেশে কি কোনো আইন নাই। চোর সন্দেহ হলেই তাদের মারধর করে মেরে ফেলতে হবে। যারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তাদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি এবং কঠোর শাস্তির দাবি করছি।
তারাগঞ্জ থানার ওসি এম এ ফারুক বলেন, চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা সম্পর্কে জামাই শ্বশুর। এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে। যারা দোষি তাদের কারো ছাড় নেই।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: