খালের ধারে বসতি, ২০ পরিবারের ১১ ব্যক্তিগত সাঁকো!
প্রকাশিত:
৩১ আগস্ট ২০২৫ ১১:৩৬
আপডেট:
১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৪:১০

খালের ধারে গড়ে ওঠা বস্তিতে প্রায় ৭০ জন মানুষের বসবাস। তবে যাতায়াতের জন্য নেই কোনো ব্রিজ। তাই বাঁশ ও কাঠ দিয়ে সাঁকো বানিয়ে চলছে তাদের দিনযাপন। পারাপারের সুবিধার জন্য এই বস্তির ২০ পরিবারের এখন রয়েছে ১১ ব্যক্তিগত সাঁকো।
বিভিন্ন পেশার এসব পরিবারের সদস্যদের দিন এনে দিন খাওয়া। পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গায় গড়ে ওঠা এই বস্তিতে কেউ দুই বছর; আবার কেউ কেউ ২২ বছরের বেশি সময় ধরে বসবাস করছেন। তবে তাদের খাল পারাপারের ছিল না কোনো ব্রিজ। তাই পরিবারগুলো বাড়িতে যাতায়াতের জন্য কাঠ ও বাঁশ দিয়ে নিজস্ব সাঁকো করেছেন। দেখা গেছে, একটি টিনের ঘর তৈরির খরচের চেয়ে তাদের পারাপারের সাঁকোর মূল্য বেশি।
জানা গেছে, পুরো বস্তি এলাকা ৩০০ গজ জায়গা জুড়ে। এই বস্তিতে যাতায়াতের জন্য খালের ওপরে ১১টি বাঁশ ও কাঠের সাঁকো তৈরি করা হয়েছে নিজস্বভাবে। এর মধ্যে ৭টি বাঁশের ও ৪টি কাঠের। তুলনামূলক বাঁশের সাঁকোগুলোর চেয়ে কাঠের সাঁকো তৈরিতে খরচ কয়েকগুণ বেশি। তবে কাঠের সাঁকো তুলনামূলক টেকসই। কাঠের সাঁকো তৈরিতে খরচ পড়ে কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা ও বাঁশের সাঁকোগুলোতে খরচ পড়ে ৭ থেকে ১০ হাজার টাকা।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) ৩০নং ওয়ার্ডের চৌদ্দপাই থেকে বুধপাড়া গণির মোড় সড়কের পাশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গায় এই বস্তি। এসব বস্তির ঘর-বাড়িগুলো টিনের তৈরি। বাড়ি করার পরে পায়ে হাটা জায়গারও সংকট রয়েছে। তাই সরাসরি বাড়িতে যাতায়াতের জন্য অনেকেই তৈরি করেছেন সাঁকো।
তবে খালটির চৌদ্দপাই থেকে বুধপাড়া গণির মোড় পর্যন্ত তিনটি সাঁকো রয়েছে। এর মধ্যে গণির মোড় এলাকায় একটি, মোহনপুরে যাতায়াতের জন্য একটি ও গ্রিজ ফ্যাক্টরিতে যাতায়াতের জন্য সাঁকো তৈরি করা হয়েছে। খুব কাছাকাছি হওয়ার কারণে গ্রিজ ফ্যাক্টরির কাছের ব্রিজ ব্যবহার করে বস্তির কয়েকটি পরিবার। তবে বাকিরা দীর্ঘ পথ ঘোরার ঝামেলা এড়াতে যাতাযাতের জন্য নিজস্বভাবে তৈরি করে নিয়েছে ব্যক্তিগত সাঁকো। ফলে তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হয়েছে। তবে নিজস্ব এই সাঁকোগুলো অন্যের ব্যবহারের সুযোগ কম হওয়ার কারণে ঘন ঘন সাঁকো তৈরি হয়েছে।
বস্তির বাসিন্দা নাজমুল ইসলাম জানান- ‘তারা দুটি পরিবার মিলে কাঠের একটি সাঁকো করেছে। এই সাঁকোতে তারা যাতায়াত করেন।’ তার দাবি- অন্যরাও যাতায়াত করে। তিনি বলেন- ‘আশপাশের সাঁকোগুলো দিয়ে মালিকরা যাতায়াত করতে দেয় না। এনিয়ে মাঝে মধ্যেই বিরোধ বাঁধে। সবমিলে এই সাঁকোগুলোর কারণে তাদের বাড়িতে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হয়েছে।’
জানা গেছে, খালটি পদ্মা নদীর শ্যামপুর এলাকায় শুরু হয়েছে। শেষ হয়েছে ফলিয়ার বিলে গিয়ে। দক্ষিণ দিক থেকে শুরু হওয়া খালটি উত্তরদিকে বয়ে গেছে। চৌদ্দপাই এলাকায় এই খালের পাশে সর্বপ্রথম বাড়ি করে বজলু মিয়া। কিছুদিন পরে তার পাশে বাড়ি করেন নবাব আলী। তারা দীর্ঘদিন থেকে এখানে বসবাস করছেন। তাদের বাড়ি ছাড়া, এক সময় পুরোনো গ্রিজ ফ্যাক্টারি পর্যন্ত পরিত্যক্ত জয়গাগুলোতে হলুদের চাষ হতো। রাজশাহী ফল গবেষণার পূর্বের প্রাচীর লাগোয়া জায়গাটি গেল পাঁচ বছরে বস্তিতে রূপ নিয়েছে।
খাল পাড়ের চৌদ্দপাই এলাকায় প্রায় ২৫ বছর ধরে বসবাস করছেন বজলু ও নবাব আলীর পরিবার। তবে বজলুর পরিবারের রাজশাহী-নাটোর মহাসড়ক থেমে নেমে বাড়িতে যাওয়া-আশার পথছিল। এই পথে দুই পরিবার যাতায়াত করতেন। পরবর্তীতে দুই পরিবার বাঁশ ও কাঠের সাঁকো তৈরি করেছেন।
তার স্বজনরা জানায়- মূলত বাড়িতে যাতায়াতের জন্য এই বাঁশের সেতুটি তৈরি করা হয়। প্রতিবছর সেতুটি মেরামত করালাগে। অনেক সময় মেরামত না করা হলে বাঁশ ভেঙে যায়। তখন চলাচলে ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। তাই প্রতিবছর সেতুটি মেরামত করা হয়। এই সেতুটি দিয়ে পাশের কয়েকবাড়ির লোকজন চলাচল করে।
বিরিন খাতুন বলেন, তার স্বামী ব্যাটারি চালিত ভ্যান গাড়ি চালায়। সেই ভ্যান গাড়ি সড়ক থেকে বাড়িতে ঢুকানো হয় সেতুর উপর দিয়ে। তাই তারা কাঠের সেতু তৈরি করেছেন। এই সেতু তৈরি করেতে দুইটা কাঠ মিস্ত্রীর দুইদিন সময় লেগেছে। তাদের সিমিন্টের খুঁটি, মেহেগুনি কাঠের বাটাম ও বাঁশ ব্যবহার করা হয়েছে। ভালো করে তৈরি করা হয়েছে। তাহলে তিন থেকে চার বছর যাবে এই সেতুটি।
কাঠমিস্ত্রী রজব কালু বলেন, বিরিনের বাড়িতে যাওয়ার জন্য করা সেতুটি তৈরি করতে সাত হাজার টাকার কাঠ লেগেছে। এছাড়া বাঁশ ও সিমেন্টের খুঁটি রয়েছে। এছাড়া দুইজন মিস্ত্রী দুইদিন কাজ করতে হয়েছে। তাদের কাঠের সেতুটি প্রসস্ততে বড়। কারণ সেখান দিয়ে ভ্যান গাড়ি চলাচল করবে। এছাড়া যারা বাঁশের সেতু বানিয়েছেন। তাদের গুলো প্রসস্ত কম। কারণ তারা পায়ে হাটা-যাওয়া করবে।
বিষয়টি নিয়ে রাসিকের ৩০নম্বর ওয়ার্ডের সচিবের মোবাইল ফোনে কল করে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: