রংপুরে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে অনিয়ম, ২৮ বস্তা চাল উধাও
প্রকাশিত:
২৩ নভেম্বর ২০২৫ ১৮:৩৯
আপডেট:
২৪ নভেম্বর ২০২৫ ০২:৩১
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার লতিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সচিবের নামে ডিও থাকলেও চাল বিতরণের দায়িত্ব পান স্থানীয় বিএনপি–জামায়াতের নেতারা। এ ব্যবস্থাপনার ফাঁকে হতদরিদ্র মানুষের জন্য বরাদ্দ থেকে ২৮ বস্তা চাল রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে গেছে। এ ঘটনায় এলাকায় চরম ক্ষোভ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।
জানা যায়, ডিলার না থাকায় লতিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিতরণের জন্য ডিও হয় ইউপি সচিবের নামে। কিন্তু ১৪, ১৬ ও ১৭ নভেম্বর খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১৫ টাকা কেজির চাল বিতরণ করেন বিএনপি অঙ্গ সংগঠন কৃষক দলের নেতা আমিনুল ইসলাম ও জামায়াত নেতা সামসুল। ২৮ বস্তা চাল পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় কার্ডধারী ও ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, নিয়মিত চাল নিতে গেলেও তারা চাল পাননি। সুযোগ বুঝে একটি অসাধু চক্র হতদরিদ্র মানুষের প্রাপ্য আত্মসাৎ করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানান তারা।
লতিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব জেসমিন আরা জুঁথী বলেন, আমরা শুধু কাগজে কলমে। চাল বিতরণের সঙ্গে যারা জড়িত তারা বিএনপি-জামায়াতের নেতা। তাদের মধ্যে দুজনকে চিনি একজন বিএনপির আমিনুল ইসলাম আর জামায়াতের সামসুল। বিষয়টি নিয়ে ১৯ নভেম্বর বিএনপি-জামায়াত নেতা, প্রশাসক স্যারসহ আমরা সবাই বসেছিলাম। যে চাল চাইবে তাকে চাল দেওয়া হবে, আর যে চাল পাবে না তাকে হচ্ছে টাকা-পয়সা দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, চালটা ডিলারের মাধ্যমে বিতরণ হওয়ার কথা। কিন্তু ৫ আগস্টের পর সমস্যার কারণে আমাদের ডিলার নাই। ডিলার না থাকার কারণে যেকোনো মাধ্যমে আমরা চাল বিতরণ করছি। ডিলার না থাকায় বিএনপি-জামায়াত নেতারা চাল বিতরণের দায়িত্ব নেন। এ দায় তাদের।
মিঠাপুকুর থানা কৃষক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি সমাধান করা হয়েছে। হিসেবে গরমিল ছিল, সংশোধন হয়েছে, সবাইকে চাল দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে লেখালেখি না করাই ভালো।
এ বিষয়ে কথা বলতে ইউনিয়ন জামায়াতের সহ-সভাপতি সামসুল হককে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এ ব্যাপারে লতিবপুর ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিউল আলম বলেন, আমি এ রকম কোনো ঘটনা সম্পর্কে জানি না। আপনার কাছ থেকেই শুনলাম। খোঁজ নিয়ে জানতে হবে আসলে ঘটনা কী ঘটেছে।
জানতে চাইলে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ও লতিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক আব্দুল হামিদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, কাগজে-কলমে চালের ঘাটতি হলেও যারা চাল পায়নি, তাদের সবাইকে চাল বুঝিয়ে দেওয়া হবে। আমাদের কাছে যারা আসবে, তাদের সবাইকেই আমরা বলে দিচ্ছি যে, যারা যারা চাল পায়নি আপনাদেরকে আমরা চাল বুঝিয়ে দেব। সমস্যা হচ্ছে উপকারভোগী কেউ আমাদের কাছে আসে না।
সচিবের নামে চাল বরাদ্দের ডিও থাকলেও বিএনপি-জামায়াত নেতাদের দিয়ে চাল বিতরণ করা হয়েছে কেন জানতে চাইলে প্রশাসক আব্দুল হামিদ বলেন, ডিলার নিয়োগ বন্ধ থাকায় উপজেলা কমিটি রাজনৈতিক নেতাদের সাথে বসেই এই সিদ্ধান্ত নেয়। এখানে মূলত ৫ লাখ টাকার একটি বিষয় জড়িত ছিল। এই সিদ্ধান্তের অধীনে রাজনৈতিক নেতারাই টাকাটা দিয়ে চালটা উত্তোলন করেন, যদিও ডিও ইউনিয়ন পরিষদের সচিব বা প্রশাসনিক কর্মকর্তার নামেই করা হয়। উনাদের সমন্বয়ে এখানে বিতরণটা হয়।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: