‘ইনডাকশন’ পদ্ধতি : ১০ জনে ৬ জনেরই হচ্ছে স্বাভাবিক প্রসব
প্রকাশিত:
২৯ জুলাই ২০২৫ ২১:০২
আপডেট:
৩০ জুলাই ২০২৫ ০৯:৩৬

বাংলাদেশে সন্তান প্রসবে অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের হার দিন দিন বাড়ছে। এই প্রবণতা মা ও নবজাতকের জন্য যেমন ঝুঁকিপূর্ণ, তেমনি এটি দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করছে। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, সময়মতো ও সঠিকভাবে ইনডাকশন পদ্ধতি প্রয়োগ করলে এই সংকট অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, ইনডাকশন পদ্ধতির মাধ্যমে ১০ জন প্রসূতির মধ্যে ৬ জনই স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসব করতে সক্ষম হয়েছেন—কোনো জটিলতা ছাড়াই।
আজ (মঙ্গলবার) রাজধানীর মিরপুরে ওজিএসবি হাসপাতালে অনুষ্ঠিত ‘নিরাপদ প্রসব ও ইনডাকশন পদ্ধতির মাধ্যমে সি-সেকশন হ্রাস’ শীর্ষক এক সচেতনতামূলক সভায় এ তথ্য তুলে ধরেন দেশের খ্যাতনামা স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞরা।
অনুষ্ঠানের আয়োজন করে অবসটেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি)। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক ডা. ফেরদৌসী বেগম ফ্লোরা। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মুনিরা ফেরদৌসী।
অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডা. মুনিরা ফেরদৌসী। তিনি বলেন, “শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরিচালিত একটি গবেষণায় ২০০ জন প্রসূতির ওপর ইনডাকশন পদ্ধতি প্রয়োগ করে দেখা গেছে, তাদের ৬৫ শতাংশেরই স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসব হয়েছে। এ পদ্ধতির ফলে প্রসবকালীন গড় সময় প্রায় ৩ দশমিক ২ ঘণ্টা কমেছে এবং কোনো গুরুতর জটিলতা দেখা যায়নি।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৫৪ শতাংশ শিশু সিজারিয়ানের মাধ্যমে জন্ম নিচ্ছে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশকৃত সীমা (১০–১৫ শতাংশ) থেকে বহুগুণ বেশি। এর পেছনে রয়েছে সঠিক পরিকল্পনার অভাব, অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা ও বাণিজ্যিক চাপ। ইনডাকশন পদ্ধতি এ প্রবণতা রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।”
সভায় ডা. আঞ্জুমান আরা রীতা জানান, “আশুলিয়া নারী ও শিশু হাসপাতালে যখন ইনডাকশন পদ্ধতি চালু করা হয়, তখন সিজারিয়ান সেকশনের হার ছিল ৭৩ শতাংশ। বর্তমানে তা নেমে এসেছে ৪৩ শতাংশে। পদ্ধতিটি প্রয়োগে চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ, রোগী সচেতনতা এবং একটি সুসংগঠিত টিম অত্যন্ত জরুরি।”
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. ফেরদৌসী বেগম ফ্লোরা বলেন, “ইনডাকশন কোনো নতুন আবিষ্কার নয়। বিশ্বের অনেক দেশেই দীর্ঘদিন ধরে এটি কার্যকরভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আমাদের দেশে এর কার্যকারিতা প্রমাণিত হলেও প্রয়োগে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এজন্য প্রয়োজন চিকিৎসকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ, পর্যাপ্ত নার্সিং সাপোর্ট এবং একটি জাতীয় গাইডলাইন।”
তিনি আরও বলেন, “স্বাভাবিক প্রসব উৎসাহিত করতে পরিবার, সমাজ ও হাসপাতাল—সবার সম্মিলিত উদ্যোগ দরকার। মা এবং শিশুর সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে শুধু অস্ত্রোপচারে নির্ভরশীল না থেকে ইনডাকশন পদ্ধতির মতো বিকল্প ও নিরাপদ উপায় বেছে নিতে হবে।”
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: