অংশ নেবে পাকিস্তানও
ইসরায়েলকে ঠেকাতে মধ্যপ্রাচ্যে বাহিনী গঠনের ইঙ্গিত
প্রকাশিত:
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৭:৩৮
আপডেট:
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৯:২৫

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার বলেছেন, ‘‘পাকিস্তানের খুবই বড় এবং কার্যকর সশস্ত্র বাহিনী রয়েছে, যারা প্রচলিত যুদ্ধে নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণ করেছে।’’ মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের আগ্রাসন ঠেকাতে যদি জাতিসংঘের বাইরে কোনও ঐক্যবদ্ধ শক্তি গঠিত হয়, তাহলে পাকিস্তান তাতে অংশ নেবে কি না, কাতার-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এমন প্রশ্নের জবাবে ইসহাক দার ওই মন্তব্য করেছেন।
কাতারে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার পর আরব-ইসলামি সম্মেলনের আগে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের ওই স্বাক্ষাৎকার রেকর্ড করা হয়েছিল। আল জাজিরার উপস্থাপক ওসামা বিন জাভেদ পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জানতে চান, গাজায় হস্তক্ষেপ করতে জাতিসংঘের বাইরে কোনও ঐক্যবদ্ধ সংস্থা গঠনের পরিকল্পনা আছে কি না?
জবাবে দার বলেন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের মতো একটি ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা যেতে পারে। তিনি বলেন, উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তারা কোনও দেশ তাদের কথা না শুনলে কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দেয়। এটি যে কোনও দেশের জন্য ভয়াবহ অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ হয়।
পাকিস্তানের এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আরব দেশগুলো এবং আরব লীগের আলোচনায় ‘‘একটি যৌথ নিরাপত্তা বাহিনী গঠনের’’ কথা উঠেছে। তিনি বলেন, এটা কেন নয়? এতে সমস্যা কী? তাদের অবশ্যই এমন একটি বাহিনী থাকা উচিত। নিজেদের সক্ষমতা এবং শক্তি অনুযায়ী একটি ব্যবস্থা তৈরি করা উচিত। এটি আক্রমণের জন্য নয়, বরং শান্তির জন্য করা উচিত—আগ্রাসী শক্তিকে থামাতে, দখলদারকে থামাতে এবং এমন কাউকে থামাতে যে কারও কথা শুনতে চায় না।
এরপর আল জাজিরার উপস্থাপক পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জানতে চান, যদি এমন বাহিনী গঠন করা হয়, তখন পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হিসেবে পাকিস্তানের অবস্থান কী হবে? জবাবে দার বলেন, পারমাণবিক শক্তিধর পাকিস্তান অবশ্যই উম্মাহর সদস্য হিসেবে তার দায়িত্ব পালন করবে।
জাভেদ এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে দার বলেন, পাকিস্তান পারমাণবিক অস্ত্রকে কেবল প্রতিরোধের মাধ্যম হিসেবেই দেখে এবং এটি ব্যবহারের কোনও ইচ্ছা নেই।
তিনি বলেন, কিন্তু পাকিস্তানের বড়, সুপরিচিত, কার্যকর সেনাবাহিনী, কার্যকর বিমানবাহিনী, কার্যকর নৌবাহিনী রয়েছে। চ্যালেঞ্জ করা হলে আমরা প্রচলিত পদ্ধতিতেও প্রতিপক্ষকে হারাতে পারি। আমরা সেটা প্রমাণও করেছি।
উপস্থাপক জাভেদ তখন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সাম্প্রতিক বিতর্কের প্রসঙ্গ তোলেন, যেখানে ইসরায়েল গাজায় হামলার যৌক্তিকতা প্রমাণে ২০১১ সালে পাকিস্তানে ওসামা বিন লাদেনকে হত্যার উদাহরণ দিয়েছিল। তিনি জানতে চান, যদি এবার যুক্তরাষ্ট্রের মতো কোনও দেশের হামলার শিকার হয় পাকিস্তান, তাহলে পাকিস্তান কি ২০১১ সালের মতো একইভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে?
জবাবে দার বলেন, ‘‘আমরা আমাদের আঞ্চলিক অখণ্ডতায় হস্তক্ষেপ মেনে নেব না—তা ছোট কিংবা বড়, যে দেশই হোক না কেন। আমরা প্রতিক্রিয়া দেখাব। তবে আমার মনে হয় না, যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনও দেশ এমন করবে। ভারত করেছিল, দেখেছেন তাদের কী হয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে থামাতে কিছু করেনি। তাহলে পাকিস্তান কি এখনো যুক্তরাষ্ট্রকে নিরাপত্তার নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে দেখে? আল জাজিরার উপস্থাপকের এমন প্রশ্নের জবাবে দার বলেন, সম্প্রতি ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের পর যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছাতে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছিল। সাক্ষাৎকারের শুরুতে কাতারে ইসরায়েলের হামলার প্রসঙ্গও আসে, যেখানে হামাসের নেতাদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল।
দার বলেন, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রে হামলার ইসরায়েলি অজুহাত একেবারে ভিত্তিহীন। কাতার তখন গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও মিসরের সঙ্গে মধ্যস্থতা করছিল। সেই সময় দেশটিতে ইসরায়েলের হামলা ‘‘দস্যুবৃত্তি’’ ছাড়া কিছু নয়।
তিনি বলেন, ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যের বহু দেশে হামলা চালিয়েছে। এরপরও ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক আইন, মানবাধিকার নীতিমালা ও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবগুলোর কোনও প্রভাবই নেই। ইসহাক দার বলেন, ‘‘এতে বোঝা যায়, বহুপাক্ষিক ব্যবস্থায় এখনই বড় ধরনের সংস্কার দরকার। বর্তমানে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ও জাতিসংঘ ব্যবস্থারই বড় ধরনের সংস্কার দরকার।’’
পাকিস্তানের এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘বিশ্বে শান্তি রক্ষার জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ গঠন করা হয়েছে। আর এর প্রস্তাবগুলো বছরের পর বছর ধরে উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। গাজা ইসরায়েলের হাতে, কাশ্মির ভারতের হাতে। তাহলে বহুপাক্ষিক ব্যবস্থা থেকে আমরা কী আশা করতে পারি?’’
সব মুসলিম দেশ কি সমানভাবে ভূমিকা রাখছে, এমন প্রশ্নের জবাবে দার বলেন, পাকিস্তান মনে করে বড় কিংবা ছোট; সব রাষ্ট্রের মর্যাদা সমান হওয়া উচিত। তিনি ভারতের উদাহরণ দিয়ে বলেন, কিছু দেশ মনে করে তারা আধিপত্য বিস্তার করবে, নিরাপত্তার নেতৃত্ব দেবে। কিন্তু ৭ থেকে ১০ মে যা ঘটেছে, তা প্রমাণ করেছে; এই আধিপত্যের অবসান ঘটেছে।
গাজা যুদ্ধের অবসানের বিষয়ে ইসহাক দার বলেন, যুদ্ধ অবসানের সেরা উপায় কূটনীতি ও আলোচনা। এতে সময়ের দরকার হয়, কিন্তু আলোচনায় বসলেই সমাধান সম্ভব। যদি আলোচনায় বসার ইচ্ছা না থাকে, নেপথ্যে খারাপ উদ্দেশ্য থাকে, তাহলে কখনোই আলোচনায় আন্তরিকতা থাকবে না।
ইসরায়েল কাতারের পর পাকিস্তানে হামলা চালাতে পারে কি না—এমন প্রশ্নের ইসহাক দার বলেন, ভারত চেষ্টা করেছিল এবং ইসরায়েল তাতে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছিল। কিন্তু বিশ্ব দেখেছে, সেটি ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা প্রস্তুত। আবারও বলছি, আমরা শান্তি চাই। পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হিসেবে পাকিস্তান এই অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করতে চায় না। কারণ এর পরিণতি গোটা অঞ্চল ছাড়িয়ে যাবে।
তিনি বলেন, ইসরায়েল ও ভারতই জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব মানে না। প্রস্তাবের বাস্তবায়ন ব্যর্থ হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পরিষদের বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে। এতে হয়তো হস্তক্ষেপের প্রয়োজনও হতে পারে।
সূত্র: ডন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: