ঘরবাড়ি থেকে ফিলিস্তিনিদের তাড়িয়ে দিচ্ছে ইসরায়েল
প্রকাশিত:
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১০:২১
আপডেট:
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১২:০৬

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা এখন পোরোটাই ধ্বংসস্তূপ, ডানে-বামে, সামনে-পেছনে—সবখানেই। বোমায় বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি, ছিন্নভিন্ন লাশ আর রক্তে ভেজা গলিপথ পেছনে ফেলে গাজা সিটির বাসিন্দারা এখন মরিয়া হয়ে ছুটছেন বাঁচার তাগিদে।
দীর্ঘদিনের নৃশংস হত্যাযজ্ঞের পর গাজা সিটি থেকে পালানোর একটি অস্থায়ী পথ খুলে দিয়েছে ইসরায়েলের বর্বর সেনাবাহিনী। তাও আবার মাত্র ৪৮ ঘণ্টার জন্য। খবর আলজাজিরা, বিবিসি, এপি, সিএনএন ও রয়টার্সের।
সালাহউদ্দিন সড়ক হয়ে দক্ষিণমুখী হওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে বাসিন্দাদের। এই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই পার হতে হবে গাজা সিটির লাখ লাখ মানুষকে। কিন্তু যাবে কোথায়? গন্তব্যও অজানা!
আবার চলতি পথেও নিশ্চয়তা নেই জীবনের—এ যেন মুক্তি নয়, বরং অনিশ্চিত জীবনের জন্য ছুটে চলা এক জীবনমরণ লড়াই।
বুধবার ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র অ্যাভিচাই আদ্রি ঘোষণা করেছেন, সালাহউদ্দিন সড়ক হয়ে দক্ষিণে যেতে পারবেন গাজা সিটির বাসিন্দারা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে তিনি বলেছেন, বুধবার থেকে শুরু করে শুক্রবার পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টার জন্য এই রুট খোলা থাকবে।
তবে এই পথ দক্ষিণের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত নয়। পথটি নেটজারিম করিডর দিয়ে গেছে, যা ২০২৪ সালে সামরিক অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।
এটি গাজার ভূখণ্ডকে দুই ভাগে বিভক্ত করে। এই বিকল্প পথ মূল পথের তুলনায় প্রায় ১.৬ কিলোমিটার দীর্ঘ। আদ্রি আরও জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সালাহউদ্দিন সড়কের ভেতর দিয়ে যাওয়ার জন্য দ্বিতীয় পথও খোলা হবে।
গাজার শেখ রাদওয়ান এলাকার ৩২ বছর বয়সি মা লিনা আল-মাঘরেবী বিবিসিকে জানিয়েছেন, যাত্রা এবং তাঁবুর খরচ মেটাতে আমাকে গহনা বিক্রি করতে হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি আসলে গাজাবাসীর মুক্তির দরজা নয়, বরং অবরুদ্ধ জনগোষ্ঠীকে অনিশ্চয়তার পথে ঠেলে দেওয়ার এক পরিকল্পিত কৌশল। কারণ, দক্ষিণের পথে গেলেও তাদের নিরাপত্তা কিংবা জীবনযাত্রার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
এ ঘোষণা আসার আগে থেকেই শহরটিতে হামলা বাড়িয়েছে ইসরায়েল। মঙ্গলবার থেকে শুরু হয় স্থল হামলা। গাজা সিটির উত্তর-পশ্চিমে শেখ রাদওয়ান এলাকায় বোমা ভর্তি রোবট দিয়ে হামলা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। শহরজুড়ে তীব্র হামলা অব্যাহত রাখায় ঘর ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন বাসিন্দারা।
গাজা সিটির আল-রানতিসি শিশু হাসপাতালেও চলেছে ইসরায়েলি নৃশংসতা। শিশু হাসপাতালে হামলার কড়া নিন্দা জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হাসপাতালটিকে ধারাবাহিকভাবে তিনবার লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। কমপক্ষে ৪০ জন রোগী হাসপাতাল থেকে পালিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এছাড়া দেইর আল-বালাহতেও একই সঙ্গে গুলিবর্ষণ ও আর্টিলারি হামলা চালিয়েছে বর্বর সেনারা। বুধবার পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় ৫১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ৩৮ জনই গাজা সিটির বাসিন্দা।
গাজা সিটিতে চলমান স্থল হামলায় তাদের দুটি ডিভিশন অংশ নিয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। এ দুটি ডিভিশনে প্রায় ২০ হাজার সেনা রয়েছে।
গাজা সিটিতে হামলা বেড়ে যাওয়ায় গাজা সিটির টেলিফোন ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে গেছে। এতে করে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে পুরো শহরটি।
এদিকে ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরিকল্পনা করছে ইউরোপীয় কমিশন। এটি মূলত ইসরায়েলের সেই বাণিজ্যের ওপর প্রভাব ফেলবে, যা ইউরোপের সঙ্গে বিশেষ বাণিজ্য (প্রেফারেনশিয়াল ট্রেড পার্টনার) সুবিধার আওতায় করা হয়।
২০২৪ সালে ইসরায়েল ও ইইউর মোট বাণিজ্যের প্রায় ৩৭ শতাংশই এই অংশের মধ্যে পড়ে।
ইইউর বৈদেশিক নীতি প্রধান কাজা কাল্লাস বলেছেন, এই পদক্ষেপ ইসরায়েলের জন্য বিপদ ডেকে আনবে। তবে এটি কার্যকর করতে হলে ইউরোপের সদস্য দেশগুলোর সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন প্রয়োজন, যা সহজ নয়।
গাজার সহায়তায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন যুদ্ধবিধ্বস্ত উপত্যকার বিভিন্ন এলাকায় কাজ করা ২০টিরও বেশি মানবিক সংস্থার নেতারা।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গাজায় এখন পর্যন্ত ৬৪ হাজার ৯৬৪ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ৬৫ হাজার ৩২১ জন আহত হয়েছেন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: