হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে হাজার হাজার মানুষের বিক্ষোভ
প্রকাশিত:
১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ২০:০৮
আপডেট:
১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৩:৫২
একের পর এক শিশু নির্যাতন কেলেঙ্কারির ঘটনায় কার্যকর কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগে হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন দেশটির হাজার হাজার নাগরিক। শনিবার দেশটির রাজধানী বুদাপেস্টে অরবানের পদত্যাগের দাবিতে ওই বিক্ষোভ করেছেন তারা।
২০১০ সালে ক্ষমতায় ফেরার পর হাঙ্গেরিতে শিশুদের সুরক্ষায় অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন অরবান। তবে গত কয়েক বছরে দেশটিতে একাধিক শিশু নির্যাতন কেলেঙ্কারির ঘটনা ফাঁস হয়েছে। কেলেঙ্কারির এসব ঘটনায় ভিক্টর অবরবান নেতৃত্বাধীন দেশটির সরকারের ভিত কেঁপে উঠছে।
ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার হাঙ্গেরিতে অনুষ্ঠিত সরকারবিরোধী বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিয়েছেন দেশটির বিরোধী দল টিসজার নেতা পিটার মাগিয়ার। গত সেপ্টেম্বরে রাজধানী বুদাপেস্টের একটি সংশোধনাগারে কিশোর নির্যাতনের নতুন অভিযোগ সামনে আসার পর ওই কর্মসূচি পালন করে দলটি।
সংশোধনাগারের নিরাপত্তা ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, সজোলো স্ট্রিট কিশোর সংশোধনাগারের পরিচালক এক কিশোরের মাথায় লাথি মারছেন। চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে ওই সংশোধনাগারের চার কর্মীকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে দেশটির সরকার এ ধরনের সব শিশু প্রতিষ্ঠানকে সরাসরি পুলিশের তত্ত্বাবধানে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
শনিবার দেশটির রাজধানী বুদাপেস্টের কুয়াশচ্ছন্ন রাস্তায় ‘শিশুদের সুরক্ষা দাও!’ লেখা ব্যানার নিয়ে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেন। এ সময় অপরাধীদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা। কয়েক বছর আগের এক শারীরিক নির্যাতনের ঘটনায় ভুক্তভোগীদের প্রতি সংহতি জানাতে কেউ কেউ নরম খেলনা ও মশালও বহন করেন।
শুক্রবার দেশটির সংবাদমাধ্যম মাগিয়ার ২০২১ সালের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, রাষ্ট্র পরিচালিত সেবাকেন্দ্রগুলোতে থাকা শিশুদের এক পঞ্চমাংশেরও বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছিল।
শনিবারের বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ৭৩ বছর বয়সী পেনশনভোগী জুজসা সালাই এএফপিকে বলেন, সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুদের সঙ্গে যা করা হচ্ছে, তা নিয়ে আমরা ক্ষুব্ধ। যদিও অরবানের সরকার বলেছে, সন্দেহজনক শিশু নির্যাতনের ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
আগামী এপ্রিলে হাঙ্গেরিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। গত ১৫ বছরের শাসনকালে সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান। সম্প্রতি সংবাদমাধ্যম ম্যান্ডিনারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অরবান বলেছেন, শিশু নির্যাতনের ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি এই ধরনের ঘটনাকে অগ্রহণযোগ্য ও অপরাধমূলক বলে অভিহিত করেছেন তিনি। তিনি বলেন, এমনকি কিশোর অপরাধীদের সঙ্গেও এভাবে আচরণ করা উচিত নয়।
শনিবারের বিক্ষোভে অংশ নেওয়া দেশটির নাগরিকরা বলেছেন, অরবানের প্রতিক্রিয়া যথেষ্ট নয়। ১৬ বছর বয়সী ডেভিড কোজাক এএফপিকে বলেন, সাধারণত এ ধরনের ঘটনার পর কোনও সরকারই টিকে থাকতে পারে না।
গত বছর জনগণের প্রচণ্ড চাপের মুখে পদত্যাগে বাধ্য হন দেশটির প্রেসিডেন্ট কাটালিন নোভাক। রাষ্ট্র পরিচালিত শিশুদের একটি বিদ্যালয়ের এক উপপরিচালককে ক্ষমা করে দেওয়ার ঘটনায় প্রবল চাপের মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি। তার বিরুদ্ধে ওই বিদ্যালয়ের পরিচালকের করা যৌন নির্যাতনের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়।
কোজাক বলেন, নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, এটি সরকারের কাছে সমস্যা নয়। সমস্যা হলো বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: