৩ সাংবাদিককে জামায়াতপন্থি আইনজীবীর হেনস্তা, সাজা দিতে চাইলেন বিচারক
প্রকাশিত:
২৮ অক্টোবর ২০২৫ ১৬:৩৩
আপডেট:
২৮ অক্টোবর ২০২৫ ১৯:৩২
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে জামায়াতপন্থি কয়েকজন আইনজীবীর হেনস্তার শিকার হয়েছেন তিন সাংবাদিক। পরে ওই তিন সাংবাদিককে কাঠগড়ায় ডেকে নিয়ে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিব উল্লাহ পিয়াস কারাগারে পাঠানোর ‘হুমকি’ দেন। কিছুক্ষণ পর ক্ষমা চাওয়ার শর্তে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
বুধবার (২৮ অক্টোবর) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গণে এ ঘটনা ঘটে।
এদিকে আইনজীবী ও বিচারকের দ্বারা সাংবাদিকদের হেনস্তার ঘটনায় প্রতিবাদ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ঢাকার নিম্ন আদালতে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন কোর্ট রিপোর্টার্স ইউনিটি (সিআরইউ)।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের মৃত্যুর মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের আজ দিন ধার্য ছিল। এ মামলায় আসামি তার বান্ধবী আমাতুল্লাহ বুশরা আদালতে হাজির হন। ফারদিনের বাবা নুর উদ্দিন রানাও আদালতে হাজির ছিলেন। পরে শুনানি শেষে আদালত থেকে আসামি বুশরা বের হন। তখন আসামির ভিডিও ফুটেজ নিতে যান কালের কণ্ঠের নিজস্ব প্রতিবেদক মাসুদ রানা, একুশে টেলিভিশনের রিপোর্টার আরিফুল ইসলাম এবং দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার রিপোর্টার আরিফুল ইসলাম। এসময় ঢাকা আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য জামায়াতপন্থি আইনজীবী রেজাউল হক রিয়াজ ও হাতিরঝিল থানা জামায়াতের রোকন ও আইনজীবী আক্তারুজ্জামান ডালিমসহ অনেকেই ভিডিও করতে বাধা দেন। সাংবাদিকরা পেশাগত কারণে ভিডিও করার কথা জানালে তারা আরও চড়াও হন। এসময় তারা সাংবাদিকদের বিচারকের কাছে ধরে নিয়ে যেতে জোরাজারি করেন। তবে সাংবাদিকরা জানান, আসামির ছবি বা ভিডিও নিতে আদালতের অনুমতির প্রয়োজন নেই। এই কথা বলায় উপস্থিত আইনজীবীরা ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিব উল্লাহ পিয়াসের আদালতের বাইরে চারদিক থেকে ঘিরে ধরেন। এক পর্যায়ে আইনজীবী আক্তারুজ্জামান ডালিম সাংবাদিকের মোবাইল ফোন কেড়ে নেন। এসময় এই মামলার বাদী নুর উদ্দিন রানাকে দেখে হুমকি দিতে থাকেন তিনি। বাদীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি সাংবাদিকদের ডেকে এনেছেন।
এরপর ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিব উল্লাহ পিয়াস এই তিন সাংবাদিকসহ আইনজীবী আক্তারুজ্জামান ডালিমকে এজলাসে ডেকে নেন। এসময় রেজাউল হক রিয়াজ কৌশলে পালিয়ে যান। তখন বিচারক তিন সাংবাদিককে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করান। আদালত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনাদের পরিচয় দেন।
সাংবাদিকদের পরিচয় জানার পর বিচারক বলেন, আপনারা কোর্টের সামনে হাঙ্গামা করেছেন। এখন বেলা ১১টা ৩৮ বাজে, আপনাদের কারাগারে পাঠানো হবে। আর কোনো কথা হবে না। আপনাদের সবার মোবাইল নিয়ে নেওয়া হোক। মিনিট দুয়েক পর বিচারক বলেন, আপনারা নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলে ছেড়ে দেবো। নাহলে কারাগারে যেতে হবে। কোনো ছাড় নেই। পরে এই তিন সাংবাদিককে ছেড়ে দেওয়ার অনুমতি দেন আদালত।
সাংবাদিক মাসুদ রানা বলেন, সংবাদ সংগ্রহে গিয়েছিলাম। কিন্তু কয়েকজন আইনজীবী ভিডিও তুলতে বাধা দিয়ে মব সৃষ্টি করে। পরে বিচারক অতিউৎসাহী হয়ে আমাদের তিনজনকে কাঠগড়ায় ডাকেন। আমাদের পরিচয় জেনে বিচারক বলেন, আপনারা বসেন। সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হবে।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার রিপোর্টার আরিফুল ইসলাম জানান, আমরা আসামির ভিডিও ধারণ করতে গেলে তাদের আইনজীবীরা চড়াও হন। একজনের মোবাইল কেড়ে নেন। ভিডিও ধারণ করায় বিচারকের কাছে জোর করে তারা আমাদের নিতে চেয়েছে। আমরা যেতে না চাওয়ায় তারা খুব খারাপ আচারণ করতে থাকেন। এসময় আরেক আদালতের বিচারক আমাদের এজলাসে ডাকেন। এরপর কাঠগড়ায় যেতে বলেন। বিচারক কোনো আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর হুমকি দেন। কোনো অপরাধ না করেই নিঃশর্তে ক্ষমা চাওয়া লেগেছে। বিষয়টি খুব দুঃখজনক।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আইনজীবী আক্তারুজ্জামান ডালিম বলেন, একটা ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে। পরে বিচারক ডেকে সমাধান করে দিয়েছেন।
আইনজীবী রেজাউল হক রিয়াজ বলেন, একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে। এজন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
এ বিষয়ে ঢাকার কোর্ট রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি লিটন মাহমুদ বলেন, সাংবাদিকদের ওপর হামলার চেষ্টা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এদিন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিবুল্লা পিয়াসের আদালতের বাইরে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে কোর্টে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয় অথবা ব্যাঘাত সৃষ্টি করে এমন কোন অপেশাদার আচরণ করেননি। সাংবাদিকরা শুধুমাত্র তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করেছেন। সেখানে জামায়াতের আইনজীবীদের দ্বারা হেনস্তার শিকার হন সাংবাদিকরা। এসময় ওই সব আইনজীবীদের হট্টগোলে আদালতে পরিবেশ নষ্ট হয়। যার ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। এসব বিবেচানায় না নিয়ে সংশ্লিষ্ট কোর্টের বিচারক হাসিবুল্লা পিয়াস অতিউৎসাহী হয়ে উল্টো তিন সাংবাদিককে ডেকে নিয়ে জেলে পাঠানোর হুমকি দেন। একজন বিচারকের কাছে এমন আচরণ কাম্য নয়। যা অত্যন্ত নিন্দনীয়। আমি ওই বিচারকের অপসারণসহ বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই। এ বিষয়ে আমরা প্রধান বিচারপতির কাছে লিখিত অভিযোগ জানাব।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: