আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংস্কারে সহযোগিতা করবে যুক্তরাষ্ট্র
প্রকাশিত:
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:০১
আপডেট:
১৫ অক্টোবর ২০২৪ ১৫:৩৯
অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার সম্পর্কে জানতে চেয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এক্ষেত্রে আর্থিক সংস্কারে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে যুক্ত হতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা করেছে ঢাকা-ওয়াশিংটন।
রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ঢাকা সফররত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক শেষে এসব কথা জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন।
পররাষ্ট্র-সচিব বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে, এক মাসের একটু বেশি। অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে তারা একসঙ্গে কাজ করতে চান এবং সেটার প্রতিফলন হিসেবে সরকার গঠনের দ্বিতীয় মাসের প্রথমে তারা এ প্রতিনিধিদলটি পাঠিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে কাজ করে যাওয়ার অঙ্গীকার তারা পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
জসীম উদ্দিন বলেন, সরকারের সংস্কার পরিকল্পনা সম্পর্কে জানার আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন তারা। আজকের বৈঠকে পরিবর্তিত পরিস্থিতি এবং সরকারের সংস্কার বিষয়ে যে সমস্ত ধ্যানধারণা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে তা সম্পর্কে একটা সাধারণ আলোচনা হয়েছে। আমরা আর্থিক সংস্কারে যে সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করেছি, এসব সেক্টরে যুক্তরাষ্ট্র সার্বিকভাবে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।
তিনি বলেন, সরকারের বিশেষ অগ্রাধিকার বিবেচনায় আর্থিক খাত ও রাজস্ব খাতে সংস্কারের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য সহযোগিতার ক্ষেত্র দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এতে যুক্তরাষ্ট্র পরিবর্তিত পরিস্থিতি সম্পর্কে একটা সম্যক ধারণা পেল এবং সরকার কী করতে চায় সে সম্পর্কেও একটা ভালো ধারণা পেল। আমরা আশা করি, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অর্থবহভাবে যুক্ত হওয়ার জন্য এটা একটা ভিত্তি এবং পরবর্তীতে আমরা হয়ত বিভিন্ন পর্যায়ে এ আলোচনাকে চালিয়ে নিয়ে যাব।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব দপ্তরের ডেপুটি আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যানের নেতৃত্বে মার্কিন প্রতিনিধিদল সকালে পদ্মায় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে প্রতিনিধিদল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে যমুনায় সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। পরে পদ্মায় প্রতিনিধিদলটি পররাষ্ট্র-সচিব মো. জসীম উদ্দিনের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ সভায় অংশ নেন।
প্রতিনিধিদলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার (ইউএসএআইডি) উপ-সহকারী প্রশাসক অঞ্জলি কাউর, যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন লিঞ্চ ছিলেন।
পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরানো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা নিয়ে করা প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র-সচিব বলেন, আজকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ ও ইউএসএআইডির মধ্যে বার্ষিক সহযোগিতা চুক্তি হয়েছে। আমরা বিস্তারিতভাবে আর্থিকখাতের সংস্কারের কথাবার্তা বলেছি। পাচার হওয়া অর্থ অন্যান্য বিষয়ে প্রাথমিক কথা হয়েছে। এ বিষয়ে হয়ত যুক্তরাষ্ট্রের যে সক্ষমতা আছে সেটা আমরা ব্যবহার করব। আলোচনাটা মাত্র শুরু হয়েছে। এটার হয়ত চূড়ান্ত রূপরেখা করতে কিছুটা সময় লাগবে।
সুনির্দিষ্ট কোনো সহায়তা চাওয়া হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে জসীম উদ্দিন বলেন, এটা প্রাথমিক আলোচনা ছিল। আজ বিকেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনরের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হবেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনের সঙ্গে আলোচনায় হয়ত সুনির্দিষ্ট বিষয়গুলো উঠে আসতে পারে।
শ্রম আইন নিয়ে বৈঠক আলোচনা হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্র-সচিব বলেন, শ্রম আইন নিয়ে আমরা যে সমস্ত পদক্ষেপ নিয়েছি সেগুলো তাদের অবহিত করেছি এবং তারা পদক্ষেপ সম্পর্কে নোট নিয়েছেন। এগুলোকে তারা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি বলে স্বীকৃতি দেন। এক্ষেত্রে এ আলোচনাটা কন্টিনিউ করবে।
তৈরি পোশাক খাতে যে অস্থিরতা চলছে এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ আছে কি না এবং জিএসপি প্লাস ফিরে পাওয়া নিয়ে আলোচনার প্রশ্নে জসীম উদ্দিন বলেন, আজকের বৈঠকে এ ধরনের কোনো কথা হয়নি। জিএসপি নিয়ে একটা সাধারণ আলোচনা হয়েছে। এটার যে প্রক্রিয়া এ সম্পর্কে কথা হয়েছে।
প্রতিরক্ষা ক্রয় নিয়ে আজকের বৈঠকে আলোচনা হয়নি বলেও জানান পররাষ্ট্র-সচিব। তিনি জানান, ডিএফসি (ডেভলপমেন্ট ফাইন্যান্স করপোরেশন) থেকে অর্থায়ন পাওয়া নিয়ে একটা সাধারণ আলোচনা হয়েছে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট আলোচনা হয়নি।
র্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তোলার বিষয়ে এবং নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার প্রশ্নে পররাষ্ট্র-সচিব বলেন, র্যাবের সংস্কার নিয়ে যে সমস্ত কাজকর্ম করছি, সেগুলো সম্পর্কে তাদের অবহিত করেছি। এটা একটা চলমান আলোচনা। নির্বাচন নিয়ে কোনো সহায়তা চাওয়া হয়নি।
বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জসীম উদ্দিন জানান, আমরা বলেছি, এটা একটা দীর্ঘমেয়াদি ইস্যু। এটার সমাধান হওয়া উচিত। রোহিঙ্গা ইস্যুতে সম্প্রতি যে সব উন্নয়ন হয়েছে সেটার বিষয়ে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: