রবিবার, ২২শে জুন ২০২৫, ৮ই আষাঢ় ১৪৩২


মৃত্যু কামনা করা কি জায়েজ?


প্রকাশিত:
২২ জুন ২০২৫ ১৮:৪৬

আপডেট:
২২ জুন ২০২৫ ২৩:৩১

ছবি সংগৃহীত

আমরা একসময় দুনিয়ায় ছিলাম না। মহান আল্লাহ আমাদেরকে দুনিয়ায় প্রেরণ করেছেন। আল্লাহর ইচ্ছে অনুযায়ী ভূপৃষ্ঠ থেকে চলে যেতে হবে পরপারে। এই আসা যাওয়ার মাঝে কিছু জগতে শুধু শান্তি আর অকল্পনীয় সুখ। আর কোন জগতে শুধু দু:খ আর কষ্ট। আর কিছু জগত শান্তি ও দু:খ মিশ্রিত।

যে জগতকে আল্লাহ যে জন্য সৃষ্টি করেছেন সেখানে তা ব্যতীত আর অন্য কিছু জুটবে না। যেখানে শুধু শান্তি আর সুখ তার নাম জান্নাত। দু:খভরা জায়গাটি হচ্ছে জাহান্নাম। সুখ-দুখ ও হাসি-কান্না মিশ্রিত হচ্ছে আমাদের এ দুনিয়া।

পৃথিবীতে এমন কোন মানুষ নেই যে সুখের রাজ্যে বাস করে কখনো তাকে দু:খ স্পর্শ করে না। যতই ধনাঢ্য হোক, সে চির সুখী এমনটা কেউ দাবি করতে পারবে না।

মুমিনদেরকে আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন সময় মুসিবত দিয়ে পরীক্ষা করেন। যা স্বয়ং আল্লাহ কুরআনে বলেছেন, হে মুমিনগণ! ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে তোমরা সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন। (সূরা: বাকারা : ১৫৩)

মুসিবতে করণীয় কি সে সম্পর্কে আল্লাহ বলে দিয়েছেন। তারা যেন বিপদে আপদে ধৈর্যধারণ করে। দুনিয়ার এ কষ্টে মৃত্যু কামনা করা ইসলাম সে অনুমতি দেয়নি।

হাদিস শরীফে রাসূল সা: এ ব্যপারে নিষেধ করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: তোমাদের কেউ মৃত্যু কামনা করবে না। কেননা, (কামনাকারী) সে যদি সৎকর্মশীল হয় তবে (বেঁচে থাকলে) হয়ত সে আরো সৎকর্ম করবে। কিংবা সে পাপাচারী হলে হয়ত সে অনুতপ্ত হয়ে তাওবা করবে। (সহিহ বুখারি) হাদিস নং: ৬৭৪১

এ হাদিসে কোনও কষ্টের কারণে মৃত্যু কামনা করতে নিষেধ করা হয়েছে। কোন রকম কষ্ট তা নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি। কষ্ট দুনিয়াবী হতে পারে এবং পরকালীনও হতে পারে। দুনিয়াবী কষ্ট বিভিন্ন রকমের। অসুখ-বিসুখের কষ্ট, খাদ্যকষ্ট, মানসিক কষ্ট ইত্যাদি।

পরকালীন কষ্ট বলতে এমন কোনও ফিতনাকে বোঝায়, যে কারণে নিজের দীন ও ঈমান রক্ষা কঠিন হয়ে যায়। এখানে মূলত দুনিয়াবী কষ্টের কথা বোঝানো হয়েছে। দুনিয়াবী কষ্টের কারণে মৃত্যু কামনা করা জায়েয নয়।

কেননা আগের হাদিসসমূহ দ্বারা আমরা জানতে পেরেছি দুনিয়াবী কষ্টের ভেতর কল্যাণ নিহিত থাকে। দুনিয়ার জীবনটাই তো পরীক্ষার জীবন। এখানে মানুষকে যেমন সুখ-সাচ্ছন্দ্য দ্বারা পরীক্ষা করা হয়, তেমনি পরীক্ষা করা হয় কষ্ট-ক্লেশ দ্বারাও। দেখা হয় সুখ-সাচ্ছন্দ্যে সে কেমন শোকর আদায় করে আর কষ্ট-ক্লেশে কতটুকু ধৈর্য ধরে।

শোকর দ্বারা যেমন আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ হয়, তেমনি তা লাভ হয় সবর দ্বারাও। কষ্ট-ক্লেশে সবর করলে গুনাহ মাফ হয় ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। এটা তো আখিরাতের অতিবড় লাভ। মৃত্যুকামনা দ্বারা সেই লাভ পরিত্যাগ করা কোনও বুদ্ধির কথা নয়। মু'মিন ব্যক্তি আল্লাহর পথের যাত্রী। প্রতি কদমে সে আল্লাহর নৈকট্যের দিকে অগ্রসর হয়। প্রতিটি নেককাজ দ্বারা তার নৈকট্য বৃদ্ধি পায়।

আল্লাহর নৈকট্য লাভই তার পরম লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য মৃত্যু দ্বারা ব্যহত হয়। যা পরম লক্ষ্যকে বাধাগ্রস্ত করে, আল্লাহর পথের পথিক তা কিভাবে চাইতে পারে? কষ্টের কারণে? কোনও কষ্টই স্থায়ী নয়। যেই কষ্টে পড়ে মৃত্যু কামনা করা হয়, আল্লাহ চাহেন তো একদিন তা ঘুচে যাবেই।

অনেক লোক অজ্ঞতাবসত দুনিয়ার কষ্ট ক্লেশ সহ্য করতে না পেরে মৃত্যু কামনা করে ও তরিত মৃত্যুর জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে যা নিতান্ত নির্বুদ্ধিতা ও দুর্বল ঈমানের লক্ষণ।

হ্যাঁ, যদি ধর্মীয় কোন ফিতনার আশংকা করে তাহলে তার জন্য মৃত্যু কামনার অনুমতি রয়েছে। হাদিসে তার নিয়মও বর্ণিত হয়েছে।

আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম (সা.) বলেছেন: তোমাদের কেউ দুঃখ-দৈন্যে নিপতিত হওয়ার কারণে যেন মৃত্যু কামনা না করে। যদি এমন একটা কিছু করতেই হয়, তা হলে সে যেন বলে ‘হে আল্লাহ! আমাকে জীবিত রাখ, যতদিন পর্যন্ত আমার জন্য জীবিত থাকা কল্যাণকর হয় এবং আমাকে মৃত্যু দাও, যখন আমার জন্য মৃত্যু কল্যাণকর হয়। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং: ৫২৬৯)

তাই বিপদ যত প্রকট হোক মুমিন সর্বাবস্থায় ধৈর্যের পরিচয় দিবে। ধৈর্য ধারণকারীর সাফল্য সুনিশ্চিত, কারণ মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা ধৈর্য ধারণকারীর সঙ্গে থাকেন; আর আল্লাহ তায়ালা যার সঙ্গে থাকবেন, তার সফলতা অবধারিত।

লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া বাবুস সালাম, বিমানবন্দর ঢাকা।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top