বুধবার, ২৭শে আগস্ট ২০২৫, ১২ই ভাদ্র ১৪৩২


নামাজ পড়ি, ইবাদত করি, তবুও দোয়া কবুল হয় না কেন?


প্রকাশিত:
২৭ আগস্ট ২০২৫ ১৩:১৯

আপডেট:
২৭ আগস্ট ২০২৫ ১৫:৩২

ছবি সংগৃহীত

আল্লাহতায়ালা সমগ্র জগৎ সৃষ্টি করেছেন মানুষের সেবাদানের জন্য আর মানুষকে সৃজন করেছেন একমাত্র তারই ইবাদত করার উদ্দেশ্যে।

কিন্তু প্রশ্ন হয়, আমরা যে মহান মালিক আল্লাহর ইবাদত করি এবং ইবাদত শেষে তার সমীপে বিবিধ দোয়া করি, আমাদের দোয়া কবুল হয় না কেন? কুরআন-সুন্নাহ গবেষণা করলে এর যেসব কারণ জানা যায়, সেগুলোকে ক্রমান্বয়ে কিছুটা বিশদভাবে তুলে ধরা হচ্ছে।

১. শিরকযুক্ত ঈমান: যেসব মানুষের ঈমানের সাথে শিরক মিশ্রিত আছে, তাদের কোনো প্রকার ইবাদত কবুল হবে না এবং কোনো দোয়াও কবুল হবে না।

যেমন- আল্লাহ, রাসুল ও আখেরাতের ওপর বিশ্বাস থাকা সত্ত্বেও কারো অন্তরে যদি শিরকযুক্ত আকিদা-বিশ্বাস থাকে, তবে তার নামাজসহ কোনো ইবাদত কবুল হবে না এবং কোনো দোয়াও কবুল হবে না।

যেমন- কোনো নবী-রাসুল বা পীর মুর্শিদকে আল্লাহর মত হাযির-নাযির মনে করা, কোনো পীর-বুজুর্গ ইচ্ছা করলে কাউকে ধনী বা গরীব বানিয়ে দিতে পারে, সন্তান দান করতে পারে, তাদেরকে এ ধরণের শক্তি সম্পন্ন বলে বিশ্বাস রাখে।

এছাড়া সেজদায়ে তাহিয়্যা বা সম্মানসূচক সেজদার নামে কাউকে নামাজের সেজদার মত সেজদা করাকে বৈধ বা জায়েজ মনে করা। এসবই হলো শিরক যুক্ত ঈমান। এমন শিরক যুক্ত ঈমানদার ব্যক্তির ইবাদত ও দোয়া কবুল হয় না।

২. পিতামাতার অবাধ্যতা: কেউ যদি পিতামাতার অবাধ্য হয় কিংবা সংগত কারণে পিতামাতা সন্তানের প্রতি নারাজ থাকেন, তখন এমতাবস্থায় সন্তানের নামাজসহ অন্যান্য ইবাদত মাসয়ালা অনুযায়ী সহিহ হলেও পিতামাতার অবাধ্যতার কারণে আশংকা আছে যে, এমন অবাধ্য সন্তানের ইবাদত ও দোয়া কবুল হবে না- যতক্ষণ না সে নিয়মানুযায়ী তওবা করে।

৩. হারাম মাল ভক্ষণ: হারাম পন্থায় উপার্জিত সম্পদ ভোগ করে ইবাদত ও দোয়া করলে তা কবুল হবে না। আল্লাহ তায়ালার কাছে বান্দার তওবা-এস্তেগফার ও চোখের পানি বড়ই মূল্যবান; কিন্তু হারাম উপায়ে উপার্জিত মাল ভক্ষণকারী ও লেবাস-পোশাক ব্যবহারকারী ব্যক্তি আল্লাহর দরবারে মোনাজাতের মাধ্যমে হাত উত্তোলন করে রাখতে রাখতে যদি তা অবশও হয়ে যায় এবং বিরামহীনভাবে ক্রন্দন করতে করতে যদি তার চোখের অশ্রু নিঃশেষ হয়ে যায়, তবুও তা আল্লাহ তায়ালার কাছে মূল্যহীন।

সুতরাং নিজের কষ্টে করা ইবাদত ও একান্ত করা দোয়া যেন আল্লাহর দরবারে কবুল হয়, এজন্য হারাম উপার্জন থেকে বেঁচে থাকা পূর্বশর্ত।

৪. অহংকার: ইবাদত ও দোয়ার মূল কেন্দ্র হচ্ছে হৃদয়, মন। হৃদয়, মন বিনম্র ও বিগলিত না হলে তা হয় সূরতে ইবাদত ও সূরতে মুনাজাত; বাস্তবে ইবাদত ও মুনাজাত নয়। বিনয়ের বিপরীত দিক হলো অহংকার।

স্বাস্থ্য, সৌন্দর্য্য, ধনসম্পদ, ক্ষমতা, শিক্ষা, দীক্ষা, বংশীয় কৌলিন্য ইত্যাদির কারণেই সাধারণত অন্তরে অহংকার সৃষ্টি হয়। এহেন অবস্থায় বান্দা যখন নামাজে দাঁড়ায় তখনো দাম্ভিকতা ভাবাপন্ন অবস্থায়ই দাঁড়ায়। আর এ ভাবটা নিজেকে বান্দা বা গোলাম হিসেবে মানার পরিপন্থি। ফলে অহংকারী ব্যক্তি মাটিতে ললাট রাখলেও বাস্তবে তার ললাট শির নত করে না। এ কারণে অহংকারীর নামাজ কবুল হয় না।

হাদিস শরিফে পরিস্কার এ কথা বলা হয়েছে- নিশ্চয় আল্লাহতায়ালা এমন বান্দার ইবাদত কবুল করেন না, যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণ অহংকার থাকে।

৫. হিংসা-বিদ্ধেষ: হিংসা বলা হয় হিংসিত ব্যক্তির সুখ-শান্তি বা কল্যাণ জনক কিছু দেখে অন্তর্জালা সৃষ্টি হওয়া এবং তার দুঃখ-কষ্ট বা বিপদে আনন্দিত হওয়া। এই হিংসার কারণে নামাজসহ অন্যান্য নেক আমল ও দোয়া-মুনাজাত পুড়ে ছারখার হয়ে যায় বলে হাদিস শরিফে উল্লেখ রয়েছে।

৬. গীবত: গীবত বলা হয় অগোচরে অন্যের দোষ চর্চা করা, যা শুনলে সে কষ্ট পায়। এটা একটি ভয়াবহ কবিরা গুনাহ। এ গীবতের কারণে নিজের অনেক কবুল হওয়া আমল কথিত সমালোচিত ব্যক্তির আমলনামায় চলে যায় বলে হাদিস শরিফে উল্লেখ রয়েছে।

এর দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, গীবত করলে বান্দা নিজেই ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং গীবতকারীর ইবাদত ও দোয়া চল্লিশ দিন পর্যন্ত কবুল হয় না বলেও হাদিস শরিফে উল্লেখ রয়েছে- যতক্ষণ না সমালোচিত ব্যক্তি গীবতকারীকে মাফ না করে।

৭. উজব বা আত্মতৃপ্তি: আমলের ব্যাপারে নিজেকে খুব আমলদার, দ্বীনদার, মুত্তাকি, পরহেজগার ও অন্যের তুলনায় নিজেকে খুব ভালো মনে করে পরিতৃপ্ত ও মনে মনে আনন্দিত হওয়ার নাম উজব, বাংলায় যাকে বলে আত্মতৃপ্তি।

ইবাদত করে উজব বা আত্মতৃপ্তিতে আক্রান্ত হওয়া বান্দার ইখলাস পরিপন্থি। আর ইখলাস পরিপন্থি ইবাদত ও দোয়া কবুল হয় না বলে হাদিস শরিফে উল্লেখ রয়েছে।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের পরিশুদ্ধ জীবন দান করুন এবং এসব গুনাহ থেকে বেঁচে থেকে ইবাদত ও দোয়া সঠিকভাবে সম্পাদন করার এবং তার দরবারে কবুল হওয়ার সৌভাগ্য দান করুন, আমিন।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top