প্রতিদিন মৃত্যুকে স্মরণ করলে যে উপকার
প্রকাশিত:
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৪:৩১
আপডেট:
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৬:৫৮

মৃত্যু এমন এক সত্য, যাকে অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। মানুষ চাক বা না-চাক, দুনিয়ার সবকিছু ছেড়ে একদিন তাকে চলে যেতেই হবে। কোরআনে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেছেন— প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। (সূরা আল ইমরান, আয়াত : ১৮৫)
কোরআনে মৃত্যুকে স্মরণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মৃত্যুর স্মরণ মানুষকে শুধু ভীতু করে তুলে না বরং মানুষের অন্তরকে নরম করে, দুনিয়ার মোহ থেকে দূরে রাখে এবং আখিরাতের প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করে।
মৃত্যুর স্মরণে মুমিনের জন্য স্বস্তি
মানবজীবন নানারকম পরীক্ষায় ভরা। দারিদ্র্য, রোগ-শোক, প্রিয়জনের মৃত্যু, অপমান—এসবের মধ্য দিয়েই মানুষকে জীবন কাটাতে হয়। আল্লাহ বলেন— তিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমাদের পরীক্ষা করতে পারেন—কে উত্তম কাজ করে। (সুরা আল মুলক, আয়াত : ২)
এই পরীক্ষা পার হয়ে মুমিন যখন আল্লাহর কাছে ফিরে যায়, তখন তার জন্য মৃত্যু হয়ে ওঠে দুনিয়ার দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তির পথ। নবী করিম (সা.) বলেছেন— মুমিন মৃত্যুর মাধ্যমে স্বস্তি পায়। (সহিহ বুখারি)
মৃত্যুচিন্তার উপকারিতা
মৃত্যু স্মরণ করলে মানুষ বাস্তবতায় ফিরে আসে। প্রিয়জন হারানোর মুহূর্তে যেমন দুনিয়ার ঝামেলা গৌণ হয়ে যায়, তেমনি মৃত্যুর কথা নিয়মিত মনে করলে আমরা বুঝি—আমাদের আসল জায়গা দুনিয়া নয়, আখিরাত।
রাসুল (সা.) বলেছেন— ভোগ-বিলাস নষ্টকারী মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ করো। (তিরমিজি)
হযরত আলী (রা.) বলেছেন— যে মৃত্যুকে নিয়মিত স্মরণ করে, সে অল্প সম্পদেই সন্তুষ্ট থাকে। তার মধ্যে লোভ বা কৃপণতার স্থান থাকে না।
মৃত্যু কামনা কি জায়েজ?
কষ্টের কারণে মৃত্যু কামনা করা ইসলামে নিষিদ্ধ। আত্মহত্যা যেমন হারাম, তেমনি কষ্ট পেয়ে মৃত্যুর প্রার্থনাও জায়েজ নয়। তবে শহীদ হওয়ার আকাঙ্ক্ষা বৈধ। নবী (সা.) বলেছেন— তোমাদের কেউ যেন কষ্টের কারণে মৃত্যু কামনা না করে। (সহিহ বুখারি)
তবে এ দোয়া করা যায়— হে আল্লাহ! যদি আমার জীবনে কল্যাণ থাকে তবে আমাকে জীবিত রাখুন, আর যদি মৃত্যু আমার জন্য উত্তম হয় তবে আমাকে মৃত্যুদান করুন। (সহিহ বুখারি)
মৃত্যু শেষ নয়, নতুন জীবনের শুরু
ইসলামে মৃত্যু মানে সমাপ্তি নয়। বরং এটি হলো আখিরাতের অনন্ত জীবনে প্রবেশের দরজা। তাই মৃত্যুকে স্মরণ করা শুধু ভয় নয়, বরং পরকালের অন্তত জীবনের প্রস্তুতির উপলক্ষ।
বিপদে পড়লে কোরআনের এ আয়াত পাঠ করতে বলা হয়েছে—
الَّذِیۡنَ اِذَاۤ اَصَابَتۡهُمۡ مُّصِیۡبَۃٌ ۙ قَالُوۡۤا اِنَّا لِلّٰهِ وَ اِنَّاۤ اِلَیۡهِ رٰجِعُوۡنَ
যখন তারা বিপদগ্রস্ত হয়, তখন বলে—‘নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য এবং অবশ্যই আমরা তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তন করব। (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৫৬)
মৃত্যু সহজ হওয়ার দোয়া
রাসুল (সা.) মৃত্যুর সময় এ দোয়া করেছিলেন— হে আল্লাহ! মৃত্যুর যন্ত্রণা সহজ করে দিন। (তিরমিজি)
আরেকটি দোয়ায় তিনি বলেছেন— হে আল্লাহ! আমার মৃত্যু যেন আমার জন্য স্বস্তির কারণ হয় এবং আমাকে সব অনিষ্ট থেকে রক্ষা করে। (সহিহ মুসলিম)
এ ছাড়া তিনি আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়েছেন— হে আল্লাহ! মৃত্যুর মুহূর্তে শয়তানের প্রতারণা থেকে আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই। (আবু দাউদ)
প্রিয়জন মৃত্যুপথযাত্রী হলে
মুহাম্মদ ইবনে আলী (রহ.) পরামর্শ দিয়েছেন প্রিয়জনের মৃত্যুকালে এ দোয়া পড়তে—
আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তিনি মহান, সহনশীল ও দয়ালু। আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তিনি সর্বোচ্চ ও সর্বমহান। মহিমা আল্লাহর, যিনি আসমান-জমিন ও তার সবকিছুর রব, এবং মহান আরশের রব। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি জগতসমূহের রব। দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক মুহাম্মদ ও তাঁর পরিবারে।
মৃত্যু নিয়ে ভয় নয়, বরং প্রস্তুতি—এটাই ইসলামের শিক্ষা। মৃত্যুকে যারা নিয়মিত স্মরণ করে, তারা দুনিয়ার ভোগবিলাসে ডুবে সব ভুলে যায় না। বরং আখিরাতের কথা ভেবে সৎ জীবনযাপনের চেষ্টা করে। তাই মৃত্যুচিন্তা মুমিনের জন্য পথপ্রদর্শক ও মুক্তির মাধ্যম।
সূত্র : মুসলিম ভাইব
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: