সোমবার, ১৫ই ডিসেম্বর ২০২৫, ১লা পৌষ ১৪৩২


ঈসা (আ.) যে শহরে দাজ্জালকে হত্যা করবেন


প্রকাশিত:
১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৭:০৮

আপডেট:
১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ২২:৪৪

ফাইল ছবি

শাম অঞ্চল (বর্তমান সিরিয়া, জর্ডান, লেবানন ও ঐতিহাসিক ফিলিস্তিন) নবী-রাসুলদের পবিত্র পদচিহ্নধন্য ভূমি। এটি ভবিষ্যতের নাটকীয় অধ্যায়েরও কেন্দ্রস্থল।

পবিত্র কোরআনে ‘মোবারক’ বা কল্যাণময় বলা এই ভূমির প্রতি রাসুলুল্লাহ (স.)-এর হাদিসে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে, যা একে শেষযুগের সংঘাত ও মুমিনদের চূড়ান্ত বিজয়ের মঞ্চ হিসেবে চিহ্নিত করে।

ঈসা (আ.)-এর অবতরণ ও দাজ্জালের ধ্বংস

হাদিসের বিভিন্ন বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ (স.) শেষযুগের চিত্র তুলে ধরেছেন- ‘আল্লাহ ঈসা ইবন মরিয়মকে প্রেরণ করবেন। তিনি দুজন ফেরেশতার কাঁধের ওপর ভর করে ওয়ারস ও জাফরান রংয়ের জোড়া কাপড় পরিহিত অবস্থায় দামেস্ক নগরীর পূর্ব দিকের উজ্জ্বল মিনারে অবতরণ করবেন। যখন তিনি তাঁর মাথা ঝুঁকাবেন তখন ফোঁটা ফোঁটা ঘাম তাঁর শরীর থেকে গড়িয়ে পড়বে। তিনি যেকোনো কাফিরের কাছে যাবেন সে তাঁর শ্বাসের বাতাসে ধ্বংস হয়ে যাবে। তাঁর দৃষ্টি যতদূর পর্যন্ত যাবে তাঁর শ্বাসও ততদূর পর্যন্ত পৌঁছবে। তিনি দাজ্জালকে সন্ধান করতে থাকবেন। অবশেষে তাকে (সিরিয়ার) বাবে লুদ নামক স্থানে গিয়ে পাকড়াও করবেন এবং তাকে হত্যা করবেন।’ (মুসলিম: ২৯৩৭)

মুজাম্মা ইবনে জারিয়া আনসারি (রা.) বর্ণনা করেন, আমি আল্লাহর রাসুল (স.)-কে বলতে শুনেছি, ‘ঈসা ইবনে মরিয়ম দাজ্জালকে বাবে লুদে হত্যা করবেন। (মুসনাদ আহমদ, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৪২০; সুনানে তিরমিজি: ২২৪৪)

হাদিসে বাবে লুদ বা লুদের ফটক কথাটি এসেছে। লুদ বর্তমান ইসরায়েল অধিকৃত ঐতিহাসিক ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের একটি ছোট শহর, যা তেলআবিব থেকে ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত। ইসরায়েলের প্রধান বিমানবন্দর বেন গুরিয়ান বিমানবন্দর এই শহরটির কাছেই অবস্থিত।

শেষযুগে শামের কল্যাণ ও উম্মাহর দুর্গ

শাম অঞ্চলে ফিতনা ও অশান্তি ছড়িয়ে পড়লেও সেখানে ঈমানদারদের একটি দল সর্বদা অটল ও বিজয়ী থাকবে। হজরত মুয়াবিয়া ইবনে কুররা (রা.)-এর বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন- ‘যখন সিরিয়াবাসীরা খারাপ হয়ে যাবে তখন তোমাদের আর কোনো কল্যাণ থাকবে না। তবে আমার উম্মতের মধ্যে একটি দল সকল সময়েই সাহায্যপ্রাপ্ত (বিজয়ী) থাকবে। যেসব লোকেরা তাদেরকে অপমানিত করতে চায় তারা কেয়ামত পর্যন্ত তাদের কোনো ক্ষতি সাধন করতে পারবে না।’ (তিরমিজি: ২১৯২) হজরত আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, মহাযুদ্ধের সময় মুসলিমদের ছাউনি হবে গোতা শহরে, যা দামেস্ক নগরের পাশে অবস্থিত। এটি শামের উৎকৃষ্ট শহরগুলোর একটি। (আবু দাউদ: ৪২৯৮)

এই হাদিসগুলো শামকে শেষযুগে ঈমানের শেষ দুর্গ ও আল্লাহর সাহায্যের কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।

শামের দিকে চূড়ান্ত হিজরত

প্রথম হিজরতের মতোই শেষযুগে আরেকটি মহান হিজরতের বিষয়ে রাসুলুল্লাহ (স.) ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বলতে শুনেছি, হিজরতের পর আরেকটি হিজরত শিগগির সংঘটিত হবে। তখন ভূপৃষ্ঠের সর্বোৎকৃষ্ট মানুষ হবে তারাই, যারা ইবরাহিম (আ.)-এর হিজরতভূমিতে (শামদেশে) অবস্থান করবে। আর গোটা পৃথিবীতে সর্বনিকৃষ্ট মানুষ বাকি থাকবে। তাদের ভূমিগুলো তাদের নিক্ষেপ করবে। আল্লাহ তাদের অপছন্দ করবেন। তাদের ফিতনার আগুন বানর ও শূকরের সঙ্গে মিলিয়ে রাখবে (তাদের দুশ্চরিত্রের কারণে তারা যেখানেই যাবে, সেখানেই ফিতনা লেগে থাকবে)। (আবু দাউদ: ২৪৮২)

এই বর্ণনা সুস্পষ্টভাবে নির্দেশ করে যে, শেষযুগে প্রকৃত মুমিনদের মহাসমাবেশ ঘটবে শাম অঞ্চলেই।

শাম অঞ্চল অতীতে যেমন বহু নবী-রাসুলের কর্মস্থল ছিল, সেই একই ভূমি ভবিষ্যতের চূড়ান্ত নাটকেরও মঞ্চ হবে। ঈসা (আ.)-এর অবতরণ, দাজ্জালের পরাজয় এবং মুমিনদের শেষ সমাবেশ—সবকিছুই এই কল্যাণময় ভূমির সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top