শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১২ই বৈশাখ ১৪৩১


নামাজে মনোযোগ বাড়ানোর পাঁচ উপায়


প্রকাশিত:
৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০০:৪৬

আপডেট:
২৬ এপ্রিল ২০২৪ ০৪:৫৩

ছবি: সংগৃহীত

নামাজ এমন একটি ইবাদত যার মাধ্যমে আল্লাহর সান্নিধ্য গ্রহণ করা সম্ভব হয়। এ ইবাদত আল্লাহর সঙ্গে কথা বলার অনন্য একটি মাধ্যম।

মুমিন জীবনের অন্যতম একটি ইবাদত হলো সালাত বা নামাজ। ইসলামের প্রথম স্তম্ভ সালাত এবং কেয়ামতের দিন সর্ব প্রথম বিচার ফয়সালা হবে সালাতের মাধ্যমে।

রাসূল (সা.) বলেছেন, কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব হবে। (তিরমিজি)

দৈনন্দিন জীবনে সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে বিঘ্নতা, অলসতা ও নানা ধরনের চিন্তার সম্মুখীন হতে হয় আমাদের। এর প্রধান কারণ হলো সালাতে একনিষ্ঠতা, মনোযোগ না থাকা।

একনিষ্ঠ ছাড়া সালাত কখনো আল্লাহ কবুল করবেন না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমরা একনিষ্ঠতার সঙ্গে আমার ইবাদত কর। (সুরা বাইয়্যিনা-৫)

সালাতে পূর্ণাঙ্গ মনোযোগ সাধনে পাঁচটি কৌশল রয়েছে।

প্রথম কৌশল হলো, অন্তরের মধ্যে এই অনুভব করা এটা শেষ নামাজ। মৃত্যু এমন একটি বিষয়ের যা কখন আসে বলা যায় না।

দুনিয়া এখন গ্লোবাল ভিলেজের মাধ্যমে হাতের মুঠোয়, কিন্তু মৃত্যু এর বাহিরের একটি অজানা-অধরা বিষয়।

সালাতে যখন দাঁড়াবে তখন এটা অনুভব করতে হবে এটাই বিদায়ী নামাজ। রাসূল (সা.) বলেছেন, যখন তুমি সালাতে দাঁড়াও তখন তুমি বিদায়ী সালাত পড়। (মুসনাদে আহমদ)। হতে পারে এটি জীবনের শেষ নামাজ।

সালাতে মনোযোগ বৃদ্ধির দ্বিতীয় কৌশল হলো, এ অনুভব করা সালাত হলো আল্লাহর সঙ্গে বান্দার কথোপকথনের মাধ্যম।

সালাতের মাধ্যমে গোলাম ও মনিবের মাঝে কথা বলা যায়। যদিও সেটা আমাদের শ্রবণ হয় না, তবুও এ মনোভাব ধারণ করতে হবে অন্তর দ্বারা আমরা কথা বলছি।

আল্লাহতায়ালা বলেন, বান্দা যখন নামাজ পড়ে তখন তা আমি আধা-আধি ভাগ করি এবং তার কথার উত্তর দিয়ে থাকি। (বুখারী)

বান্দা যখন বলে, সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি এই বিশ্বজগতের মালিক। তখন আল্লাহ বলেন, বান্দা আমার প্রশংসা আদায় করেছে।

এভাবে প্রতিটি কথার উত্তর দিয়ে থাকেন। এই অনুভবটা অন্তরের মাধ্যে লালন করতে পারলে নামাজে মনোযোগ বৃদ্ধি হবে।

সালাতে মনোযোগ বৃদ্ধির তৃতীয় কৌশল হলো, ধীরস্থির হয়ে সালাত আদায় করা। সালাত মুমিন জীবনে সবরের (ধৈর্য) শিক্ষা দেয়।

সালাত নম্র-ভদ্র হয়ে বিনয়ের সাথে আদায় করতে হয়।

আল্লাহতায়ালা বলেন, মুমিনরা তাদের সালাতে বিনয়ী অবলম্বন করে। (সুরা মুমিনুন-০২)

যত্নসহকারে সালাত আদায় না করলে সালাতে মনোযোগ সাধন হবে না। কেরাত, রুকু ও সেজদায় ধীরস্থিরতা অবলম্বন করতে হবে।

রাসূল (সা.) বলেছেন, লোকদের মধ্যে সবচেয়ে বড় চোর ওই ব্যক্তি যে, ধীরস্থিরভাবে নামাজ পড়ে না ও রুকু সেজদায় দেরি করে না। (তীবরানি)

তাসবিহ তাহলিলগুলো অর্থসহ জানার মাধ্যমে ধীরস্থিরভাবে সালাত আদায় করতে হবে; যার ফলে মনোযোগ অন্যদিকে ঝুঁকে পড়ার সুযোগ থাকবে না।

সালাতে মনোযোগ বৃদ্ধির চতুর্থ কৌশল হলো এ অনুভব করা- আমি আল্লাহর সঙ্গে দেখা করছি।

আল্লাহতায়ালা সার্বক্ষণিক আমাদের প্রতি দৃষ্টি রাখেন কিন্তু দুনিয়ার কোনো চর্মচক্ষু দ্বারা তাকে প্রত্যক্ষ করা সম্ভব না।

সালাতের ক্ষেত্রে রাসূল (সা.) বলেছেন, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এমনভাবে, যেন তাঁকে তুমি দেখতে পাচ্ছ। আর যদি দেখতে না পাও, তবে তিনি যেন তোমাকে দেখছেন। (বুখারি, মুসলিম)

আল্লাহর সামনে যখন মাথানত করতে হয় তখন এই ভয়ে করতে হবে তিনি যেন আমাকে দেখতে পাচ্ছেন।

পৃথিবীর সব চোখ এড়ানো যায় কিন্তু আল্লাহর চোখ কখনো এড়ানো সম্ভব নয়। বান্দা যখন সেজদা দেয় তখন আল্লাহর কুদরতি পায়ের উপরে সিজদা দেয়।

সুতরাং এক্ষেত্রে খুবই সজাগ থাকতে হবে। এই অনুভব লালন করতে পারলে ভয় বৃদ্ধি পাবে ও পূর্ণাঙ্গ মনোযোগ সাধন হবে।

সালাতে মনোযোগ বৃদ্ধির সর্বশেষ কৌশল হলো- পূর্ববর্তীদের থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা।

পূর্ববর্তী হলো- সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ী, তাবে-তাবেইন ও বিশিষ্ট ইসলামী স্কলাররা। কারণ তারা সর্বত্র আল্লাহকে বেশি ভয় করে এবং তাদের মতের ভিত্তিতে অসংখ্য মাসয়ালার সমাধান হয়ে থাকে।

রাসূল (সা.) যেভাবে নামাজ পড়তেন সাহাবায় কেরাম নিজ চোক্ষে প্রত্যক্ষ করেছেন এবং তাদের থেকে ধারাবাহিকভাবে আলেমরা শিক্ষা লাভ করেছেন।

তাদের এই শিক্ষার আলোকে দৈনন্দিন জীবনে অনুসরণ করতে পারলে খুশু, বিনয়ীভাব ও পূর্ণাঙ্গ মনোযোগ লাভ সম্ভব হবে।

তাই আমাদের সবার উচিত এই পাঁচটি কৌশল দৈনন্দিন অনুশীলন করা। এগুলোর মাধ্যমে নামাজে মনোযোগ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা রাখি- ইনশাআল্লাহ।

লেখক: শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ, মীরসরাই, চট্টগ্রাম।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top