শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৬ই বৈশাখ ১৪৩১


শ্রেষ্ঠ মানুষ হতে চাইলে যেসব গুণ থাকতে হবে


প্রকাশিত:
১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২৩:৩২

আপডেট:
২০ এপ্রিল ২০২৪ ০৩:৫২

প্রতিকী ছবি

শ্রেষ্ঠ মানুষ হতে চাইলে যেসব গুণ থাকতে হবে

মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা জীব। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘অবশ্যই আমি আদম সন্তানদের সম্মানিত করেছি এবং তাদের পানিতে ও স্থলে প্রতিষ্ঠিত করেছি, তাদের উত্তম জীবনোপকরণ প্রদান করেছি এবং তাদের অনেক সৃষ্টির ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি।’ (সুরা ইসরা : ৭০)

পবিত্র কোরআন ও হাদিসের বিভিন্ন বর্ণনা দ্বারা মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব সাব্যস্ত হয়েছে। মহানবী (সা.) বলেন, বিচার দিবসে আল্লাহর কাছে মানুষ অপেক্ষা অন্য কোনো সৃষ্টি অধিক সম্মানের হবে না। জিজ্ঞেস করা হয়, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর নিকটবর্তী ফেরেশতাদের ক্ষেত্রেও কি এটা প্রযোজ্য হবে? অর্থাৎ নিকটবর্তী ফেরেশতাদের চেয়েও কি মানুষের মর্যাদা বেশি? মহানবী (সা.) প্রত্যুত্তরে বলেন, ‘নিকটবর্তী ফেরেশতারাও এক শ্রেণির মানুষের চেয়ে অধিক মর্যাদাবান হবে না।’ (বায়হাকি, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৭৪)

পৃথিবীর সব কিছু মানুষের কল্যাণের জন্য সৃষ্টি : আল্লাহ তাআলা এ ধরার সব কিছু মানুষের কল্যাণের জন্যই সৃষ্টি করেছেন। তিনি ইরশাদ করেছেন, ‘তিনি সেই সত্তা, যিনি তোমাদের (মানবের) কল্যাণার্থে পৃথিবীর সব কিছু সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরা বাকারা : ২৯) বস্তুত চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র, আলো, বাতাস, জীবজন্তু—সবই মানুষের কল্যাণে সদা নিয়োজিত আছে।

নিজের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখতে চাইলে এবং আল্লাহ তায়ালার কাছে নিজেকে গ্রহণীয় করে তুলতে চাইলে মানুষের জন্য কিছু গুণ অর্জন করা আবশ্যক। এখানে এমন কিছু গুণের কথা তুলে ধরা হলো-

মুত্তাকি হওয়া

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, হযরত রাসূলুল্লাহকে (সা.) জিজ্ঞেস করা হলো, শ্রেষ্ঠ মর্যাদার অধিকারী কে? হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, মানুষের মধ্যে আল্লাহতায়ালার কাছে শ্রেষ্ঠ মর্যাদার অধিকারী ওই ব্যক্তি, যে আল্লাহকে বেশি ভয় করে। -সহিহ বোখারি: ৪৬৮৯

কোরআন শিক্ষা

নিজে বিশুদ্ধভাবে কোরআনে কারিম শিক্ষা করা এবং অন্যকে শিক্ষা দেওয়া। সাহাবি হযরত উসমান (রা.)-এর সূত্রে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি, যে নিজে কোরআন শিক্ষা করে এবং অন্যকে তা শিক্ষা দেয়। -সহিহ বোখারি: ৫০২৭

নিজের চরিত্র সুন্দর করা

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.)-এর সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সে, যার চরিত্র সবচেয়ে বেশি সুন্দর। -সহিহ বোখারি: ৩৫৫৯

অন্যের কল্যাণকামী হওয়া

হযরত আবু হুরায়রা (রা.)-এর সূত্রে বর্ণিত, একদা হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) সাহাবায়ে কেরামের একদলের মধ্যে উপবিষ্ট অবস্থায় বললেন, তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি কে, আমি কি তা তোমাদের বলব? সাহাবায়ে কেরাম নীরব রইলেন। হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এ কথা তিনবার বললেন। অতঃপর জনৈক সাহাবি আরজ করলেন, অবশ্যই বলুন হে আল্লাহর রাসূল! হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি হলো, যার কাছ থেকে সবাই মঙ্গলের আশা করে এবং তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকে। আর তোমাদের মধ্যে নিকৃষ্টতম ব্যক্তি হলো, যার কাছ থেকে মঙ্গলের আশা করা যায় না এবং তার অনিষ্ট থেকে মানুষ নিরাপদ নয়। -সুনানে তিরমিজি: ২২৬৩

লেনদেনে উত্তম হওয়া

হযরত আবু হুরায়রা (রা.)-এর সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি, যে নিজ পাওনাদারের পাওনা উত্তমভাবে আদায় করে। -সহিহ বোখারি: ২৩০৫

নিজ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সদাচারী হওয়া

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-এর সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি, যে নিজের পরিবারের কাছে ভালো। -সুনানে তিরমিজি: ১৯৭৭

প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করা

হযরত আবু সাঈদ (রা.)-এর সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমরা হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ঘরের পাশে বসা ছিলাম। তখন হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বের হয়ে ইরশাদ করেন, আমি কি বলব, তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম মানুষ কে? সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম মানুষ হলো, যে প্রতিশ্রুতি পূরণে অধিক প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। -মুসনাদে আবু ইয়ালা: ১০৫২

পাপমুক্ত জীবনযাপন করা

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! সর্বোত্তম মানুষ কে? হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ওই ব্যক্তি, যার অন্তর পাপমুক্ত, পরিষ্কার, কারও প্রতি কোনো আক্রোশ ও বিদ্বেষ নেই এবং যে সত্যবাদী হয়। -ইবনে মাজাহ: ৪২১৬

হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর হাদিসের বিশাল ভাণ্ডারে এরকম আরও অনেক বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ আছে। এসব বর্ণনার কোনোটিই পারস্পরিক সাংঘর্ষিক নয়। প্রতিটিই নিজ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ বহন করে। তাই আমাদের উচিত হলো, মুসলিম হিসেবে উল্লিখিত প্রতিটি গুণ অর্জনে ব্রতী হওয়। একইসঙ্গে কোরআন ও হাদিস অধ্যয়নের মাধ্যমে আরও ইসলামি জ্ঞান অর্জন ও তা বাস্তব জীবনে অনুসরণের মাধ্যমে নিজেকে আল্লাহর প্রিয়পাত্রে পরিণত করা।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top