শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০


কবে থেকে পোশাক পরা শুরু করেছে মানুষ


প্রকাশিত:
৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৪:৩৪

আপডেট:
২৯ মার্চ ২০২৪ ২১:৪৬

ছবি সংগৃহিত

মানব সভ্যতার ইতিহাস বিবর্তনের ইতিহাস। নানা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে খাপ খাওয়ানোর মধ্য দিয়ে বদলাতে বদলাতে আজকের এই অবস্থানে এসেছে মানুষ। একটা সময় মানুষ গুহায় বাস করত। লজ্জা নিবারণের মতো কোনো আচ্ছাদন ছিল না অথবা তখন পর্যন্ত অনেকেই হয়তো লজ্জা নিবারণের বিষয়টিকে গুরত্ব দিয়ে ভাবেনি। ধীরে ধীরে গুহা ছেড়ে বসতি গড়েছে মানুষ। গাছের ছালবাকল পরিধান করেছে শুরুতে। তবে ঠিক কবে থেকে মানুষের পোশাক পরা শুরু?

জার্মানির একদল প্রত্নতত্ত্ববিদ হয়তো এমন প্রশ্নের উত্তর কিছুটা হলেও খুঁজে পেয়েছেন। এই গবেষকেরা মানুষের পোশাক পরার সবচেয়ে ‘প্রাচীন’ প্রমাণ খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছেন। সম্প্রতি একটি বিজ্ঞান সাময়িকীতে প্রকাশিত এই গবেষণায় জানা গেছে, প্রায় তিন লাখ বছর আগে পোশাক পরা শুরু করে মানুষ।

চাঞ্চল্যকর এ তথ্য মিলেছে জার্মানির উত্তরাঞ্চলের শোইনিংয়েন নামের ছোট্ট এক শহরে। গবেষক দলের এ আবিষ্কারকে চাঞ্চল্যকর বলার কারণ, আদিকালে মানুষ কীভাবে তাদের শরীর ঢেকে রাখত এবং কীভাবে তীব্র শীত নিবারণ করত, সে সম্পর্কে খুবই কমই জানা যায়। এত দিনে জানার বিষয়টি একটু হলেও ‘ভিত্তি’ পেয়েছে।

পশম, চামড়া ও অন্যান্য জৈব পদার্থ সাধারণত এক লাখ বছরের বেশি সময় সংরক্ষণ করে রাখা যায় না। এর অর্থ হলো প্রাগৈতিহাসিককালে মানুষ কীভাবে পোশাক পরিধান করত, কীভাবে সেসব পোশাক তৈরি হতো, নাকি মানুষ আদৌ পোশাক পরিধান করত না—সেসব নিয়ে তথ্য–প্রমাণ খুব বেশি নেই।

গুহার ভালুকের ছিল লম্বা লম্বা লোম। এসব লোম বাতাস আটকাতে সাহায্য করে। এর ছোট ও ঘন চুল ভালো আরাম দেয়। গুহা ভালুকের এই লোম সাধারণ পরিধেয় পোশাক বা বিছানা তৈরির জন্য উপযুক্ত ছিল।
জার্মানিতে হওয়া নতুন এই গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন, অর্থাৎ এই গবেষণার প্রধান লেখক ইভো ভারহেইজেন। তিনি জার্মানির টুবিংয়েন বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছেন। ইভো ভারহেইজেন বলেন, এই গবেষণা উল্লেখ করার মতো। কারণ, আদিমকালে মানুষ কীভাবে বিভিন্ন বস্তু থেকে নিজেদের শরীরকে রক্ষা করত, সে সম্পর্কে তুলনামূলক খুব কম জানা যায়। আদিকালে ভালুকের চামড়া ব্যবহারের কিছু প্রমাণ মেলে। তবে শোইনিংয়েনে এর পূর্ণাঙ্গ চিত্র বা প্রমাণ উঠে এসেছে।

আদিকালে গুহায় যে ভালুক বাস করত, সেগুলো আকারে অনেক বড় ছিল। সেগুলো ছিল মেরু ভালুকের সমান। তবে এসব ভালুক আজ থেকে প্রায় ২৫ হাজার বছর আগে বিলুপ্ত হয়েছে। গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর জার্নাল অব হিউম্যান ইভল্যুশনে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে, গুহার ভালুকের ছিল লম্বা লম্বা লোম। এসব লোম বাতাস আটকাতে সাহায্য করে। এর ছোট ও ঘন চুল ভালো আরাম দেয়। গুহা ভালুকের এই লোম সাধারণ পরিধেয় পোশাক বা বিছানা তৈরির জন্য উপযুক্ত ছিল।

সম্ভবত সে সময় এমন প্রাণীর চামড়া দিয়ে পোশাক তৈরি করা হতো, যেসব চামড়া সেলাই ছাড়াই পোশাক হিসেবে পরা যেত। প্রত্নতাত্ত্বিক ইতিহাস ঘেঁটেও দেখা যায়, ৪৫ হাজার বছর আগে ভালো মানের নকশা করা পোশাক তৈরি করার ক্ষেত্রে সুক্ষ্ম সুচ ব্যবহার করে সেলাইয়ের কোনো প্রমাণই পাওয়া যায় না।

গবেষণা দলের প্রধান ইভো ভারহেইজেন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা যেসব প্রাণীর দেহাবশেষ খুঁজে পেয়েছি, তাতে এসব প্রাণীর হাত ও পায়ের বিভিন্ন অংশে এমন কিছু ক্ষতচিহ্ন (কাটমার্ক) আমরা পেয়েছি, যেখানে হাড়গুলোতে খুব কম মাংস বা চর্বি ছিল। পশু হত্যার কারণে যে ধরনের ক্ষত হয়, এই ক্ষতচিহ্ন তার ভিন্ন ধরনের।’

শোইনিংয়েন প্রাচীনকালের কাঠের তৈরি অস্ত্র আবিষ্কারের জন্য বিখ্যাত। সেখানে অনেকবার আদিকালের কাঠের অস্ত্র আবিষ্কার হয়েছে। এর আগে সেখান থেকে ৯টি তির, ১টি বল্লম, প্রাণী শিকারের কাজে ব্যবহৃত কাঠের তৈরি ধারালো লাঠি পাওয়া গেছে। তিন লাখ বছর আগে শিকার করতে মানুষ এসব অস্ত্র ব্যবহার করত।

তবে কিছুটা প্রমাণ পাওয়া গেলেও কবে থেকে মানুষ পোশাক পরা শুরু করল, সেটা নির্ধারণ করা বেশ চ্যালেঞ্জিং একটি বিষয়। এ ক্ষেত্রে উকুনের জিনতাত্ত্বিক গবেষণার সাহায্য নিয়েছেন গবেষকেরা। তাতে দেখা গেছে, লোমশ পোশাকে মূলত যেসব উকুন তৈরি হয়, সেগুলো মানুষের মাথায় হওয়া উকুনের চেয়ে অন্তত ৮৩ হাজার বছর আগের। সম্ভবত এসব উকুন ছড়িয়ে পড়েছিল ১ লাখ ৭০ হাজার বছর আগে। এটা থেকে বোঝা যায়, আফ্রিকা ছাড়ার আগেও মানুষ পোশাক পরত।

সম্প্রতি মরক্কোতে আদিকালের কিছু হাড় বা হাড়ের অংশবিশেষ আবিষ্কার করা হয়েছে। সেসব হাড় নিয়ে গবেষণা করে বোঝা যাচ্ছে, পোশাক তৈরির জন্য ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার বছর আগেই মানুষ প্রাণীর চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার কাজটি শুরু করে।

ভারহেইজেন বলেন, ‘শোইনিংয়েনে আমরা অনেক প্রাণীর বিভিন্ন ধরনের দেহাবশেষ পেয়েছি। যেমন ঘোড়া বা আদিকালের গবাদিপশু (মূলত গরুর পূর্বসূরি যেগুলো এখন বিলুপ্ত)। এসব প্রাণীর দেহাবশেষেও ক্ষতচিহ্ন পাওয়া গেছে। এসব ক্ষতচিহ্ন থেকে দেখা গেছে, এসব পশুর চামড়াও পোশাক তৈরির কাজে ব্যবহার করা হতো। তবে ভালুকের চামড়া বড় বড় তৃণভোজী প্রাণীদের তুলনায় পোশাক তৈরির জন্য বেশি উপযোগী। কারণ, ভালুকের চামড়ার বাতাস ঠেকানোর ক্ষমতা অনেক বেশি। একই সঙ্গে সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত করা হলে এসব আরও নমনীয় হয়। তাই, এটা বেশি উপযোগী।’

ভারহেইজেন আরও বলেন, যেখান থেকে গবেষকেরা মানুষের পোশাক পরার এসব নির্দশন খুঁজে পেয়েছেন, সেই শোইনিংয়েনের তখনকার জলবায়ু কমবেশি এখনকার মতোই ছিল। গড় তাপমাত্রা বিবেচনা করলে তা এর চেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি বা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম ছিল।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top