শনিবার, ১৫ই ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৩রা ফাল্গুন ১৪৩১


বিক্রি হবো না, ক্ষতিপূরণ দিন

ক্ষতিপূরণের দাবিতে নোভারটিস কর্মীদের বিক্ষোভ


প্রকাশিত:
১৩ জানুয়ারী ২০২৫ ১৪:৩৯

আপডেট:
১৩ জানুয়ারী ২০২৫ ১৪:৪১

ছবি সংগৃহিত

ভারত-পাকিস্তানের পর বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি নোভারটিস বাংলাদেশ লিমিটেড। এই অবস্থায় কোম্পানিটির শেয়ার রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের কাছে হস্তান্তর হওয়া এবং কর্মীদের সেই প্রতিষ্ঠানের কাছে তুলে দেওয়ার প্রতিবাদ জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। তাদের দাবি, আমরা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি হতে চাই না। যেহেতু কোম্পানি তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নেবে, আমাদের সম্মানজনক ক্ষতিপূরণ দিয়েই তাদের যেতে হবে।

সোমবার (১৩ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের নোভারটিস বাংলাদেশের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে এই বিক্ষোভ করেন কর্মরত দুই শতাধিক কর্মী।

নোভারটিস কর্মীদের দাবি, বর্তমানে কর্মরতদের মধ্যে অনেকেই ১৫ থেকে ২০ বছর যাবত প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ করে আসছেন। এ অবস্থায় যদি কোম্পানিটি চলে যেতে চায়, তাহলে অবশ্যই আমাদের প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ দিয়ে যেতে হবে। আমাদের কর্মীদের অনেকেই এখনও অন্তত আরো ১৫-২০ বছর চাকরি করার যোগ্যতা রাখেন। আবার কিছু কর্মী আছেন যারা চাকরির শেষ সময়ে, তারা চাইলে এখন অন্য আরেকটা কোম্পানিতে নতুন করে চাকরি শুরু করতে পারবেন না। তাই যতোক্ষণ পর্যন্ত সম্মানজনক ক্ষতিপূরণের ঘোষণা না আসবে, আমরা আমাদের বিক্ষোভ কর্মসূচি চালিয়ে যাব।

নোভারটিস বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক (সিটিএম) মঞ্জুুরুল হক বলেন, আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ প্রতিষ্ঠানটিতে নিজেদের সর্বোচ্চ মেধা ও আন্তরিকতা দিয়ে কাজ করেছি। অন্যান্য ওষুধ কোম্পানিগুলো যেখানে নানারকম উপহার দিয়ে চিকিৎসকদের কনভিন্স করেছে, আমরা সম্পূর্ণ নিজেদের যোগ্যতা ও দক্ষতায় কোম্পানির ওষুধ বিক্রি করেছি। কিন্তু কোম্পানি যখন চলে যাচ্ছে, আমাদের খালি হাতে বিদায় নিতে হচ্ছে। তাহলে আমাদের এতো শ্রম-ঘামের মূল্য কোথায়? আমাদের তো কাল থেকেই পথে বসতে হবে।

তিনি বলেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে, তার সঙ্গে পালিয়ে যাওয়া আরেক দোসরের কোম্পানির হাতে আমাদের তুলে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে যেতে চাই না। হয় নোভারটিসের অধীনেই আমরা কাজ করবো, অন্যথায় আমাদের প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ দিয়ে তাদের বিদায় নিতে হবে।

প্রতিষ্ঠানটির আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমি আঠারো বছর যাবৎ যাবত চাকরি করছি। কিন্তু আমাদের না বলেই একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তারা চলে যাবে। তারা আমাদের থার্ড পার্টির কাছে বিক্রি করে দিয়েছে, অথচ এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমাদের একটিবার জানানোর প্রয়োজন মনে করল না। এটি আমাদের সাথে প্রতারণা।

তিনি আরও বলেন, আমি যখন চাকরি শুরু করি, তখন নোভারটিস ছিলো মাত্র ৭০ কোটি টাকার কোম্পানি, এখন এটি ৪০০ কোটি টাকায় পরিণত হয়েছে। এটা কারা করেছে, আমরাই করেছি। এই কোম্পানির যে বহুতল ভবন হয়েছে, তার প্রতিটি ইটেও আমাদের রক্ত-ঘাম লেগে আছে। তাহলে আমরা কেন ক্ষতিপূরণ ছাড়াই চাকরি হারাবো? আমাদের শুধু ক্ষতিপূরণ দিলেই হবে না, প্রাপ্য ও সম্মানজনক ক্ষতিপূরণ দিয়ে যেতে হবে।

প্রসঙ্গত, ৮ জানুয়ারি নোভারটিস বাংলাদেশ লিমিটেডের ২৩০ কোটি টাকার প্রায় ১০ লাখ শেয়ার রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের কাছে হস্তান্তর স্থগিত চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরসহ তিনজনকে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। নোটিশে নোভারটিস বাংলাদেশ লিমিটেডকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইক্তান্দার হোসাইন হাওলাদার এ নোটিশ পাঠান। গভর্নর ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগ বিভাগের ডেপুটি গভর্নর ও পরিচালককে এ নোটিশ দেওয়া হয়।

নোটিশে বলা হয়েছে, সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি নোভারটিস বাংলাদেশের ৬০ শতাংশ শেয়ার অর্থাৎ ৯ লাখ ৭৫ হাজার ৩৬টি শেয়ার বিক্রির চেষ্টা চলছে। শেয়ারগুলো ২৩০ কোটি টাকায় রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের মাধ্যমে বিক্রির প্রস্তাব চূড়ান্ত অনুমোদন হয়েছে। এরই পূর্বে কেনা-বেচার প্রক্রিয়াটি বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের কর্ণধার সালমান এফ রহমানের নেতৃত্বে সম্পন্ন করার কথা ছিল।

কিন্তু ৫ আগস্টের পরিবর্তিত অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে, শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কিন্তু অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের মাধ্যমে প্রক্রিয়াটি চলমান রয়েছে।

এমনকি সালমান এফ রহমানের অবর্তমানে রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের চেয়ারম্যান নাসের শাহরিয়ার জাহেদী মহুল বর্তমানে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের ব্যবসায়িক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় দেখভাল করছেন বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।

মির্জ সাইমা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top