মঙ্গলবার, ২রা সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৮ই ভাদ্র ১৪৩২


রাতে হলে ফিরতে দেরি, রাবির ৯১ ছাত্রীকে প্রাধ্যক্ষের তলব


প্রকাশিত:
২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৫:১৮

আপডেট:
২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২৩:৩৪

ছবি ‍সংগৃহিত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাতে দেরিতে হলে ফেরার কারণে ‘জুলাই ৩৬’ হলের ৯১ জন ছাত্রীকে প্রাধ্যক্ষের কার্যালয়ে তলব করা হয়েছে। হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক লাভলী নাহার স্বাক্ষরিত এক নোটিশে এই নির্দেশ দেওয়া হয়।

সোমবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নোটিশটি ছড়িয়ে পড়ে। এরপর তুমুল আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়।

নোটিশে বলা হয়েছে, ‘এতদ্বারা জুলাই-৩৬ হলের অনাবাসিক ও গণরুমের ছাত্রীদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, দেরিতে (রাত ১১.০০ টার পরে) হলে ফেরার কারনে নিম্নে উল্লিখিত ছাত্রীদের ক্রমিক নং ০১-৪৫ পর্যন্ত আগামী ৯ সেপ্টেম্বর রোজ মঙ্গলবার এবং ক্রমিক নং ৪৬-৯১ পর্যন্ত ১০ সেপ্টেম্বর রোজ বুধবার বিকাল ৪ টায় প্রাধ্যক্ষ মহোদয়ের অফিস কক্ষে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হলো।’

এ ঘটনার পর থেকে শিক্ষার্থীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী শাহ পরাণ হল প্রশাসনের নোটিশটি শেয়ার করে নিজের টাইমলাইনে লিখেছেন, ‘আমি আজকে ১ টার পর রুমে ঢুকেছি, আমরা অনেকেই ঢুকেছি আসলে। আমি চাই জিয়া হলেও এমন একটা নোটিশ ঝুলানো হোক। আমাদের ও প্রভোস্ট রুমে তলব করা হোক। কী মনে হয়, প্রশাসন এটা করবে কিংবা করতে পারবে? যদি না করে তাহলে এক দেশে দুই আইন কেন? বিশ্ববিদ্যালয় কেনো শিক্ষার্থীদের ছেলে বা মেয়ে এইভাবে ভাবে? কেন শুধু শিক্ষার্থী হিসেবে ভাবতে পারছে না? আমি চাই বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের শিক্ষার্থী হিসেবে ভাবুক। নারী-পুরুষে, হিন্দু-মুসলমানে, পাহাড়ে-সমতলে ইত্যাদিতে ডিভাইড না করে শুধু শিক্ষার্থী ভাবুক।’

অন্যদিকে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আনোয়ার হোসেন ফেসবুকে ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার’ নামক একটি গ্রুপে পোস্ট করে লিখেছেন, ‘রাবির জুলাই ৩৬ হলের একটা নোটিশ নিউজফিডে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এভাবে নোটিশ দেওয়া উচিত হয়নি হল প্রশাসনের। তারা অন্যভাবে বিষয়টি সমাধান করতে পারতো, এটা প্রশাসনের দায়িত্বহীনতার বর্হিঃপ্রকাশ।’

তিনি বলেন, ‘একটা প্রশ্ন রেখে গেলাম, ধরুন প্রশাসন থেকে এসব নিয়ম তুলে নেওয়া হলো; মেয়েরা যখন খুশি হলে প্রবেশ এবং বাহির হতে পারবে। দুর্ভাগ্যবশত আমাদের কোনো একটা বোনের সাথে যদি অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু একটা ঘটনা ঘটে গেল, তখন এর বিচার কার কাছে চাইব আমরা? তখন কিন্তু আমরাই হল প্রশাসনের কাছে বিচার চাইব, প্রশাসনের পদত্যাগ চাইব, বিচারের দাবিতে আন্দোলন করবো।’

হল প্রশাসনের সিদ্ধান্ত ও সিদ্ধান্তের সমর্থনকারীদের সমালোচনা করে খালেদা জিয়া হলের আবাসিক শিক্ষার্থী অশেকা জাইমা খান লিখেছেন, ‘যারা ৩৬ জুলাই হলের নোটিশ বিষয়ক প্রেক্ষাপটে বলতেছেন যে, যদি কারো কিছু হয়ে যায় তাহলে হল প্রশাসনকে অভিভাবকরা দায়ী করবে অথবা হল প্রশাসন আমাদের অভিভাবক। তাদের মুখে জুতার বাড়ি। ১৬ জুলাই, ২০২৪ সারাদেশে ব্লকেড থাকার পড়েও ৫/৬ ঘন্টার নোটিশে যে আমাদের হল ছাড়া করেছিলো মনে নাই? ওই প্রশাসন এই প্রশাসন সবাই সান্ধ্য আইনের পক্ষেই, এবং একই রসুনের তলা।’

শিক্ষার্থীদের উপর অযথা নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে ‘ডগ পুলিশ’-এর মতো আচরণ করছে প্রশাসন দাবি করে সারথি অনি নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা সবাই শিক্ষার্থী। নারী-পুরুষের বিভাজন সৃষ্টি করে একটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান তার চরমতম কাণ্ডজ্ঞানহীন আচরণ প্রকাশ করছে। যে নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে সন্ধ্যার পর ছাত্রীদের হলে ঢোকার নির্দেশ জারি করা হয়, সেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কি শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব? বিশ্ববিদ্যালয় যদি নৈতিকতা শেখানোর (আরোপের) দায়িত্ব গ্রহণ করে ফেলে তবে নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও তাদের দায়িত্বশীল হতে হবে। অথচ সেটার পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের উপর অযথা নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে ‘ডগ পুলিশ’-এর মতো আচরণ করছে প্রশাসন। আর শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতাকে খর্ব করে এই বিশ্ববিদ্যালয় মর্যাদা ও মুক্তচিন্তার পরিবেশকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে যাচ্ছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জুলাই-৩৬ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক লাভলী নাহার বলেন, তারা সবাই আমাদের সন্তানের মতো। তাদের খেয়াল রাখা আমাদের দায়িত্ব। নিরাপত্তার স্বার্থেই ছাত্রীদের ডাকা হয়েছে, এখানে অন্যকোনো কারণ নেই। তবে যারা একদিন দেরি করে এসেছে, তাদেরকেও তালিকায় রাখা হয়েছে, এটা ভুল হয়েছে। দেরী হতেই পারে, তবে সামনে রাকসু নির্বাচনকে ঘিরে যেন কোনো ধরনের বিপদ না হয়, সতর্কতা অবলম্বনের জন্যই তাদের ডাকা হয়েছে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top