সোমবার, ২২শে ডিসেম্বর ২০২৫, ৮ই পৌষ ১৪৩২


সড়ক দুর্ঘটনায় আহত-নিহতদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া ও উন্নত দেশের কর্মপন্থা


প্রকাশিত:
২২ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৫:৩৮

আপডেট:
২২ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৭:০৭

ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশে রোড ক্র্যাশে (সড়ক দুর্ঘটনা বলে পরিচিত) কত মানুষ মারা যায়, তার স্বীকৃত কোনো পরিসংখ্যান নেই। সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সড়কে মৃত্যুর তথ্য দিয়ে থাকে, যার সঙ্গে কোনো বেসরকারি সংস্থার হিসাব মেলে না।

আবার, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী যে বৈশ্বিক প্রতিবেদন করে, সেখানে বিআরটিএ’র চেয়ে অন্তত ৬ গুণ বেশি মৃত্যুর হিসাব দেখা যায়। তাই পরিসংখ্যানের এ বিভাজন এড়িয়ে লেখায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত বা নিহতদের আর্থিক ক্ষতিপূরণের বিষয়ে ফোকাস করা হয়েছে।

বাংলাদেশে ২০১৮ সালে সড়ক পরিবহন আইন পাস হয়েছে। ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই বিমানবন্দর সড়কে যাত্রী উঠানোর জন্য দুটি বাস চালকের অনিয়ন্ত্রিত গতির প্রতিযোগিতায় সড়কের কিনারে অপেক্ষমাণ রমিজউদ্দিন স্কুলের দুই কিশোরবয়সী শিক্ষার্থী (আব্দুল করিম রাজি ও দিয়া খানম মীম) তাৎক্ষণিকভাবে মারা যায় এবং আরও কয়েকজন মারাত্মক আহত হয়।

এ ঘটনা সারাদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। সড়কে অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে সর্বস্তরের মানুষ নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নামে। নির্দলীয় ওই আন্দোলনে বিএনপিসহ সংসদের বাইরের প্রায় সব রাজনৈতিক দল সমর্থন দেয়। নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)সহ অনেক সামাজিক সংগঠন এতে অংশ নেয়।

এছাড়া সড়কে অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম ও অতিরিক্ত গতির কারণে যেসব পরিবার স্বজন হারিয়েছে, যারা পঙ্গুত্ব বরণ করেছে সেসব পরিবারও এ আন্দোলনে অংশ নেয়। ফলে গত দশকে সবচেয়ে বড় অরাজনৈতিক আন্দোলন হয়ে ওঠে ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়কের আন্দোলন, যা দমাতে সরকারের পুলিশ এবং ছাত্রলীগ ও যুবলীগের হেলমেট বাহিনীর সদস্যরা আক্রমণ করে। কিন্তু এসব হামলা-মামলা বুমেরাং হয়ে যায়। ফলে সরকার বাধ্য হয়ে দ্রুত সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ পাস করে।

আইনটি দ্রুততার সঙ্গে হলেও এটি সড়ক নিরাপত্তায় পূর্ণাঙ্গ আইন নয়। তদুপরি, পরিবহন মালিক ও চালকদের চাপের কারণে তৎকালীন সরকার এই আইনটির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করেনি। গত সরকারের সঙ্গে যুক্ত প্রভাবশালী ব্যক্তিরাই যানবাহন মালিক ও চালকদের নেতৃত্ব দিয়েছিল। ফলে এ আইনের অধীন সড়ক পরিবহন বিধিমালা পাস করতে ৪ বছর সময় লাগে।

এ আইন যানবাহন ও চালক সংশ্লিষ্ট, যেগুলো বাস্তবায়নে সড়ক অনেকাংশে নিরাপদ করা সম্ভব। এছাড়া, প্রথমবারের মতো এ আইনের (অধ্যায় ৯) ও বিধিমালায় (অধ্যায় ৮) রোড ক্র্যাশে (সড়ক দুর্ঘটনা বলে অভিহিত) নিহত বা আহতদের আর্থিক সহায়তার বিধান উল্লেখ করা হয়েছে।

ধারা ৫২ (ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা তাহার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান) বলা হয়েছে, “কোনো মোটরযান হইতে উদ্ভূত দুর্ঘটনার ফলে কোনো ব্যক্তি আঘাতপ্রাপ্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত হইলে বা আঘাতপ্রাপ্ত হইয়া মৃত্যুবরণ করিলে, উক্ত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা, ক্ষেত্রমত, তাহার উত্তরাধিকারীগণের পক্ষে মনোনীত ব্যক্তি ধারা ৫৩ এর অধীন গঠিত আর্থিক সহায়তা তহবিল হইতে ট্রাস্টি বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত ক্ষতিপূরণ বা, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, চিকিৎসার খরচ প্রাপ্য হইবেন।”

এজন্য ধারা ৫৩ ও বিধি ১৪২-এ সরকার আর্থিক সহায়তা তহবিল গঠন করবে এবং এ নামে অর্থ জমা ও ব্যয়ের নিমিত্ত তফসিলি ব্যাংকে একাউন্ট করার কথা বলা হয়েছে। ধারা ৫৩, ৫৭ ও বিধি ১৪৭-এ এজন্য মোটরযান মালিক/প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে শ্রেণিভেদে বাৎসরিক বা এককালীন চাঁদা আদায়, সরকার/যানবাহন মালিক কর্তৃক প্রদত্ত অনুদান সংগ্রহ, এ আইনের অধীন জরিমানা হিসাবে আদায়কৃত অর্থ সংগ্রহ করার কথা বলা হয়েছে। ধারা ৫৪-তে এ তহবিল পরিচালনার জন্য একটি ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা হয়েছে। কমিটি সদস্য কো-অপ্ট [সহ-নির্বাচন করা, নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা বা নিজের দলে/উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা] করতে পারবে এবং সরকার চাইলে যে কাউকে এ কমিটির চেয়ারম্যান করতে পারবেন।

ধারা ৫৪-তে বলা হয়েছে, ঢাকায় এ বোর্ডের প্রধান অফিস এবং প্রয়োজনে দেশের যেকোনো স্থানে অধস্তন বা শাখা অফিস করা যাবে। ধারা ৫৬ ও বিধি ১৪৪-এ ট্রাস্টি বোর্ডের ক্ষমতা ও কার্যাবলী উল্লেখ করা হয়েছে। তন্মধ্যে সড়কে ক্ষতিগ্রস্ত/আহত ব্যক্তি বা ব্যক্তির উত্তরাধিকারকে প্রদেয় অর্থের পরিমাণ নির্ধারণ, তহবিল ও সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা, ব্যয় মঞ্জুর, বাৎসরিক হিসাব প্রকাশ সম্পর্কে বলা হয়েছে।

১৪৯ নং বিধিতে সুনির্দিষ্টভাবে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বা আহত হয়ে মৃত্যুবরণ করলে এককালীন ৫ লাখ টাকা, অঙ্গহানি বা স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সম্ভাবনা না থাকলে ৩ লাখ টাকা এবং স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সম্ভাবনা থাকলে ১ লাখ টাকার পরিমাণ বলা হয়েছে।

ধারা ৫৭ ও বিধি ১৪৫-এ বলা হয়েছে, এই ট্রাস্টি বোর্ডই মূলত সড়কে হতাহতদের বা তাদের বৈধ উত্তরাধিকারের নিকট ক্ষতিপূরণ হিসাবে আর্থিক সহায়তা প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করবে এবং ব্যয়কৃত অর্থের হিসাব ও নিরীক্ষা সম্পন্ন করবে।

১৫০ নং বিধিতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বা আহতদের পরিবারকে একমাসের মধ্যে আবেদন করার বাধ্যবাধকতা দেওয়া হয়েছে, যা খুবই অন্যায্য। কারণ, ভুক্তভোগী পরিবার যে ট্রমার মধ্যে পড়ে, অঙ্গহানি হলে তার দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা নিশ্চিত করতে যে হিমশিম খেতে হয় তাতে করে অধিকাংশ পরিবারের পক্ষেই এক মাসের মধ্যে আবেদন করার সুযোগ থাকে না বা আবেদন করতে পারে না।

যেমন ২০২৩ সালের ৭ নভেম্বর বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি ও গণসংহতি নেতা আরিফুল ইসলাম এবং তার বন্ধু ও সহকর্মী সৌভিক করিম একটি দ্রুতগতির ট্রাকের চাপায় পিষ্ট হয়ে ঢাকার বাংলা মোটরের কাছে ইস্কাটন রোডে মারা যায়। আরিফের সন্তান নক্ষত্রের বয়স তখন মাত্র ৫ এবং সৌভিক করিমের সন্তান অবন্তিকার বয়স ১২ বছর। তাদের প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত সরকারের কি দায়িত্ব নেওয়া উচিত নয়?

একজন উপার্জনক্ষম ব্যক্তি সড়ক দুর্ঘটনার কারণে পঙ্গুত্বের শিকার হলে তার কর্মক্ষমতা নষ্ট হতে পারে। পাশাপাশি তাকে দেখভাল করার জন্য পরিবারের সদস্যদেরও উপার্জনমুখী কাজ থেকে বিরত থাকতে হয়। তাই অঙ্গহানির জন্য মাত্র তিন লাখ টাকাও কোনোভাবেই যথেষ্ট নয়। এ টাকা দিয়ে অঙ্গহানির দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসাও সম্ভব হবে না।

প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে কালের কণ্ঠ পত্রিকার সিনিয়র সাংবাদিক জাতীয় প্রেসক্লাবের বিপরীত পাশে তোপখানা সড়কে বাসের চাপায় দুই পা হারান। দেশে ও থাইল্যান্ডে দীর্ঘদিন তার চিকিৎসায় ৩০ লাখ টাকার বেশি ব্যয় হয়। তাকে সরকার, বসুন্ধরা গ্রুপের মালিক ও শুভানুধ্যায়ীরা আর্থিক সহায়তা করায় তিনি তার যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে পারেন। ফলে তিনি আবার কাজে ফিরতে পেরেছেন।

তাছাড়া দেশে তখন ক্ষতিপূরণ প্রদান বা আর্থিক সহায়তা প্রদানের নিয়ম ছিল না। কিন্তু ঘটনাটি যেহেতু সারাদেশে ব্যাপক আলোচিত হয়েছিল, সরকার তাকে সহায়তা করেছিল বা করতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু এমন সুবিধা তো সবাই পান না।

তবুও সরকার আর্থিক সহায়তা প্রদান শুরু করেছে, আশা করি, আগামীতে তহবিল বড় হবে এবং আর্থিক সহায়তার পরিমাণ বাড়বে।

ধারা ৫৯ (আর্থিক সহায়তার আবেদন) এ বলা হয়েছে, ‘আর্থিক সহায়তা তহবিল হইতে সহায়তা প্রাপ্তির লক্ষ্যে আঘাতপ্রাপ্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা, ক্ষেত্রমত, মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারী বা বৈধ প্রতিনিধি নির্ধারিত পদ্ধতিতে, ফরমে ও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্তসহ ক্ষতিপূরণ দাবি করিয়া ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানের নিকট আবেদন করার কথা বলা হয়েছে।

এ আবেদন পাওয়ার পর ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা করবেন যা পরবর্তী সভায় অনুমোদন গ্রহণ করবেন। প্রয়োজনে অনুসন্ধানের মাধ্যমে আবেদনের যথার্থতা নিশ্চিত করবেন। এছাড়া ধারা ৬০ ও ১৫১ নং বিধিতে বীমা সংক্রান্ত প্রচলিত আইন, বিধিমালা, প্রবিধানমালা ও নীতিমালা অনুসরণ করে যাত্রী ও মোটরযানের জীবন ও সম্পদের বীমা করতে পারবেন।

বীমা খুবই জরুরি একটি বিষয়। যানবাহন ও যাত্রীদের বীমা করা হলে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার একটা নিশ্চয়তা থাকে। সমস্যা হলো, বাংলাদেশে বীমা জনপ্রিয় নয়। এছাড়া বীমা পাওয়ার ক্ষেত্রে নানান জটিলতা রয়েছে। এক্ষেত্রে বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বীমা করা ও বীমাকৃত অর্থ প্রদানের জটিলতা দূর করা এবং এক্ষেত্রে বীমা প্রদানকারী ও গ্রহীতা—পরস্পরের বিশ্বাস স্থাপন করা সম্ভব হলে এর সুফল ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ব্যবহারকারী ব্যক্তি বা যানবাহনের মালিক পাবেন তেমনি অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ কাজেও বীমার প্রচলন জনপ্রিয় হয়ে উঠবে। 

বিশ্বব্যাপী বীমা খুব পরিচিত হলেও সড়ক নিরাপত্তায় এর ব্যবহার উন্নয়নশীল দেশগুলোয় খুবই কম। এছাড়া সড়ক নিরাপত্তা বিষয়টিকে অনেক দেশ গুরুত্ব দিলেও অধিকাংশ দেশেই আর্থিক তহবিল অপ্রতুল। গবেষণায় দেখা যায়, বিশ্বের ১১৭টি দেশে সড়ক নিরাপত্তায় কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু মাত্র ১৬টি দেশে এ কৌশল বাস্তবায়নে অর্থ বরাদ্দ রয়েছে। বাংলাদেশে সড়ক নিরাপত্তায় পূর্ণাঙ্গ কৌশল ও অর্থ বরাদ্দ নেই।

পৃথিবীর কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করা হয়। এসব দেশে যানবাহন ও ব্যক্তি বীমার আওতায় থাকে এবং বীমার অর্থ থেকে চিকিৎসা বা পুনর্বাসন সহায়তা প্রদান করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশের মতো দেশগুলোয় বীমা ব্যবস্থা শক্তিশালী নয়। ভারত ৫ মে, ২০২৫ তারিখে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৫০ হাজার রূপি আর্থিক সহায়তা প্রদান করবে মর্মে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এতে কোনো নগদ অর্থ দেওয়া হবে না।

এছাড়া ভারতে কয়েকটি রাজ্য সরকার পৃথকভাবে চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করে। পাকিস্তানে জাতীয় কোনো নীতি না থাকলেও কয়েকটি রাজ্যে চিকিৎসা সহায়তা প্রদানের তথ্য পাওয়া যায়। থাইল্যান্ডে ২০২১ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের সহায়তার জন্য রোড এক্সিডেন্ট ভিকটিম প্রোটেকশন কোম্পানি লিমিটেড গঠন করা হয়েছে এবং সংস্থাটি আসিয়ান ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় সরকারি বীমা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে সড়কে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা নিশ্চিতে কাজ করে।

ভুটান এ অঞ্চলে একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত। তারা ২০২৩ সালে সিভিল লায়াবিলিটি অ্যাক্ট পাস করে, যেখানে মূলত যেকোনো কারণে মানুষের আহত হওয়ার পর পুনর্বাসনে আর্থিক সহায়তার বিধান রয়েছে। এ আইনের অধীন সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদেরও আর্থিক সহায়তা প্রদানের বিধান রয়েছে।

সিঙ্গাপুরে এমন আর্থিক সহায়তার বিধান রয়েছে এবং সহায়তার পরিমাণ আদালত নির্ধারণ করতে পারে।

যুক্তরাজ্যে বিচার মন্ত্রণালয় (মিনিস্ট্রি অব জাস্টিস) এর অধীন সড়কে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সহায়তার আবেদন করা যায় এবং এ আবেদনে ইনজুরির ধরন অনুযায়ী আর্থিক সহায়তার আবেদন করা যায়। কেউ কর্মক্ষমতা হারালে সেজন্য সহায়তার আবেদন করা যায়। কর্তৃপক্ষ যাচাই সাপেক্ষে পরিমাণ নির্ধারণ করে সহায়তা প্রদানের নির্দেশ করে। যুক্তরাজ্যে অনেক পেশাদার প্রতিষ্ঠান রয়েছে তারা ভিকটিম-কে এ বিষয়ে সহায়তা প্রদান করে।

যুক্তরাষ্ট্রেও অনুরূপ ব্যবস্থা রয়েছে, তবে অনেক অঙ্গরাজ্যে পৃথক সহায়তা প্রদান করা হয়। এছাড়া যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশগুলোয় বীমা থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের মাধ্যমেও ভিকটিমকে সহায়তা প্রদান করা হয়।

সড়ক পরিবহন আইনের আলোকে সরকার যে আর্থিক সহায়তা প্রদানের প্রচলন শুরু করেছে, তা অপ্রতুল হলেও প্রয়োজনীয়। কিন্তু, এ বিষয়টি অধিকাংশ মানুষই জানে না। সেজন্য বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি প্রচারণার উদ্যোগ নিয়েছে। যত বেশি মানুষ জানবে তত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ এ সুবিধা গ্রহণের সুযোগ পাবে।

মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ থেকে উত্তরণের পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু এখনো দেশের অধিকাংশ মানুষ মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত, দরিদ্র ও অতিদরিদ্র। তাই সড়কে পরিবারের কর্মক্ষম কেউ নিহত হলে সে পরিবারকে সহায়তা প্রদান করা জরুরি। একইসঙ্গে, কেউ মারাত্মকভাবে আহত হলে, পঙ্গুত্বের শিকার হলে তার পরিপূর্ণ চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে সহায়তা জরুরি। ভালো মানের চিকিৎসা ও বীমা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা প্রয়োজন। জীবন বীমা, দুর্ঘটনা বীমা, যানবাহনের বীমা করা গেলে বীমা থেকেও ক্ষতিগ্রস্তরা অর্থ সহায়তা পেতে পারেন।

এরচেয়ে বেশি প্রয়োজন সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। যেন, যেকোনো মানুষ নিরাপদে যাতায়াত করতে পারে। যাতে সড়কে অব্যবস্থাপনা, অতিরিক্ত গতি, ট্রাফিক আইন ভঙ্গ, অনিরাপদ যান ও সড়ক ডিজাইন, বা অদক্ষ চালকের কারণে কাউকে যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হতে হয়।

এজন্য প্রয়োজন একটি পূর্ণাঙ্গ সড়ক নিরাপত্তা আইন। আশা করি, অন্তর্বর্তী সরকার ও আগামীতে নির্বাচিত সরকার সেদিকে মনোনিবেশ করবে।

আমিনুল ইসলাম সুজন : ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও নীতি বিশ্লেষক, কোষাধ্যক্ষ, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top