বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ঢাকা কলেজের উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ
প্রকাশিত:
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৪:০৬
আপডেট:
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৫:৪৫

রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজ নিয়ে প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত কাঠামো নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন ঢাকা কলেজের উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা। নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়ায় নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তারা।
তাদের অভিযোগ, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ এই উদ্যোগের কোথাও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের মতামত নেওয়া হয়নি।
সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) ঢাকা কলেজের অডিটোরিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে এসব বিষয় তুলে ধরেন তারা৷
লিখিত বক্তব্যে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ১৮৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা কলেজ শুধু বাংলাদেশ নয়, উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই কলেজ দেশের শিক্ষা বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বর্তমানে এখানে উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের কার্যক্রম চালু রয়েছে। দীর্ঘ ১৮৪ বছরের ঐতিহ্য গড়ে তুলতে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের অবদান অনস্বীকার্য। ২০১৭ সালে ঢাকা কলেজসহ রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। এর পর থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের নানা সংকট বাড়তে থাকে। সেই প্রেক্ষাপটে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে সরকার সম্প্রতি সাত কলেজকে একীভূত করে ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। তবে এই প্রক্রিয়ায় উচ্চমাধ্যমিক বিভাগের ভবিষ্যৎ নিয়ে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
তারা বলেন, গত ২১ সেপ্টেম্বর ঢাকা কলেজের উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের এক প্রতিনিধিদল ইউজিসির চেয়ারম্যান ও সদস্য অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে তারা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের খসড়া প্রকাশের দাবি জানান। তবে ইউজিসি কর্তৃপক্ষ আইনি সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরে সেই দাবি নাকচ করে দেন।
এসময় শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে পাঁচটি প্রধান উদ্বেগের বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে-
১. ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসে ‘স্কুল অব সায়েন্স’ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে মূল ক্যাম্পাসের নামফলক থেকে ঐতিহ্যবাহী ঢাকা কলেজ নাম মুছে ফেলার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
২. টাইম শেয়ারিং পদ্ধতিতে সকাল ৮টা থেকে দুপুর পর্যন্ত উচ্চমাধ্যমিক ও পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালানোর পরিকল্পনা অবাস্তব বলে দাবি করেছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের আশঙ্কা, এতে প্রশাসনিক জটিলতা তৈরি হবে এবং ভবিষ্যতে উচ্চমাধ্যমিক বিভাগ বিলুপ্তির দাবিও উঠতে পারে।
৩. একই ক্যাম্পাসে দুই কাঠামো চালু হলে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের রাজনৈতিক কার্যক্রম উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ ব্যাহত করতে পারে বলে উদ্বেগ রয়েছে।
৪. কলেজের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মালিকানা প্রশ্নে অস্পষ্টতা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃত্ব এলে উচ্চমাধ্যমিক বিভাগ প্রান্তিক হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা শিক্ষার্থীদের।
৫. ক্যাম্পাসে নারী শিক্ষার্থী ভর্তির প্রসঙ্গও শিক্ষার্থীরা তুলেছেন। তারা নারী শিক্ষার্থীদের প্রতি সম্মান জানালেও, ঐতিহ্যের প্রশ্নে এটিকেও উদ্বেগের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, ইউজিসির আশ্বাসের কোনো আইনি ভিত্তি নেই। পুরো প্রক্রিয়াতেই উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব ছিল না। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশে তাদের স্বার্থবিরোধী ধারা থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা৷ একইসঙ্গে বিদ্যমান একাডেমিক কাঠামোর কোনো পরিবর্তন বা সংকোচন যা উচ্চমাধ্যমিকের ক্ষতি করে, তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না বলেও জানান তারা৷
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: