শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৬ই বৈশাখ ১৪৩১


শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের বদলি

ঢেলে সাজানো হবে প্রাথমিক শিক্ষার মাঠ প্রশাসন


প্রকাশিত:
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০০:৪১

আপডেট:
২০ এপ্রিল ২০২৪ ০৩:২৩

 ছবি : সংগৃহীত

নিজ জেলায় দীর্ঘদিন ধরে অবস্থান করে স্বজনপ্রীতি, শিক্ষা বাণিজ্য ও নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছে শিক্ষা কর্মককর্তা এবং শিক্ষকরা। আর সেজন্য মাঠ পর্যায়ে ঢেলে সাজানো হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা।কাজে ফাঁকি দেয়া, কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিতি এবং প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘ সময় একই স্থানে অবস্থান করাসহ নানা অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা স্তর।

এসব অবহেলায় প্রাথমিকে বাড়ছে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা। দিনের পর দিন এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রাথমিক শিক্ষার মাঠ পর্যায়ে ঢেলে সাজানো এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এতে প্রাথমিক শিক্ষার মান বৃদ্ধির পাশাপাশি ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমবে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আমিনুল ইসলাম খান জানান, ‘মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অনেকে স্বজনপ্রীতি, বাণিজ্য ও নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছেন। নিজ জেলায় কাজ করার কারণে তারা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছেন। সরকারী প্রাথমিক শিক্ষার মান বাড়াতেই প্রাথমিকের মাঠ প্রশাসন ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।’

প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের এই সিদ্ধান্তে অবশ্য আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন অনেকে। তারা জানিয়েছেন, একযোগে বদলির সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়তে পারে। এতে কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের মনে হতাশা বেড়েছে। তারা উচ্চ আদালতে যাওয়ার হুমকিও দিচ্ছেন।

সারাদেশে ৬৫ হাজার প্রাথমিকে শিক্ষক আছেন সাড়ে তিন লাখ। এসব শিক্ষকদের পাঠদান তদারকি করতে থানা পর্যায়ে আছেন ২৬০১ জন সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। তাদের দেখভাল করেন ৫০১ জন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। এর বাইরে ৬৪ জন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সার্বিক কার্যক্রম মূল্যায়ন ও তদারক করে থাকেন। তিন স্তরে এভাবেই চলছে প্রাথমিকের মাঠ প্রশাসন। মাঠ পর্যায়ে উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাদের নিয়মিত বদলি হওয়ার কথা। অদৃশ্য কারণে তাদের বদলি দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। একই জায়গায় দীর্ঘদিন থাকার কারণে তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না।

একইভাবে একজন শিক্ষক দীর্ঘদিন এক স্থানে থাকলে চাকরি ছাড়াও তারা নানা কাজে জড়িয়ে পড়েন। স্বাভাবিকভাবেই ব্যাহত হয় শিক্ষা দান। এই অবস্থার অবসান এবং প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার মানোন্নয়নে মাঠ পর্যায়ের তিন স্তরের প্রশাসনে ব্যাপক রদবদল আসছে। ইতোমধ্যে ৩২ জন প্রাথমিক জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বদলি হয়েছেন। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলি প্রক্রিয়াধীন। আগামী অক্টোবরে ২৬০১ জন উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাকে নিজ জেলার বাইরে পাঠানো হবে। অন্যদিকে গত ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়েছে সহকারী শিক্ষক বদলির আবেদন। সারাদেশের ৬৫ হাজার সরকারী প্রাথমিকের সাড়ে তিন লাখ শিক্ষক এ সময় আবেদন করতে পারবেন। পর্যায়ক্রমে সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদেরও অনলাইনের মাধ্যমে বদলি করা হবে।

বদলি হবেন ২৬০১ জন এটিইও ॥ ১৯৮৫ সালে সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার (এটিইও) পদ ছিল ১৮৩৩টি। সে সময় ৫০ ভাগ সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা পদোন্নতির মাধ্যমে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হতেন।

অনলাইনে শিক্ষক বদলির আবেদন শুরু ॥ সারাদেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি বন্ধ দুই বছর। দীর্ঘ আড়াই বছর পর শুরু হয়েছে বদলির আবেদন। এর ফলে তদবির ও ঘুষ বাণিজ্য বন্ধ হবে বলে মনে করছেন প্রাথমিক শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। তারা জানান, শিক্ষকরা অনলাইনেই আবেদন করবেন ও অনলাইনেই বদলি হবেন। নতুন নিয়ম অনুযায়ী প্রাথমিকের শিক্ষকরা জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত আন্তঃউপজেলা থেকে আন্তঃজেলা, আন্তঃবিভাগ পর্যায়ে আবেদনের প্রেক্ষিতে বদলি হতে পারবেন। সহকারী শিক্ষক পদে চাকরির মেয়াদ ন্যূনতম ২ বছর হলে এবং পদ শূন্য থাকলে আন্তঃউপজেলা, জেলা ও আন্তঃবিভাগ বদলি হতে পারবেন শিক্ষকরা। তবে দুই বছরের মধ্যে একই উপজেলা বা থানায় পদ শূন্য হলে তবেই বদলি করা হবে।

এছাড়াও বদলির পর তিন বছর না হওয়া পর্যন্ত কোন শিক্ষক পুনঃবদলির জন্য বিবেচিত হবেন না। যেসব বিদ্যালয়ে ৪ জন বা তার কম শিক্ষক আছেন, শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত ১:৪০-এর বেশি রযেছে, সেসব বিদ্যালয় থেকে শিক্ষক বদলি করা হবে না। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, ১৫ সেপ্টেম্বর অনেক শিক্ষক অনলাইনে বদলির জন্য আবেদন করেছেন। কত আবেদন জমা পড়েছে তা সংশ্লিষ্টরা জানাতে পারেনি।

যেভাবে আবেদন করবেন শিক্ষকরা। বদলির জন্য শিক্ষকদের একটি লিঙ্ক দেয়া হবে। এই লিঙ্কে ঢুকে শিক্ষকরা তাদের আইডি নম্বর দিয়ে লগ ইন করবেন। এরপর তার ক্রাইটেরিয়া অনুযায়ী স্কুলে আবেদন করবেন। আবেদন সঠিক না হলে সফটওয়্যার আরও কিছু বিদ্যালয় তাকে সাজেস্ট করবে। তালিকা থেকে স্কুল পছন্দ করার পর বদলি হওয়া যাবে। বদলি আাদেশ শিক্ষকরা নিজেই ডাউনলোড করতে পারবেন। মাঠ পর্যায়ের কোন কর্মকর্তা এই আদেশ তিন দিনের মধ্যে বাস্তবায়ন না করলে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, এটিইও বা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক মুহিবুর রহমান জানান, অনলাইনে ১৫ সেপ্টেম্বর বদলি আবেদন শুরু হয়েছে। চলবে পুরো মাস। আবেদন শেষে অক্টোবরের শুরুতেই শিক্ষক বদলি শুরু হবে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top