শনিবার, ১৪ই জুন ২০২৫, ৩১শে জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২


ইরান ও ইসরাইল: কার শক্তি কতটুকু


প্রকাশিত:
১৩ জুন ২০২৫ ২১:৪২

আপডেট:
১৪ জুন ২০২৫ ১৯:০৩

ছবি সংগৃহীত

ইসরাইল শুক্রবার ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে। এরপর দেশটির তাবরিজসহ আরও বেশ কয়েকটি শহরে হামলা করেছে। এতে ৭০ জনেরও বেশি নিহতের খবর পাওয়া গেছে এ পর্যন্ত। ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, শুক্রবার ভোরে ২০০টিরও বেশি যুদ্ধবিমান ইরানের শতাধিক গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ করেছে। এ হামলায় ইরানের তিন শীর্ষ সামরিক কমান্ডার নিহত হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।

ইসরাইলি সামরিক বাহিনী এক্স হ্যান্ডলে জানায়, নিহতরা হলেন ইরানি সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি, ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি) প্রধান হোসেইন সালামি, এবং খাতাম আল-আনবিয়া সেন্ট্রাল হেডকোয়ার্টারের কমান্ডার মেজর জেনারেল গোলাম আলী রাশিদ।

২০২৪ সালে ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার একাধিক ঘটনা ঘটে। গত ২ অক্টোবর ইরান গাজা ও লেবাননের বেসামরিক নিহতদের প্রতিশোধ হিসেবে ইসরাইলের বড় শহরে প্রায় ১৮০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। এর জবাবে ইসরাইল ২৫ অক্টোবর ইরানের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনায় হামলা চালায়।

এ নতুন হামলা পরিস্থিতি ব্যাপকভাবে উত্তেজিত করেছে এবং ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ইসরাইলের বিরুদ্ধে ‘কঠোর জবাব’ দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন।

দীর্ঘদিন ধরে বিরোধপূর্ণ এই দুই দেশের সামরিক শক্তি ও সক্ষমতার তুলনা করলে দেখা যায়:

সেনাসংখ্যা

ইরানের সক্রিয় সেনাসংখ্যা প্রায় ৬১ হাজার, যার মধ্যে সেনাবাহিনী, আইআরজিসি, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী ও বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী অন্তর্ভুক্ত। পাশাপাশি ৩ লাখ ৫০ হাজার রিজার্ভ সেনা রয়েছে। দেশটিতে ১৮ বছর বয়সোর্ধ্ব পুরুষদের সামরিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক।

ইসরাইলের সক্রিয় সেনাসংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার, রিজার্ভ বাহিনী ৪ লাখ ৬৫ হাজার। ইসরাইলেও ১৮ বছর ও এর বেশি বয়সের পুরুষ ও নারীদের সামরিক সেবা বাধ্যতামূলক।

সামরিক ব্যয়

২০২৩ সালে ইরান সামরিক খাতে ১০.৩ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে, যেখানে ইসরাইলের ব্যয় ২৭.৫ বিলিয়ন ডলার, যা গাজা যুদ্ধে তাদের অংশগ্রহণের কারণে ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে।

স্থলবাহিনী

ইরানের কাছে প্রায় ১০,৫১৩ যুদ্ধ ট্যাংক ও হাজারের বেশি সাঁজোয়া যান রয়েছে। ইসরাইলের যুদ্ধ ট্যাংকের সংখ্যা প্রায় ৪০০, তবে তাদের আধুনিক সাঁজোয়া যান ও আর্টিলারি রয়েছে

বিমানবাহিনী

ইরানের ৩১২টি যুদ্ধবিমান রয়েছে, আর আইআরজিসির ২৩টি। অপরদিকে ইসরাইলের কাছে ৩৪৫টি যুদ্ধবিমান ও ৪৩টি অ্যাটাক হেলিকপ্টার আছে।

নৌবাহিনী

ইরানের নৌবাহিনীতে ১৭টি সাবমেরিন, ৬৮টি টহল ও যুদ্ধজাহাজ রয়েছে। ইসরাইলের নৌবাহিনীতে ৫টি সাবমেরিন ও ৪৯টি যুদ্ধজাহাজ রয়েছে।

বিমান প্রতিরক্ষা

ইসরাইলের ‘আয়রন ডোম’ সিস্টেম ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের বেশিরভাগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম বলে মনে করা হয়। এছাড়া ‘ডেভিড’স স্লিং’ ও ‘অ্যারো সিস্টেম’ দিয়ে মাঝারি ও দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকানো হয়। ইরানের ‘আজারাখশ’ নামের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও বিভিন্ন রাশিয়ান, চীনা ও মার্কিন প্রযুক্তির ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে।

ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র

ইরানের কাছে বিভিন্ন পাল্লার অন্তত ১২ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, যার মধ্যে কয়েকটির পাল্লা ২ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত। অপরদিকে ইসরাইলের কাছে চার ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র, যার মধ্যে ‘জেরিকো-৩’ ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ৪,৮০০ থেকে ৬,৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত।

পারমাণবিক ক্ষমতা

ইসরাইলের প্রায় ৯০টি পারমাণবিক বোমা রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। অপরদিকে ইরানের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র নেই, তবে একটি উন্নত পারমাণবিক কর্মসূচি রয়েছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন, যদিও সম্প্রতি তারা তাদের পারমাণবিক নীতি পুনর্বিবেচনার হুমকি দিয়েছে।

এ সামরিক শক্তি ও সাম্প্রতিক হামলার প্রেক্ষাপটে ইরান-ইসরাইলের মধ্যে সরাসরি সংঘাতের ঝুঁকি বেড়েই চলেছে।

সূত্র: আল-জাজিরা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top