ইরানের পারমাণবিক ধ্বংসের ক্ষমতা নেই ইসরায়েলের, যুক্তরাষ্ট্রের কতটুকু?
প্রকাশিত:
১৭ জুন ২০২৫ ১৪:৪১
আপডেট:
১৭ জুন ২০২৫ ২০:৪৮

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ‘ফোরদো’ এত গভীরে নির্মিত যে, সেটি ধ্বংস করার ক্ষমতা ইসরায়েলের নেই। সামরিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই স্থাপনা ধ্বংস করা সম্ভব কেবলমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ ধরনের বোমা এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে।
ফোরদো পারমাণবিক প্ল্যান্টটি মাটির নিচে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ মিটার গভীরে অবস্থিত। অর্থাৎ, এটি প্রায় ৩০ তলা উচ্চতার ভবনের নিচে তৈরি। এত গভীরে তৈরি হওয়ায় এটিকে ধ্বংস করার জন্য একটি বিশেষ ধরনের ‘বাঙ্কার বাস্টার’ বোমার প্রয়োজন হয়। এমন শক্তিশালী বোমা এবং সেটি বহন করার জন্য বিশেষ ধরনের বোমারু বিমান আছে কেবলমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের।
তবে কিছু সামরিক বিশ্লেষক আশঙ্কা করছেন, এমনকি এই অত্যাধুনিক বোমাও সম্পূর্ণরূপে কাজ নাও করতে পারে।
ইসরায়েল গত পাঁচ দিন ধরে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালাচ্ছে এবং ইরান পাল্টা প্রতিহত করছে। দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি উত্তেজনা চলছে।
ওয়াশিংটন ডিসির স্টিমসন সেন্টার থিঙ্ক ট্যাঙ্কের ফেলো বারবারা স্লাভিন আল-জাজিরাকে বলেন, মার্কিন সহায়তা ছাড়া ইসরায়েল ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করতে পারবে না। তিনি বলেন, ইসরায়েলের লক্ষ্য হচ্ছে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি ধ্বংস করা। এ কাজে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ছাড়া সফল হওয়া অসম্ভব।
যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ইয়েচিয়েল লেইটার বলেছেন, এই ধরণের গভীরতায় নির্মিত পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করার জন্য শুধুমাত্র মার্কিন বিমান বাহিনীর কাছে এমন অস্ত্র আছে।
তিনি ‘জিবিইউ-৫৭/বি’ নামক একটি সুপার বোমার কথা উল্লেখ করেন, যা ‘বাঙ্কার বাস্টার’ নামে পরিচিত। এই বোমার ওজন প্রায় ৩০ হাজার পাউন্ড বা ১৩,৬০০ কেজির মতো, এবং এটি ফেলার জন্য বিশেষ বি-২ স্টিলথ বোমারু বিমান লাগে।
সিএনএনের সামরিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বোমাটি অত্যন্ত শক্তিশালী ইস্পাত দিয়ে তৈরি, যা মাটির গভীরে প্রবেশ করে শক্তিশালী বাঙ্কার ও টানেল ভেঙে দিতে সক্ষম।
রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের মতে, জিবিইউ-৫৭/বি বোমাটি মাটির নিচে সর্বোচ্চ ৬১ মিটার (প্রায় ২০ তলা ভবনের সমান) গভীরে আঘাত করতে পারে। কিন্তু ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনা প্রায় ৮০ থেকে ৯০ মিটার গভীরে হওয়ায়, এটি এই বোমার নাগালের বাইরে রয়েছে।
সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফোরদো ধ্বংস করতে গেলে একই স্থানে একাধিক বোমা ফেলতে হবে এবং বারবার হামলা চালাতে হবে।
সিএনএনের সামরিক বিশ্লেষক ও সাবেক মার্কিন বিমান বাহিনীর কর্নেল সেড্রিক লেইটন বলেন, আমি একই জায়গায় বারবার আঘাত করতে নির্ভর করব ফোরদো ধ্বংস করার জন্য।
রয়্যাল অস্ট্রেলিয়ান বিমান বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা পিটার লেটন বলেন, বারবার আঘাত করলেও সফলতার গ্যারান্টি নেই এবং ধ্বংসের নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া কঠিন।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র কখনোই জিবিইউ-৫৭ বোমা ইসরায়েলকে দেয়নি। জেনারেল ম্যাকেঞ্জি জানিয়েছেন, এমনকি যদি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বি-২ স্টিলথ বিমানে এই বোমা ফেলার অনুমতি দেন, তবুও প্রযুক্তিগত ও গোপনীয় চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করাই কঠিন হবে।
জেনারেল ভোটেল উল্লেখ করেছেন, আমেরিকান বাঙ্কার বাস্টার ব্যবহার আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বড় ধাক্কা হবে। প্রথমত, এ ধরনের হামলায় পারমাণবিক দূষণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যা সাধারণ মানুষের জন্য বিপদজনক। দ্বিতীয়ত, এতে আন্তর্জাতিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে ইসরায়েলের সঙ্গে মিলে ইরানের সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপকারী হিসেবে দেখা হবে।
২০২৩ সালের মার্চে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানিয়েছে, ফোরদোতে ইউরেনিয়ামের বিশুদ্ধতা ৮৩.৭ শতাংশ, যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ৯০ শতাংশের খুব কাছাকাছি।
ইরান ইরাকে পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে, এবার তাদের পারমাণবিক কার্যক্রম পাহাড়ের নিচে অনেক গভীরে স্থাপন করেছে, যাতে ধ্বংস করা কঠিন হয়।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: