রবিবার, ২০শে জুলাই ২০২৫, ৫ই শ্রাবণ ১৪৩২


২৫ বছরে আরও ৪ কোটি ১০ লাখ মানুষ দরিদ্র হবে: বিশ্বব্যাংক


প্রকাশিত:
২০ জুলাই ২০২৫ ১২:২১

আপডেট:
২০ জুলাই ২০২৫ ১৫:৫৩

ছবি সংগৃহীত

জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত আগামী কয়েক দশকে বৈশ্বিক দারিদ্র্য পরিস্থিতিকে ভয়াবহ রূপ দিতে পারে। বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে অতিরিক্ত ৪ কোটি ১০ লাখ মানুষ দরিদ্র হয়ে পড়তে পারে, যারা মূলত ‘জলবায়ু-প্ররোচিত’ আয়ের ক্ষতির কারণে দারিদ্র্যের নতুন শিকার হবে।

‘দ্য ফিউচার অব পোভার্টি: প্রজেক্টিং দ্য ইমপ্যাক্ট অব ক্লাইমেট চেঞ্জ অন গ্লোবাল পোভার্টি থ্রু ২০৫০’ শীর্ষক এই বিশ্লেষণভিত্তিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যদি বৈশ্বিক উষ্ণতা বর্তমান গতিতে বৃদ্ধি পেতে থাকে, তবে বিশ্বের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে।

পাকিস্তানের প্রভাবশালী গণমাধ্যম দ্য ডনের প্রতিবেদন অনুসারে, বিশ্বব্যাংকের হিসাব বলছে—শুধু দক্ষিণ এশিয়াতেই ২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় ৪ কোটি ৮৮ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে পড়ে যেতে পারে। আর ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াতে পারে ১৪ কোটি ৮৮ লাখে।

বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, সাহারা-উপসাহারীয় আফ্রিকা, দক্ষিণ এশিয়া, লাতিন আমেরিকা এবং ক্যারিবীয় অঞ্চল হবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। এসব অঞ্চলের দুর্বল অর্থনৈতিক কাঠামো, সীমিত সামাজিক সুরক্ষা এবং বারবার চরম আবহাওয়ার ধাক্কায় পরিস্থিতি হবে ভয়াবহ। স্থানীয় সরকার ও নাগরিকদের পক্ষে এই অভিঘাত সামলানো হয়ে উঠবে চরম দুরূহ।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ধনী দেশগুলোকে অবশ্যই জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণের বড় অংশের জন্য দায়ী এই দেশগুলোকে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আর্থিক সহায়তা, প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে অভিযোজনে সাহায্য করতে হবে।

বিশ্বব্যাংক দারিদ্র্য হ্রাসের জন্য আয়বৈষম্য কমানোর ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। তারা জানিয়েছে, সামান্য আয়ের ব্যবধান থাকলেও তা চরম দারিদ্র্য বৃদ্ধির একটি বড় উৎস হয়ে উঠতে পারে। তাই, নীতিনির্ধারণে এই বিষয়টি অগ্রাধিকার পেতে হবে।

অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, এবং সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের উন্নয়নের ওপরও জোর দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে। এতে দরিদ্র জনগোষ্ঠী স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আর্থিক সেবা ও কৃষিনির্ভর জীবিকার ক্ষেত্রে অধিকতর সুযোগ পেলে জলবায়ুর অভিঘাত মোকাবিলায় তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

বিশ্লেষণে আরও বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি দারিদ্র্যকে আরও গভীর করতে পারে। বিশেষ করে যেসব উন্নয়নশীল দেশে গৃহস্থালি ব্যয়ের বড় অংশ খাদ্যেই ব্যয় হয়, সেখানে এই প্রভাব আরও ভয়াবহ হতে পারে। প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়েছে, যদি এখনই কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়া হয়, তাহলে ২১০০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক উৎপাদন ২৩ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে।

সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো—প্রায় সব অনুমানিত পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক আয়ের ক্ষতি ২০ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে। যদিও উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রভাবে ধনী ও দরিদ্র দেশগুলো প্রায় সমানভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়, তবুও আর্থিক ক্ষতির প্রকৃত চাপ সবচেয়ে বেশি পড়ে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর ওপর, যারা এরই মধ্যে অধিক উষ্ণ আবহাওয়ার মধ্যে বসবাস করছে।

বিশ্বব্যাংক সুস্পষ্টভাবে সতর্ক করেছে—জলবায়ু পরিবর্তন যদি এখনই নিয়ন্ত্রণে না আনা যায়, তবে তা আগামী কয়েক দশকে বৈশ্বিক দারিদ্র্য হ্রাসের পথে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

ডিএম /সীমা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top